জাতীয় পার্টি ভাঙুক চায় না আওয়ামী লীগ
বহুভাগে বিভক্ত জাতীয় পার্টি (জাপা) আবার ভাঙুক—এই মুহূর্তে তা চায় না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নিষ্ক্রিয় করে ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী জাপা নেতাদের সক্রিয় দেখতে চায় ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো জানায়, এরশাদ-রওশনের বিবাদ আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে। তবে শেষ পর্যন্ত দল ভাঙবে না।
দায়িত্বশীল নেতারা আরও জানান, জাপা যতই ভাঙুক-গড়ুক, জাপা বলতে এরশাদকেই বোঝায়। আর এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপা তাদের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাই এরশাদও থাকবে, জাপাও ভাঙবে না-এটাই ক্ষমতাসীনদের চাওয়া। বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা রওশনও ‘মাইনাস’ হোক জাতীয় পার্টি থেকে তেমন কিছুও ভাবছে না আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দায়িত্বশীল এসব নেতারা বলেন, জাপায় ভাঙ্গন রাজনীতিতে বেকায়দা পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। পাশাপাশ বিরোধী দল হিসেবেও দুর্বল হয়ে পড়বে তারা। এরশাদবিহীন জাপা বিরোধী দল হিসেবে আলো ছড়াবে না। তাই জাপা এরশাদের নেতৃত্বেই থাকুক, কিন্তু নীতি-নির্ধারক থাকবে আওয়ামী লীগ অনুসারীরা। সেক্ষেত্রে জাপায় ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন বাবলুর মত নেতাদের চায় আওয়ামী লীগ। অবশ্য এখানে এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের সরকারের অপছন্দের নয় বলেও জানা গেছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রকাশ্যে যদিও জাপা নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তবে প্রয়োজন পড়লে ভূমিকা রাখার ইচ্ছা তাদের রয়েছে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর অন্তত চার জন নেতা এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রভাবশালী এক মন্ত্রী বলেন, জাপার গৃহবিবাদ কোথায় গিয়ে ঠেকে তা পর্যবেক্ষণ করছে আওয়ামী লীগ। তিনি জানান, দলের কেউ কেউ জাপার এ অভ্যন্তরীণ ঝামেলাকে ‘মজার’ বিষয় হিসেবেও দেখছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজি জাফরউল্যাহ বলেন, জাতীয় পার্টি নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যাথা নেই। বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিতে বর্তমান যে জটিলতা দেখা দিয়েছে সেটি গণতন্ত্রের চর্চা চলছে বলে আমি মনে করি। শিগগিরই জটিলতার সফল সমাধান ঘটবে। তিনি বলেন, জাপা অনেকবার ভেঙেছে তবে ভঙ্গুর ওই দলগুলোর চেয়ে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপা এখনও বিশাল সংগঠন।
এ বিষয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, জাতীয় পার্টিতে অভ্যন্তরীণ সমস্যা চলছে। এটা নিয়ে আমাদের কথা বলা ঠিক হবে না। তবে তিনি বলেন, আসলে জাতীয় পার্টি বলতে বোঝায় এরশাদ। হানিফ বলেন, কোনও দল ভাঙুক এটা আমরা চাই না।
মঙ্গলবার বিকেলে আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভায় হানিফ জাতীয় পার্টির বিষয়ে কথা তুলতে গেলে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে থামিয়ে দেন।
এদিকে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা হলেও জাতীয় পার্টির মধ্যে এখনও এরশাদ অনুসারী নেতা-কর্মী ও সংসদে এমপি বেশি রয়েছে। এরশাদ-রওশন দলাদলি হলে শক্তিশালী থাকবে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপা। আর রওশন নেতৃত্বাধীন জাপা বিরোধী দল হিসেবে দুর্বল থাকবে। তাই অবিভক্ত জাপা এই মুহুর্তে সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এরশাদ-রওশন বিবাদে জাতীয় পার্টি ভেঙে গেলেও খানিকটা বিপাকে পড়তে হবে আওয়ামী লীগকেও। মাঠে সরকারের আরেক প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপা।তাই জাপা ভাঙ্গার এটা সঠিক সময় নয় বলে মনে করছে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী মহল।
সূত্র জানায়, ভাঙ্গন এড়াতে প্রয়োজন পড়লে ভেতরে ভেতরে ক্ষমতাসীনরা মধ্যস্থতাও করবে। জানা গেছে, জাতীয় পার্টি আপাতত সরকারের বশে থাকলেও দলটির চেয়ারম্যান এরশাদ সবসময় ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। তাই আওয়ামী লীগ অনুসারী জাপার নেতারা দলটির ভেতরে প্রভাব বিস্তার করে থাকলে এরশাদকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
সরকারি মহলের কয়েকটি সূত্র জানায়, রওশন আপাতত ক্ষমতাসীন ঘরানায় পরিচিত। তাই রওশনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি সরকারের জন্যে মন্দ হবে না।
সূত্র জানায়, এরশাদ-রওশনের গৃহবিবাদ মেটাতে ভেতরে ভেতরে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের একটি মহল কাজ শুরু করেছে। রওশনও ক্ষমতাসীন দলের নীতি-নির্ধারণী মহলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথাও বলেছেন। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক নেতা রওশনকে পরামর্শ দিয়েছেন এরশাদকে ‘ম্যানেজ’ করার। আবার এরশাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন টেলিফোনে কথা বলেছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এরশাদ অনুসারী জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এরশাদ ছাড়া জাতীয় পার্টি সরকারের কাজে আসবে না। তাই জাপার ভেতরে এ সমস্যা সমাধানে আওয়ামী লীগ উদ্যোগী হবে। তিনি বলেন, জাপা ভাঙার সম্ভাবনা নেই। শিগগিরই চলমান সমস্যার অবসান ঘটবে।