পুলিশে ঢুকতে টাকা চুরি হত্যা পুলিশের স্ত্রীকেই!

betu

আরাফাত শুনেছে, পুলিশে চাকরি পেতে টাকা লাগে। টাকা জোগাড় করতে ছেলেটি এক পুলিশ কর্মকর্তার শ্বশুরবাড়িতে হানা দেয়। ৫ মে দুপুর ১টা। রাজধানীর লালকুঠির তৃতীয় কলোনির ২৫২/১ নম্বর এক তলা বাড়ির দরজা ফাঁকা পেয়ে ঢুকে পড়ে কিশোরটি। বাধা এলে মোকাবেলা করার জন্য মিরপুরের ১ নম্বর থেকে দড়ি ও স্কচ টেপ কিনে সঙ্গে রেখেছিল। বাইরে থেকে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী ঘরে ঢুকতেই সে কাপড় দিয়ে তাঁকে জাপটে ধরে এবং হাত-পা বেঁধে মুখে স্কচ টেপ লাগিয়ে দেয়।

রাজধানীর মিরপুরের দারুসসালাম এলাকায় পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) স্ত্রী শাহানা আলম খান বিউটি (৪৫) হত্যা মামলায় আরাফাত তালুকদার নামে ১৭ বছরের এই কিশোর এমনই তথ্য দিচ্ছে। গত শুক্রবার রাতে ধামরাই থেকে গ্রেপ্তার হয় আরাফাত এবং গতকাল শনিবার ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। আরাফাত গত ৬ মে প্রকাশিত ফলাফলে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হয়। তার ধারণা ছিল, মোটা অঙ্কের অর্থ জোগাড় করা গেলে পুলিশে চাকরি পাওয়া যাবে। স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর আরাফাতকে গাজীপুরের কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন আদালত।

গত ৫ মে লালকুঠির পৈতৃক বাড়ির একটি কক্ষ থেকে পাটের রশি দিয়ে বিউটির হাত-পা বাঁধা এবং মুখে স্কচ টেপ লাগানো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বিউটি ছিলেন ধানমণ্ডির সানিডেল স্কুলের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। তাঁর স্বামী কামাল হোসেন মাগুরা সদর থানায় এএসআই হিসেবে কর্মরত।

আরাফাতের দাবি, সে বিউটির মুখ চেপে ধরলেও হত্যা করতে চায়নি; বিউটি নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। পুলিশ সূত্র আরো জানায়, আরাফাতের ধারণা ছিল কেউ তাকে সন্দেহ করবে না; কারণ সে ওই এলাকায়ই থাকে না। এ ছাড়া বিউটিদের পরিবারের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ আছে। চুরি যাওয়া মোবাইল ফোনটি তার কাছে পাওয়া গেলেও চুরি করা পাঁচ হাজার টাকা ফেলে দিয়েছে বলে দাবি করেছে আরাফাত।

জানা যায়, কোনো সন্তান না হওয়ায় বিউটির স্বামী কামাল আরেকটি বিয়ে করেছেন, যা নিয়ে দাম্পত্য বিবাদ চলছিল। বিউটি যে বাড়িতে খুন হন সেটি জেলা পরিষদের জমি ইজারা নিয়ে তৈরি করেছিলেন তাঁর বাবা। সম্প্রতি তিনি ছোট মেয়ে ঋতুর নামে ইজারার মালিকানা হস্তান্তর করে দিয়েছেন। তিন-চার মাস ধরে বিউটি ওই বাড়ির একটি কক্ষে বসবাস করছিলেন। হত্যার আগে বিউটির বোন ঋতু গ্রামের বাড়ি যান। ফলে রহস্য আরো ঘনীভূত হয়।

বিউটির স্বামী গতকাল মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি শুনেছি আসামি ধরা পড়েছে। আর বিস্তারিত কিছু জানি না। কর্মস্থলে যোগ দিয়েছি। ছুটি নিয়ে আবার ঢাকায় এসে সব খোঁজ নেব।’

পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল ঢাকার মহানগর হাকিম জিয়ারুল ইসলামের আদালতে ঘটনার আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেছে আরাফাত। দারুসসালাম থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুকুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ধামরাইয়ে নানাবাড়ি থেকে আরাফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা আরো জানান, আরাফাতের বাবা হায়দার রেজা তালুকদার বাস কাউন্টারের কর্মী। বাসা গাবতলীর বাঘবাড়ীতে। একই এলাকার হওয়ায় বিউটির বাবা শামসুল আলম খানের সঙ্গে আরাফাতের মায়ের ভালো সম্পর্ক ছিল। আরাফাত ধামরাইয়ে নানার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করলেও শামসুল আলম খানের পরিবার সম্পর্কে জানত। গত ১ মে বিউটির বোন রোকসানা আলম খান ঋতু ও বাবা টাঙ্গাইলে গ্রামের বাড়িতে গেলে ফাঁকা বাসা মনে করে চুরি করতে যায় আরাফাত। চৌহাট বাংলা স্কুল থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৩.৭৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে আরাফত।