কী ম্যাচ কীভাবে হারল ভারত!
প্লট ১: লক্ষ্য ৩৪৯। প্রায় অসম্ভব লক্ষ্য।
প্লট ২: নাটকীয় পরিবর্তন। এই লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ৩৭.২ ওভারে ভারতের রান ১ উইকেটে ২৭৭! দরকার ৭৬ বলে ৭২, হাতে নয়-নয়টি উইকেট। ক্রিজে দুই সেঞ্চুরিয়ান বিরাট কোহলি ও শিখর ধাওয়ান।
এতটুকু পর্যন্ত যদি মনে হয়ে থাকে, ভারত হেসেখেলেই জিততে যাচ্ছে, তাহলে আপনাকে দোষ দেওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। কারণ গল্পের প্লট নম্বর থ্রি যে তখনো বাকি!
৩৭.৩ থেকে ৩৯.১—১১ বলে আবারও প্লট পরিবর্তন। শুধু পরিবর্তন! পুরো ভোজবাজির মতো পালটে গেল ম্যাচের গল্প। ১১ বলের মধ্যে দুই সেঞ্চুরিয়ানের সঙ্গে আউট হয়ে গেলেন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিও। ম্যাচটা হয়তো সেখানেই ভারতের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
এরপরের গল্পটুকুতে শুধু দেখার ছিল, ভারত নতুন ক্লাইম্যাক্সের জন্ম দিয়ে নতুন রং এনে দিতে পারবেন কি না? পারল না ভারত। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা হেরে গেল ২৫ রানে। কী ম্যাচটা কীভাবে হারল ভারত!
অস্ট্রেলিয়ার প্রায় অখ্যাত বোলাররাই ভারতকে শেষ দিকে আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে দিলেন না। বিশেষত কেন রিচার্ডসন। হঠাৎ করেই যেন গ্লেন ম্যাকগ্রা-ব্রেট লি হয়ে গেলেন এই ২৪ বছর বয়সী বোলার। চার ওভারের দ্বিতীয় স্পেলে মাত্র ১৬ রানে তুলে নিয়েছেন কোহলিসহ ভারতের চার উইকেট। অথচ প্রথম ছয় ওভারে ৫২ রান দিয়ে তাঁর অর্জন ছিল কেবল ভারত ওপেনার রোহিত শর্মার উইকেটটি।
তবে পাঁচ উইকেট নিলেও রিচার্ডসনের বোলিং যতটুকু ভুগিয়েছে, তার চেয়ে বেশি ভারতকে ভুগিয়েছে নিজেদের ব্যাটিং। হঠাৎ করেই কেন যেন খেই হারিয়ে ফেললেন কোহলি-ধোনি-ধাওয়ানরা। ৯২ বলে ১০৬ রান করা কোহলি যে শট খেলে আউট হলেন, সেটি একজন সেট হয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যানের জন্য রীতিমতো অপরাধ। ধাওয়ানও বা বেশি কিছু করতে পারলেন কই। ১২৬ করে তিনি আউট হওয়ার পরই তো আসল মড়কটা লেগেছে ভারতের ব্যাটিংয়ে। যেখানে এক রবীন্দ্র জাদেজা ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরেই পৌঁছাতে পারেননি।
তাতেই একটা সময় এত রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচটা শেষ দিকে কেমন ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে গেল। শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়া বেশ কয়েকটি ক্যাচ মিস না করলে হয়তো আরও আগেই শেষ হয়ে যেত ম্যাচটা। তাতে অবশ্য খুব একটা ক্ষতি বৃদ্ধি হয়নি তাদের। রেকর্ডটা তো সুরক্ষিতই রইল। দেশের মাটিতে যে কখনো ৩৪৮ বা তার বেশি করে হারেনি অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়াকে আজ এমন পাহাড়সম স্কোর এনে দিয়েছে দুই ওপেনারের হিসেবি ব্যাটিং এবং শেষ দিকে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের দুটি ঝড়। দ্বিতীয় সন্তানের মুখ দেখেই মাঠে ফেরা ডেভিড ওয়ার্নার ৯২ বলে করেছেন ৯৩। অল্পের জন্য নবাগত সন্তানকে সেঞ্চুরি দিয়ে পৃথিবীতে স্বাগত জানাতে পারলেন না ওয়ার্নার। তবে ওয়ার্নার না পারলেও তাঁর ওপেনিং সঙ্গী অ্যারন ফিঞ্চ ঠিকই পেয়েছেন সেঞ্চুরি। তাঁরও ছিল বলপ্রতি রান—১০৭ বলে ১০৭।
ওপেনিং জুটিতে এই দুজনের ১৮৭ রানে ভর করেই শেষ দিকে রীতিমতো ঝড় তুলেছিলেন ম্যাক্সওয়েল-স্মিথরা। দুজনই খুব বেশিক্ষণ ছিলেন না ক্রিজে। চারে নেমে স্মিথ ২৯ বলে করেছেন ফিফটি, আর পাঁচে নেমে ম্যাক্সওয়েল ২০ বলে ৪১!
এখান থেকে একটা শিক্ষা নিতে পারেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। ইনিংসের শেষ দিকে কীভাবে ব্যাট করতে হয়! আগের তিন ওয়ানডের মতো আজও যে শেষ দিকে এসে তালটা কেটে গেল তাদের। সিরিজের ফল এখন ৪-০ হয়ে গেল। ভারত এখন ৫-০তে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার লজ্জার অপেক্ষায়!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩৪৮/৮ (ওয়ার্নার ৯৩, ফিঞ্চ ১০৭, মার্শ ৩৩, স্মিথ ৫১, ম্যাক্সওয়েল ৪১; ইশান্ত ৪/৭৭, যাদব ৩/৬৭)
ভারত: ৪৯.২ ওভারে ৩২৩/১০ (রোহিত ৪১, ধাওয়ান ১২৬, কোহলি ১০৬; রিচার্ডসন ৫/৬৮, হ্যাস্টিংস ২/৫০, মিচেল মার্শ ২/৫৫)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ২৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কেন রিচার্ডসন