আনসারুল্লাহর হিটলিস্টে ৮৪ জন ব্লগার
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) হিটলিস্টে রয়েছে সরকারের কাছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জমা দেয়া ৮৪ জন ব্লগার। এসব ব্লগারের বিরুদ্ধে রয়েছে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি তালিকা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এবিটির প্রধান কারাবন্দি মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানী সব ধরনের কলকাঠি নাড়ছেন। আর এর সঙ্গে এবিটির ১৫ থেকে ২০ সদস্যের একটি অপারেশনাল টিম কাজ করছে, যারা রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে অপরাধ করে থাকে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ ব্লগারদের তালিকা দেয় হেফাজতে ইসলাম। ওই বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের অন্যতম সদস্য ব্লগার রাজীব হায়দার শোভনকেও ধর্ম নিয়ে কটূক্তির জন্য প্রাণ দিতে হয়। গত মাসের ২৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা বিজ্ঞানমনস্ক লেখক মার্কিন নাগরিক ড. অভিজিৎ রায়কে টিএসসির জনবহুল এলাকায় হত্যা করে উগ্রপন্থীরা। আর এ খুনে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে দেখছে গোয়েন্দারা।শাহবাগে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন মাঠে সক্রিয় হয়। তখন থেকে কিছু ব্লগারকে কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়।
গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নতুন কৌশলে মাথা চাড়া দিয়েছে। এই উগ্রপন্থী সংগঠনের সদস্যরা ধর্ম অবমাননাকারী ব্লগারদের তালিকা হাতে নিয়ে তাদের হিটলিস্টে রেখেছে। এরা রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে নাশকতার চেষ্টা বা নাশকতা করে থাকে। তালিকায় থাকা ৮৪ ব্লগারদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে – আরিফুর রহমান, মনির হাসান, বৃত্তবন্ধি, সবাক, শয়তান, মনজুরুল হক, কখগ, রাসেল, নাস্তিকের ধর্মকতা, দূরের পাখি, আরিফুল হক তুইন, মোহাম্মদ আবু তালেব, নাজিম উদ্দিন, আলমগীর কুমকুম, ফরহাদ উদ্দীন স্বপন, দুস্যবনহুর, ফারহানা আহমেদ, ঘনাদা, রাহান, অন্যকেউ, পাপী ০০৭, হোরাস, প্রশ্নোত্তর, ভালমানুষ, ভন্ডপীর, বৈকুণ্ঠ, সত্যান্বেষী, পড়ুয়া, হাল্ক (সানাউল), বিপ্লব ০০৭, রাস্তার ছেলে, ঘাতক, বিশাল বিডি, সাহোশি ৬, লাইট হাউজ, মমতা জাহান, রাতমজুর, কৌশিক, মেঘদূত, স্বপ্নকথক, প্রায়পাস, আহমেদ মোস্তফা কামাল, লুকার, নুহান, সোজাকথা, ট্রানজিস্টার, দিওয়ান, রিসাত, আমি এবং আধার, অরন্যদেব, কেল্টুদা, আমি রোধের ছেলে, ভিন্নচিন্তা, আউটসাইডার, প্রণব আচার্যা, আসিফ মহিউদ্দিন, আবুল কাশেম, আলমগীর হোসেন, অন্যআজাদ, অনন্ত বিজয় দাস, আশীষ চ্যাটানজি, অভিজিত রায়, বিপ্লব কান্তি দে, দাঁড়িপাল্লা ধমা ধম (নিতাই ভট্টাচার্য), ইব্রাহীম খলিল সবাগ, (সুমন সওদাগর) কৈশীক, আহমেদ, নুরনবী দুলাল, পারভেজ আলম, রাজিব হায়দার শোভন (থাবাবাবা), রতন (সন্যাসী), সৈকত চৌধুরী, শর্মী আমিন, সৌমিত্র মজুমদার (সৌম্য), আল্লামা শয়তান (বিপ্লব),মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, মোঃ তোফায়েল হোসেন, নাঈমুল ইসলাম, সৈয়দ মোহাম্মদ সজীব আবেদ, শুভজিদ ভৌমিক, সুমিত চৌধুরী, সৈকত বড়ুয়া, সুব্রত শুভ, সুসান্ত দাস গুপ্ত, সৈয়দ কামরান মির্জা, তাহসিন, তন্ময়, তালুকদার,জোবায়েন সন্ধি, সৈয়দ ইশতিয়াক সানভি অনিক হোসেন, আবু হানিফ, আবু তাহের মোস্তফা, এনায়েতুল হুদা,
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে উগ্রপন্থীরা নাশকতার চেষ্টা করে থাকে। বিশেষ কী ধরনের অপরাধ করলে তা প্রচার পাবে সে কৌশলও নেয় উগ্রপন্থীরা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) শেখ নাজমুল আলম যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন সময় গোয়েন্দা পুলিশ বেশ কয়েকজন ব্লগারকে সতর্ক করে। পাশাপাশি ওই তালিকায় থাকা পাঁচ ব্লগারকে গ্রেফতারও করা হয়। কটূক্তির অভিযোগে তাদের গ্রেফতারের পর এ ধরনের লেখা পোস্ট না করতেও বলা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অভিজিৎ রায় খুনের পর সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে গোয়েন্দাদের কিছু ব্লগ নজরদারির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এমনকি উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এসব ব্লগারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি অভিযান চালাতেও বলা হয়েছে গোয়েন্দাদের।