হারুনের আবাহনী থেমেছে শুভর সাদা-কালোর কাছে
মোহামেডানের চেয়ে আবাহনীর খেলোয়াড়দের দাম বেশি। তাদের আছে দেশসেরা কোচ মাহবুব হারুন। সেরা কোচের ক্লাব কাপজয়ী দলটি কাল মৌসুমে প্রথম হারের বিস্বাদ নিয়ে মাঠে ছেড়েছে। ২-১ গোলে হারের উপহারটি (!) দিয়েছে একদম তরুণ কোচ মওদুদুর রহমান শুভর অভিজ্ঞ মোহামেডান। সুবাদে ৯ ম্যাচ শেষে নীল-আকাশিকে ছাড়িয়ে মোহামেডান ২৭ পয়েন্ট নিয়ে যুগ্মভাবে শীর্ষে।
ম্যাচ শেষে দুই কোচ হাত মিলিয়েছেন। হারুন অভিনন্দন জানিয়েছেন তাঁর একসময়ের শিষ্য শুভকে। ২০১০ সালে খেলা ছাড়া শুভর কোচিং অভিষেক হয়েছে এই মৌসুমে। শুরুতে সাদা-কালোর কঠিন দায়িত্ব নিয়ে কঠিন হার্ডল পেরিয়ে তিনি দারুণ খুশি, ‘কোচ হিসেবে আবাহনীকে হারানোর অনুভূতি দুর্দান্ত। তবে এটা হারুন ভাইকে হারানোর ম্যাচ নয়। মোহামেডান অনেক স্পিরিটেড ছিল, সবাই খুব ভালো খেলেছে। মাঠের প্রত্যেকটা জায়গায় প্রতিপক্ষের চেয়ে ভালো খেলেছি আমরা। খারাপ করেছি পেনাল্টি কর্নারে, সাত-আটটা পিসি থেকে মাত্র একটা গোল পেয়েছি। নইলে হয়তো ব্যবধান আরো বড় হতো।’ আবাহনীর ভাগ্য ভালো যে সাদা-কালোয় পেনাল্টি কর্নার স্পেশালিস্ট কেউ ছিল না। হিটগুলো তাই পোস্টের এপাশ-ওপাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় নীল-আকাশিরা খেলায় ছিল ম্যাচ শেষ হওয়ার মিনিট দুয়েক আগ পর্যন্ত। ৬৯ মিনিটে শেষ পিসিটিই মহামূল্য জয় উপহার মোহামেডানকে। শমসেরের পুশটি কামরুজ্জামান রানা থামিয়ে দেওয়ার পর ভারতীয় ফরোয়ার্ড অরবিন্দ ড্র্যাগ অ্যান্ড ফ্লিকে বল আবাহনীর জালে জড়িয়ে দিয়ে মোহামেডানকে দুর্দান্ত জয় উপহার দিয়েছেন।
আবাহনী কোচ মাহবুব হারুনও স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘ম্যাচের সেরা দল হিসেবে মোহামেডান জিতেছে। তারা ভালো খেলেছে। আমাদের পারফরম্যান্স মোটেও ভালো ছিল না, স্থানীয় খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সও প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি। বিশেষ করে চার বিদেশির একজনও ভালো খেলেনি, এসব বিদেশি দিয়ে চলবে না।’ খারাপ পারফরম্যান্সে আবাহনীর দেশি-বিদেশি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। মালয়েশিয়া থেকে আসা তাজউদ্দিন আহমেদ শুধু নামে ফরোয়ার্ড, স্টিকে এমন কোনো নৈপুণ্য নেই। বল ধরে কোনো একজনকে পেছনে ফেলে এগিয়েছেন, এমনও দেখা যায়নি। বাকি তিনজনও নামে বিদেশি, কাজে দেশিদের চেয়েও বাজে।
কিন্তু স্টিকের ঝলকে চেনা যায় সাদা-কালোর বিদেশিদের। চার ভারতীয় সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুর্দান্ত খেলেছেন রাসেল মাহমুদ, তাতেই ম্যাচের শুরু থেকে মাঠে তাদের সুস্পষ্ট আধিপত্য। ২২ মিনিটে দেশি তারকা রাসেল মাহমুদ ডান দিক দিয়ে উঠে দারুণ এক বল সেন্টার করেছিলেন, গুরজিন্দার সেটি স্টিকে জমাতে পারলে তখনই এগিয়ে যেত। মিনিট দুয়েক বাদেই পেয়েছে সেই গোল, সার্কেলের ভেতর থেকে হঠাৎ নেওয়া কামরুজ্জামানের হিট সবাইকে ফাঁকি দিয়ে পৌঁছে যায় আবাহনীর জালে। ০-১ গোলে পিছিয়ে থাকা আবাহনী বিরতির পর দুটো সুযোগ তৈরি করেও ম্যাচে ফিরতে পারেনি। ৩৯ মিনিটে মহসিনের হিট মোহামেডানের পোস্ট ঘেঁষে চলে যায় বাইরে। ৫০ মিনিটে ভারতীয় গুনাশেখরের স্টিকে একটু তেজ দেখা যায়। ডানদিক থেকে তার বাড়ানো বলটি কৃষ্ণ সামনে থেকেও রাখতে পারেননি পোস্টে। শেষমেশ আবাহনী ম্যাচে ফেরে ৫৫ মিনিটে, তা-ও সাদা-কালো ডিফেন্সের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে। গোলরক্ষক জাহিদ প্রথমে পা দিয়ে ঠেকালেও ডিফেন্ডাররা তা ক্লিয়ার করতে পারেননি। এই সুযোগে আরশাদ বল জালে ঠেলে দলকে খেলায় ফেরান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাঠে যে তাদের ওই দাপট ছিল না। এত দিন প্রতিপক্ষের জালে কাড়ি কাড়ি গোল করা আবাহনী ছিল অগোছালো, ছন্দহীন। তাই ‘অনেক টাকার ভালো দল’ হয়েও মাথা নুইয়েছে সাদা-কালোর অভিজ্ঞতার কাছে।