বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে কারা
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসিকে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পেছনের শক্তি এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চিহ্নিত করার জন্য একটি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আনিসুল হক বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত সাবেক সেনা সদস্যদের বিচার হলেও এর পেছনের রাজনীতি এবং ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে তদন্ত হয়নি। সেজন্য তারা কমিশন গঠন করছেন। বিরোধীদল বিএনপির নেতারা বলেছেন, তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে টার্গেট করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই কমিশন করা হচ্ছে কিনা-এই প্রশ্ন তাদের রয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার ঘটনার এখন ৪৫ বছর পুরো হয়েছে। ঘটনার প্রায় ৩৫ বছর পর ২০১০ সালে সেই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত সাবেক সেনা সদস্যদের মৃত্যুদন্ড হয়। আদালতের রায়ে হত্যাকাণ্ডের পেছনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু বিস্তারিত উঠে আসেনি। কয়েকবছর ধরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং পেছনের শক্তি চিহ্নিত করার দাবি করে আসছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত পেশাজীবী সংগঠনগুলো। হত্যাকা্ল নিয়ে নানা রকম রাজনৈতিক বক্তব্য এবং ষড়যন্ত্রের নানা তত্ত্ব আলোচনায় রয়েছে। এবার এ ব্যাপারে তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘ইতিহাসের স্বার্থে নেপথ্যের শক্তিকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন। কমিশন গঠনের চিন্তা ভাবনা শুধু নয়, এখন কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি’।
কেন এই কমিশন?
আইনমন্ত্রী বলেছেন, কমিশন হবে এই কারণে যে, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা ছিল-সমাজে এবং রাষ্ট্রে তাদের মুখোশ যদি উন্মোচন করা না হয়, তাদের অনুসারীরা হয়তো ভবিষ্যতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিপন্ন করতে পারে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন আমাদেরও আছে, সেই স্বপ্নও নষ্ট করতে পারে।’ ‘সেইজন্য বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার জননেত্রী শেখ হাসিনা করেছেন। এর পরের অধ্যায় হচ্ছে, নেপথ্যে কারা ছিল, এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে কারা ছিল-তাদেরকে চিহ্নিত করা। এবং চিহ্নিত করে ইতিহাসটা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে রেখে যাওয়া। সেজন্য কমিশন গঠন করা। এটা কোন উইচ হান্টিং না।
হত্যাকাণ্ডের পেছনে সে সময়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রাজনীতিও ছিল বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন। দলটির নেতারা বিভিন্ন সময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের তখনকার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে কিছুদিন ধরে সরকার এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সেসব প্রশ্ন বা বক্তব্যকে সামনে আনা হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এক অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে ১৯৭৫ সালে ১৫ অগাস্ট হত্যাকাণ্ডে তার ভাষায় আসল খলনায়ক হিসাবে অভিহিত করেছেন। এমন সব অভিযোগের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতারাও তাদের বক্তব্য তুলে ধরে আসছেন।
‘জিয়াউর রহমান টার্গেট’
এখন কমিশন গঠনের সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত বলে তারা মনে করেন। এতদিন পরে আবার এই ইস্যুটাকে আনা হচ্ছে, যেটার বিচার হয়ে গেছে এবং সাজা হয়েছে। সেটাকে আবার নিয়ে এসে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবকে দায়ী করে কথা বলা হচ্ছে এবং সেটা নির্বাহী বিভাগের প্রধানের কাছ থেকেই বক্তব্য আসছে। এটা দেশ পরিচালনায় এবং সর্বশেষ কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সামলাতে তাদের যে ব্যর্থতা, তা থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্য দিকে সরাতে তারা এসব কমিশনের বিষয় আনছে।
আলমগীর আরো বলেছেন, অন্যদিকে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যেহেতু বিএনপি, সেজন্য এই দলকে আরো কীভাবে কাবু করা যায় বা কীভাবে আরও সমস্যায় ফেলা যায়-সেই চেষ্টারই আরেকটা উদাহরণ আরকি। তবে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে, রাজনৈতিকভাবে কাউকে টার্গেট করে সরকার এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে না এবং কমিশন নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করবে। যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন, তারা ভয় পেতে পারেন। যারা জড়িত ছিলেন না, তাদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রওনক জাহান বলেছেন, ‘ষড়যন্ত্রের থিওরি যেগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে যদি খুব সিরিয়াসলি আরো তথ্য উপাত্ত যোগাড় করা যায়, আর সেগুলো যদি জনসমক্ষে উপস্থাপন করা যায়, তাহলে আমার মনে হয়, সেটা নিশ্চয়ই ভালই হবে’। আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, কমিশন কীভাবে গঠন করা হবে, এর কার্যপরিধি এবং ক্ষমতা কী হবে-এসব বিষয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে তারা অল্প সময়ের মধ্যে ঠিক করবেন।