ঢাকা-চট্টগ্রাম ২৪ ঘণ্টার যাত্রা!
ফেনীর ফতেহপুরে উড়াল সেতুর নির্মাণকাজের জন্য চার লেনের মধ্যে দুই লেন বন্ধ, বিকল্প সড়ক দেবে যাওয়া, প্রবল বৃষ্টিপাতে ছোট-বড় খানাখন্দে স্থানে স্থানে জলাবদ্ধতা, মহাসড়কে বাস থামানো, মহাসড়কের ওপর বাজার—এমন সব কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নেমে এসেছে স্মরণকালের স্থবিরতা। টানা তিন দিন ধরে ভয়াবহ যানজটে অচল এই মহাসড়কে ট্রাক ও লরি ভাড়া বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম কিংবা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছতে লেগে যাচ্ছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই মহাসড়ক ব্যবহার করে সরবরাহ করা হয় পণ্যসামগ্রী। চলাচলকারী যানবাহনের ৬০ শতাংশই পণ্যবাহী। আর কয়েক দিন বাদেই পবিত্র রমজান। দুঃসহ এই যানজটের কারণে রমজান সামনে রেখে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহে চরম ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে মহাসড়কের দুঃসহ যানজটের কারণে ট্রেন ও বিমানের টিকিটের চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় পাওয়া যাচ্ছে না।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, এই মহাসড়কে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টাই লেগে থাকছে দুঃসহ যানজট। গতকাল মহাসড়কের ১৩৯ কিলোমিটারে যানজট ছিল। এর মধ্যে ফেনী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ সময় গাড়ি আটকা পড়ে থাকে। এগোতে পারেনি রোগী বহনকারী অ্যাম্বুল্যান্সও। মহাসড়কের পাশে বিশ্রামাগার, শৌচাগার না থাকায় যাত্রীসাধারণ ও চালকদের গাড়িতে বসে অসহনীয় দুর্ভোগে কাটাতে হচ্ছে রাত-দিন।
২০১৬ সালের জুলাই মাসে চার লেন প্রকল্পের কাজ শেষে মহাসড়ক প্রশস্ত হওয়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতে গড়ে সময় লাগত পাঁচ ঘণ্টা। তবে গত দুই বছরেই মহাসড়কটি আগের চেয়েও খারাপ অবস্থায় পৌঁছে যায়। তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সওজ অধিদপ্তরের অধীনে চার লেন প্রকল্পের বিভিন্ন কাজ শেষ হলেও চট্টগ্রামে, কুমিল্লার পদুয়ার বাজার ও ফেনীর ফতেহপুরে লেভেলক্রসিংয়ের ওপর উড়াল সেতু নির্মাণকাজ বাকি থেকে যায়। এরই মধ্যে পদুয়ার বাজার উড়াল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। এই সেতুর নির্মাণকাজের সময়ও যানজট লেগে থাকত। তবে ফতেহপুরে উড়াল সেতুর চূড়ান্ত পর্বের কাজ শুরু হলে দুই সপ্তাহ ধরে চার লেনের মধ্যে দুই লেন বন্ধ করে যান চলাচলের ব্যবস্থা রাখায় ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, রোজা সামনে রেখে পণ্য পরিবহন বেড়ে যাওয়ায় এ মহাসড়কে ট্রাক, লরিসহ বিভিন্ন ভারী যানবাহন আগের চেয়ে বেশি চলাচল করছে। সওজ অধিদপ্তরের হিসাবে, এ মহাসড়কে দিনে গড়ে ২৫ হাজার যাত্রী ও পণ্যবাহী যান চলাচল করে। বর্তমানে বেড়ে গেছে আরো ২০ শতাংশ বেশি যান চলাচল।
মহাসড়কে সেতুগুলোর টোল প্লাজার হিসাব অনুযায়ী, প্রতি ২৪ ঘণ্টায় এই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল করছে ৩০ হাজারেরও বেশি। ফেনীর ফতেহপুর লেভেলক্রসিংয়ে উড়াল সেতুর উন্নয়নকাজ ও খানাখন্দে যানবাহনের চট্টগ্রামমুখী বিকল্প সড়কে এবং ঢাকামুখী যানবাহনগুলোকে উড়াল সেতুর সার্ভিস সড়কে চলাচলে বাধ্য করছে মহাসড়ক পুলিশ। সেতু লাগোয়া ৩০ ফুটেরও বেশি চওড়া সার্ভিস সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। তবে সেখানে দ্বিমুখী যান চলাচলের সুযোগ রয়েছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত ছিল একমুখী চলাচল। অন্যদিকে যানবাহনগুলোকে দুই লেনের সার্ভিস সড়কে ১০০ মিটার খানাখন্দের কারণে পাড়ি দিতে হচ্ছে ছয় কিলোমিটারের বিকল্প সড়ক। কিন্তু বিকল্প সড়কও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও দেবে গেছে। এতে করে স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলতে না পারায় যানজটের মাত্রা আরো বাড়ছে। আর দুর্ভোগ বাড়ছে যাত্রীসাধারণ ও চালকদের।
ফেনীর ফতেহপুরে আটকে পড়া হানিফ পরিবহনের যাত্রী নজির হোসেন গতকাল শনিবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে শিমরাইল, সোনারগাঁ, মদনপুর, চৌদ্দগ্রাম, পদুয়ার বাজারে দীর্ঘ সময় যানজটে থেমে থাকতে থাকতে গতকাল বিকেলে ফতেহপুর পৌঁছে সেখানে আবার আটকা পড়েছেন। এই দীর্ঘ সময় আটকা পড়ার কারণে যাত্রীদের অনেকে বমি করছে। খাবারের অভাবে নারী ও শিশুদের অবস্থা আরো কাহিল। তিনি বলেন, বাসই এই মহাসড়কে ঘরবাড়ি হয়ে গেছে।
ঢাকার তেজগাঁও, দয়াগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে ট্রাকচালকরা যানজট না কমা পর্যন্ত ট্রিপ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। আগাম বুকিং নিতে চাইছেন না বলেও জানা গেছে। রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে এ মহাসড়ক হয়ে বিভিন্ন জেলায় চলাচলকারী বাস-মিনিবাস চলাচল প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে বলে পরিবহনসংশ্লিষ্টরা জানান।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা, শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ কালের কণ্ঠকে বলেন, বৃষ্টির কারণে রাস্তা এমনিতেই পিচ্ছিল, খানাখন্দে ভরা, তার ওপর এই যানজটের কারণে যাত্রীরা আতঙ্কে আছে। বাধ্য হয়েই তারা বাসে চাপছে। না হয় কেউ যেত না।
বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ওজন নিয়ন্ত্রণ হওয়ার পর থেকে গত নভেম্বর থেকে ট্রাকভাড়া বেড়েছে। রোজা সামনে রেখে বর্তমানে পণ্য পরিবহন বাড়লেও রাস্তায় যেখানে আসা-যাওয়ায় আগে দুই দিন লাগত, সেখানে এখন লাগছে পাঁচ দিন। ফতেহপুরে উড়াল সেতুর কাজের ফলে নতুন করে যানজটের ভয়াবহতা দেখতে হচ্ছে। তৈরি পোশাক পরিবহনের জন্য কাভার্ড ভ্যান আছে ২২ হাজার। সেগুলো এ মহাসড়ক দিয়েই চলে। সারা দেশে ট্রাক আছে তিন লাখ ১০ হাজার। তার সিংহভাগই এ মহাসড়ক দিয়ে পণ্য পরিবহন করে। এ মহাসড়ক ব্যবহার করছে ২১টি জেলা। চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে দেরির সঙ্গে বর্তমানে মহাসড়কে এই যানজটের কারণে বাধ্য হয়ে ট্রাকভাড়া বেশি নিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আগের দিন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় মালপত্র পরিবহনের জন্য ট্রাক ভাড়া ছিল যেখানে ১৫ হাজার টাকা, তা গতকাল ছিল ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহাসড়কের যানজটের বিরূপ প্রভাব পড়েছে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন ব্যয়ে। যানজট যত তীব্র হচ্ছে ট্রাকভাড়াও বাড়ছে।
সূত্র জানায়, দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯০ শতাংশ সমুদ্রপথ দিয়ে হয়। কিন্তু যানজটের কারণে যথাযথ সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পৌঁছানো কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে। রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণও সম্ভব হচ্ছে না সময়মতো।
ফেনীর ফতেহপুর লেভেলক্রসিংয়ের ওপর উড়াল সেতুর নির্মাণকাজ আগামী দুই সপ্তাহের আগে শেষ হবে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ১৫ মে থেকে বন্ধ দুই লেন খুলে দেওয়া হবে। তখন যানজট কমবে। কিন্তু গত শুক্রবার বিকেল থেকে যানজট থেকে রেহাই পাওয়ার উদ্যোগ হিসেবে মহাসড়কে পুলিশ চট্টগ্রামমুখো গাড়িগুলো কুমিল্লার লাকসাম ও নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী হয়ে ফেনীর মহিপাল দিয়ে পারাপারের ব্যবস্থা করেছে। ঘুরতি পথেও সুফল মিলছে বলে চালক ও যাত্রীরা জানিয়েছে। পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান বিকল্প পথে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ বলে চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। শুধু বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলতে দেওয়া হচ্ছে। বিকল্প সড়কটি দুই লেনের। এতে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব ৪৫ কিলোমিটার বেড়ে গেছে।
এদিকে বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত ফেনীর ট্রাংক রোড যানবাহনের ভার নিতে অক্ষম হওয়ায় সড়কটি দেবে গেছে। রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিলেও সড়কের ১৩ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করা যাচ্ছে না বৃষ্টির কারণে।
এদিকে যাত্রীসাধারণের এই সীমাহীন দুর্ভোগ লাঘবে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে চলাচলকারী চারটি আন্ত নগর ট্রেনে বাড়তি বগি সংযোজন করা হয়েছে। কিন্তু এর পরও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক সীতাংশু চক্রবর্তী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা মহাসড়কের এ পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করছি। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে চলাচলকারী সোনার বাংলা, তূর্ণা নিশীথাসহ চারটি আন্ত নগর ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করেছি। স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রিও সহজ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রী নামানো ও তোলা হচ্ছে। তার পরও যাত্রীদের এই বিশাল চাপ সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
জরুরি খাদ্য ও পানি সরবরাহ করা হচ্ছে যাত্রীদের রাজধানীর একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত নাসরিন আক্তার গতকাল ফেনীর ফতেহপুরে যানজটে আটকা পড়ে ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খাবার খেতে বসছিলেন তিনি পাশের একটি রেস্তোরাঁয়। স্বামী ও দুই ছেলে-মেয়েসহ ঢাকা থেকে তিনি সৌদিয়া পরিবহনের বাসে রওনা দিয়েছিলেন গতকাল সকাল ৭টায়। বাসটির চালক যানজট এড়াতে কুমিল্লা বিশ্বরোড, লাকসাম, নোয়াখালীর চৌমুহনী হয়ে মহিপাল পৌঁছে সন্ধ্যা ৬টায়। নাসরিন বলেন, আম্মা অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাই বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কখনো পড়িনি। গাড়িতে টানা বসে থেকে পা ফুলে গেছে, হাত-পা একটানা ব্যথা করছে। বাচ্চারাও অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কখন চট্টগ্রাম পৌঁঁছাতে পারব আল্লাহই জানেন।
আমাদের ফেনী প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান দারা জানান, গতকাল ফেনী থেকে মিরসরাইয়ের দিকে মহাসড়কে ৮০ কিলোমিটার যানজট ছিল। শুক্রবার গভীর রাত থেকে আটকে পড়া যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠে নামেন পুলিশ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা। ফেনীর পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার প্রায় ভোররাত পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাত্রী ও চালকদের জন্য শুকনো খাবার ও পানি বিতরণ করা হচ্ছে। পুলিশ সুপার কালের কণ্ঠকে বলেন, সাধারণ যাত্রীদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে পুলিশ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। তিনি জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে ফেনী পুলিশের একাধিক দল রাতভর কাজ করছে। তবু হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ফেনীর পূবালী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রধান সমন্বয়কারী সমরজিৎ দাশ টুটুল জরুরি প্রয়োজনে ঢাকার উদ্দেশে ফেনী থেকে স্টার লাইনের বাসে চড়েন শনিবার সকাল ৯টায়। ফেনী সদরের ফতেহপুর ওভারপাস পার হতে তাঁকে বহনকারী বাসের সময় লাগে সাড়ে তিন ঘণ্টা।
প্রয়োজনে ঢাকায় গিয়েছিলেন দুই দিন আগে। প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর শনিবার সন্ধ্যায় ফেনীতে পৌঁছান। তিনি বলেন, কুমিল্লার শুয়াগাজী থেকে জ্যামের শুরু। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে গরমে যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
আমাদের সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি সৌমিত্র চক্রবর্তী জানান, গতকাল সকাল ৮টায় সীতাকুণ্ড পৌর সদরের উত্তর বাইপাস এলাকার মহাসড়কের পাশ থেকে হেঁটে চলছিল অসংখ্য নর-নারী। তাদের মধ্যে একটি শিশুকন্যা মায়ের হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে ডুকরে কাঁদছিল। তাঁরা হলেন কুমিল্লার চান্দিনার সরকারি চাকরিজীবী আলাউদ্দিনের স্ত্রী শারমিন ও কন্যা জুলি। আলাউদ্দিন চট্টগ্রামে চাকরি করেন। তাঁদের বাসাও চট্টগ্রামে। বুধবার গ্রামের বাড়ি চান্দিনায় গিয়েছিলেন তাঁরা। শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামের উদ্দেশে বাসে ওঠেন। কিন্তু পথিমধ্যে ফেনীতে যানজটে পড়ে ছয় ঘণ্টা আটকে ছিলেন ফেনীর কাছাকাছি। এর পরও পাঁচ মিনিট চললে এক-দেড় ঘণ্টা জ্যামে থাকতে হয়েছে তাঁদের। মাঝখানে তাঁদের বাসটিও নষ্ট হয়ে যায়। শনিবার সকালে সীতাকুণ্ডের নুনাছড়ায় তাঁরা পৌঁছান। রাতে টয়লেটেও যেতে পারেননি। রাতের খাবারও খেতে পারেননি। পথে এক ব্যক্তি কিছু বিস্কুট দিতে চেয়েছিল। অপরিচিত হওয়ায় সেই বিস্কুটও নেননি। সকালে মেয়েটি ছিল ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর।
যানজটে পড়ে অনেকের বিয়েশাদির মতো অনুষ্ঠানও ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সীতাকুণ্ড পৌর সদরের প্রেমতলার জুয়েলারি ব্যবসায়ী রবি বণিক বলেন, তাঁর প্রতিবেশী একটি মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল শুক্রবার রাতে। দুই পক্ষের অন্তত সাড়ে চার শ অতিথি আমন্ত্রিত ছিল সেখানে। যানজটের কারণে আমন্ত্রিত অতিথিদের বেশির ভাগই আসতে পারেননি। খোদ বর ও কনেকে আনতে হয়েছে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে। বরের মা-বাবা সীতাকুণ্ডের বারআউলিয়া থেকে পৌর সদর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে অনুষ্ঠানে পৌঁছান। আর সাড়ে ৪০০ অতিথির মধ্যে মাত্র ৫০ জন উপস্থিত ছিলেন। এতে সব খাবার নষ্ট হয়ে গেছে। একইভাবে বর আসতে না পারায় দক্ষিণ মহাদেবপুর এলাকার একটি বিয়ে ভেস্তে গেছে এদিন।