‘আমি ৯০ মিনিট খেলা ছেলে’

  •  দুই মেয়াদে আট বছর ধরে বাফুফের সভাপতি পদে আছেন। আরেক মেয়াদে কেন আসা দরকার মনে করছেন?

কাজী সালাউদ্দিন: কারণ অনেক। প্রথমত, হারিয়ে যাওয়া ফুটবল আগের দুই মেয়াদে মাঠে রেখেছি। এখন প্রিমিয়ার লিগ ধারাবাহিকভাবে চলছে। দুটি বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ করেছি। শেখ কামাল গোল্ডকাপ শুরু হয়েছে। এসব আয়োজনের ধারাবাহিকতা রাখতে আমার আরেকটি মেয়াদ প্রয়োজন। কিছু বিশৃঙ্খলা আছে, সেগুলোও ঠিক করতে চাই।

  •  আপনার একসময়ের বন্ধু মনজুর কাদের প্রায়ই বলেন, আপনি নাকি ভোরবেলা ফেডারেশনে যান বাজার করতে। ফেডারেশনে আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

সালাউদ্দিন: এসব বাজে কথা। ফেডারেশনে সব তহবিলই অডিট করা। অস্বচ্ছতার কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি।

  •  আপনি বলেছেন, বাফুফেতে এটিই আপনার শেষ নির্বাচন। বিষয়টা আসলেই সত্যি?

সালাউদ্দিন: চতুর্থ মেয়াদে আমার আর না এলেও চলবে। তত দিনে সব প্রতিষ্ঠিত করে দেব ফেডারেশনে। ৪৭টি জেলায় এবার লিগ হয়েছে। ভবিষ্যতে সব জেলায় হবে। টিভি টক শোতে বসে ফালতু কথা বললে তো হবে না।

  •  পুরো পরিষদ নিয়ে চট্টগ্রামে গেছেন সবার সঙ্গে বসতে। কী মনে হয়, আবার নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?

সালাউদ্দিন: নির্বাচন দুটি পক্ষের মধ্যে হয়। এখানে আমার প্রতিপক্ষ ক্রীড়াঙ্গনের লোক নন। তাঁকে ধরে আনা হয়েছে। দু-চারজন লোক আমার ওপর জেদ মেটাতে ওনাকে নিয়ে এসেছেন। এতে আমি বিচলিত নই, বরং আশাবাদী।

  •  তবে ঝড়ের মুখে আপনি পড়েছেন, এটা সত্যি। এই ঝড় সামলাবেন কীভাবে?

সালাউদ্দিন: আমি ঝড়ে ভেঙে পড়ি না। এই পর্যায়ে আসতে আমার ৪০ বছর লেগেছে। কেউ যদি ভাবে দশ দিনে এসে সব জয় করে ফেলবে, সেটা তাদের ব্যাপার। আজই আমি আপনাদের পেপারে গোলাম রাব্বানী হেলালের ইন্টারভিউতে দেখলাম, তিনি একজন প্রার্থীর নাম উল্লেখ করে বলেছেন, ওই প্রার্থী দুটির বেশি ভোট পেলে…বাকিরা আমার বলা ঠিক হবে না।

  • হেলাল বলেছেন, ‘বাঁচাও ফুটবল’-এর সভাপতি প্রার্থী কামরুল আশরাফ খান তাঁর ও মনজুর কাদেরের ভোট দুটি ছাড়া তৃতীয়টি পেলে বুঝতে হবে সেটা টাকা দিয়ে কিনেছেন…

সালাউদ্দিন: আমিও হেলালের কথাটা সমর্থন করি। এ ছাড়া তো তাঁর তিন নম্বর ভোটটা পাওয়ার কারণ দেখছি না।

  •  প্রতিপক্ষ বলছে, আপনার ওপর উচ্চ পর্যায়ের আশীর্বাদ আর নেই…

সালাউদ্দিন: এই গুজবটা শুনছি ২০ দিন ধরে। সেটাই সত্যি হলে আমি নির্বাচন করছি কীভাবে? ফোরামের সভাপতি (চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন) আমার প্যানেলকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন। উনি ক্রীড়াঙ্গনের লোক, সরকারে প্রভাব আছে। কাজেই এসব ফালতু কথা।

  • ওই পক্ষের লোকজন এ-ও বলেন, ৩০ এপ্রিলের পর ফুটবল নতুন সভাপতি পেতে যাচ্ছে। আপনার দিন শেষ…

সালাউদ্দিন: তাই নাকি! আমি তো এমনও শুনেছি, চট্টগ্রাম থেকে আমি আর ফেরত যেতে পারব না ঢাকায়। সুতরাং এগুলো বাজারের সস্তা কথা। আমি তো উড়ে আসিনি। আমি ৯০ মিনিট খেলা ছেলে। নির্বাচনে হারতে পারি, কিন্তু পালিয়ে যাব না।

  •  সরাসরিই প্রশ্নটা করি, প্রধানমন্ত্রীর স্নেহের হাত নাকি আপনার মাথার ওপর থেকে সরে গেছে। তাই তিনি এবার নাকি নির্বাচন উপলক্ষে আপনাকে সাক্ষাৎ দেননি। বিষয়টা আসলে কী?

সালাউদ্দিন: এটাও বাজে কথা। আসলে বাফুফের নির্বাচনে সরকার চাইলেও হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এটা ফিফার অধীনে নির্বাচন।

  •  মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখা গেল, আপনাকে বিয়োগ করে সমঝোতার মাধ্যমে দুই পরিষদের চারজন সহসভাপতি নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। সেদিন আপনার মানসিক অবস্থা কেমন ছিল?

সালাউদ্দিন: আমি কখনো টেনশনে ছিলাম না। কারণ সত্যের জয় হয় এবং হবে। আমি বরং এখন টেনশনে আছি, ৩০ তারিখে ঠিকঠাক নির্বাচন করা নিয়ে।

  • এবার কি আপনি একটু বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে আছেন?

সালাউদ্দিন: এবার বিষয়টা খুব নোংরা হয়ে গেছে। আগে তা ছিল না। আগেও দুটি নির্বাচন করেছি। এভাবে কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে শুনিনি।

  •  আপনার বিরোধীরা বলে, আপনার সময় ফুটবল ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন ফুটবল বাঁচাতে হবে।

সালাউদ্দিন: এটা তো একটা নাটক। এত কিছুর পরও মাঠে কিন্তু ফুটবল আছে। আপনারা বিকেলে ফুটবল রিপোর্ট করেন। গত দুই বছরে জাতীয় দল যত ম্যাচ খেলেছে, আমার পুরো ক্যারিয়ারেও এত ম্যাচ খেলিনি। যারা বলছে, ফুটবল মরে গেছে, তারাও তো এত ম্যাচ খেলেনি।

  •  কিন্তু সাফল্য তো আসেনি…

সালাউদ্দিন: জাতীয় দলের জন্য অনেক কিছু করেছি। কিন্তু মাঠে তো আমি খেলতে পারব না। আমরা এই প্রথম সিলেট, রাজশাহী, যশোরে আন্তর্জাতিক ম্যাচ করেছি। অনূর্ধ্ব-১৬ সাফ চ্যাম্পিয়ন, অনূর্ধ্ব-১৯ রানার্সআপ। যুব ফুটবল নিয়ে কাজ না হলে এসব সাফল্য এল কীভাবে? মেয়েদের ফুটবল অনেক এগিয়েছে। গ্লাসের অর্ধেক খালি দেখে কেউ যদি বলে পানি নেই, সেটা তো হয় না।

  •  কিন্তু জাতীয় দলের ব্যর্থতার দায় আপনি এড়াবেন কীভাবে?

সালাউদ্দিন: জাতীয় দলের পারফরম্যান্স আগে ঠিক ছিল। ব্যর্থ হয়েছে গত কয়েক মাসে। সেটারও কারণ আছে। আমি জীবনে শুনিনি, ম্যাচের আগের দিন জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকে খেলোয়াড় নিয়ে যায় কোনো ক্লাব!

  •  কিন্তু সেই ক্লাব অর্থাৎ শেখ জামাল ক্লাবকে শাস্তি দেওয়ার সাহস আপনি দেখাতে পারেননি…

সালাউদ্দিন: ভালো প্রশ্ন। তবে এসব নিয়ে এখন নয়, নির্বাচনের পর কথা বলব।

  •  আপনি সুপার কাপ, একাডেমিসহ কিছু ভালো উদ্যোগের ধারাবাহিকতা রাখতে পারেননি। কেন পারেননি?

সালাউদ্দিন: সুপার কাপের বদলে এখন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ করব। আর একাডেমির সমস্যা টেকনিক্যাল। ওটা ১০ বছরের জন্য দরকার। নইলে স্পনসর পাব না। একাডেমির জন্য আমার হাতে জাপানি কোচসহ সব তৈরিই আছে।

  • আপনার সমালোচকেরা বলেন, আট বছরে আটজন খেলোয়াড়ও আপনি তৈরি করতে পারেননি।

সালাউদ্দিন: সারা পৃথিবীতেই খেলোয়াড় তৈরি করে ক্লাব। সেটা ভুলে গিয়ে যারা ফেডারেশনকে দোষ দিচ্ছে, তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লিগে। সেই ক্লাব সাত বছরে একটা নতুন প্লেয়ারও রেজিস্ট্রেশন করায়নি। ১ লাখ টাকার প্লেয়ার ১০ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছে। সুতরাং আমাকে দোষ না দিয়ে ক্লাবের দোষ খোঁজা উচিত সবার।