ধর্ম অবমাননার দায়ে আদালতে মামলা

গত ১৭-ই অক্টোবর সোমবার ঢাকা চীফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মুন্সী মকিদুল ইসলাম নামের এক ব্যাক্তি ৫৫ জন মুক্তমনা লেখকদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা করেন। “এথিস্ট ইন বাংলাদেশ” নামক একটি ম্যাগাজিনের লেখাকে কেন্দ্র করে পাবলিশার ও ম্যাগাজিনটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দন্ডবিধির ২৯৫ ধারাতে মামলা করা হয়। এই মামলায় মূল আসামী করা হয় জোবায়ের হোসেন নামক একজন ব্যাক্তিকে এবং এই মামলার অন্য আসামীরা হচ্ছেন-

এই মামলার সম্পাদক আরিফুর রহমান, সহ সম্পাদক এম ডি তোফায়েল হোসেন  প্রকাশক সেকুলার পাব্লিকেশন্স সহ মোট অভিযুক্তের সংখ্যা ৫৫ জন। যাদের মধ্যে  রয়েছেন আব্দুর রহমান, আবু হানিফ , সৈয়দ মোহাম্মদ সজীব আবেদ , সৈয়দ সানভী অনিক হোসেন, তাশনুভা ফেরদৌসী , নাঈমুল ইসলাম, আবদুল আহাদ শান্ত , সৈয়দ ইশতিয়াক হোসেন ,পিনাকী দেব অপু ,সোহাগ কাজী, এনায়েতুল হুদা , রুজভেল্ট হালদার , ইয়াজ কাওসার , মারুফ হাসান ,সৈয়দ ইশতিয়াক হোসেন শাওন,তাহেরা সুলতানা ,ফারহানা ইয়াসমিন , আবদুল আহাদ , মাসুদ খান ,এম ডি সাব্বির হোসাইন, জাওয়াদ নির্ঝর ,কিশোর দাশ , হাফিজুর রহমান,আব্দুল কাদের ,শিপন আহমেদ , এ এফ এম আব্দুল্লাহ মাসুম ,তামজিদ হোসাইন , হোসনি মোবারক ,রাকিবুল ইসলাম পিন্টু ,ফারজানা ইসলাম , বাণী মাহমুদ শুভএম ডি আব্দুল্লাহ আল হাসান, ,এইচ এম আতিকুর রহমান,আসিফ আবরার টিটু ,আবুল হাসনাত,হায়াৎ হামিদ উল্লাহ রবিন ,শাফি নেওয়াজ শিপু ,মিল্টন কুমার দে , শারমিন জান্নাত ভুট্টো , আবু তাহের মোঃ মুস্তাফা,সাইফুল ইসলাম , আরমান আহমেদ, নাজমুল হোসেন ,সুজন চন্দ্র দেব ,সুরঞ্জয় সরকার , সৈয়দ সামুন আলী,ফয়সাল হোসেন অনিক , অরুনাংশ চক্রবর্তী , চিন্ময় দেবনাথ,আদনান সাকিব

আমাদের আদালত প্রতিনিধির মাধ্যমে জানা যায় যে, বাদী এই উক্ত ম্যাগাজিনে আল্লাহ ও নবী-রাসুল সম্পর্কে কটুক্তি ও নোংরা ভাষার লেখা দেখতে পেয়ে আর নিজেকে সংবরন করতে পারেন নি। বাদী মকিদুল জানান যে, এই ম্যাগাজিনে সকল লেখকদের মধ্যে একজন বিবাদী জোবায়ের হোসেন তার পূর্ব পরিচিত। ফেসবুকে তার লেখা নিয়মিত লক্ষ্য করে যে কিনা ধর্ম নিয়ে ইচ্ছেমত নোংরা ভাষায় ইসলাম ধর্মের নবী, রাসুল, সাহাবা-কেরামদের বিরুদ্ধে মন গড়া কথা লিখতে থাকে। জোবায়ের হোসেনের এমন অবস্থা দেখার পর বাদী মকিদুল নিজেকে আর সংবরন করতে পারেন নি আইনের আশ্রয় নেয়া ছাড়া। বাদী মকিদুল বলেন যে, যদি জোবায়ের সহ এই ম্যাগাজিনের অন্য নাস্তিকদের আল্লাহ ও রাসুল নিয়ে এইসব নোংরা লেখা লেখার অধিকার থাকে তাহলে তারও মামলা করে আইনের আশ্রয় চাইবার অধিকার তাঁরও রয়েছে। আর আইন যদি এদের বিচার না করতে পারে তাহলে এদের কাউকেই ছাড়া হবে না বলে তিনি হুশিয়ারী দেন। ছাড়া হবে না বলতে তিনি কি বুঝিয়েছেন জানতে চাইলে মকিদুল বলেন, “সেটা সময় বলে দিবে”

এইদিকে আসামীদের সাথে নানাভাবে যোগাযোগ করবার চেষ্টা করা হলেও তারা কোনোভাবেই এই প্রতিবেদককে সাড়া দেন নাই।

এদিকে এই ম্যাগাজিনকে নিষিদ্ধ ঘোষনার দাবী জানিয়ে হেফাজতী ইসলাম এক জরুরী সভার আয়োজন করে। এই সভায় বলা হয় যে বাংলাদেশে কোনো নাস্তিক ও মুরতাদ থাকতে পারবে না এবং অবিলম্বে এই এথিস্ট ইন বাংলাদেশের সকল প্রকাশনা নিষিদ্ধ এবং এদের ওয়েব সাইটকে বাংলাদেশ থেকে ব্যান করবারও দাবী জানানো হয় উক্ত সভাতে।

এই ঘটনায় ফেসবুকে অত্যন্ত তোলপাড় শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তমনা লেখকেরা এই মামলার বিরোধিতা করে বলেছেন এখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। ব্লগার ও লেখক নিঝুম মজুমদার বলেছেন, “এইভাবে ক্রমাগতভাবে আদালতের বা পুলিশের ভয় দেখিয়ে মুক্তমতকেই আসলে দমিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ এখন মোল্লাদের দেশ হয়ে গেছে”

এদিকে এই ঘটনার তদন্ত ভার পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে দিয়ে আগামী ২৮ শে নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। তারা এই মামলার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হন নাই।