রোহিঙ্গা সংকটে চীন ঢাকার সঙ্গে নেই ভারত নমনীয়

susuma

রোহিঙ্গা নিয়ে মিয়ানমারের অবস্থানের সঙ্গে চীনের অবস্থানের সাদৃশ্য আছে। মিয়ানমারের মতো চীনও মনে করে, এ সংকটের ঐতিহাসিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট আছে। বাংলাদেশ ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণসহ দাবি করে আসছে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারেরই এবং রাখাইন রাজ্যেই তারা কয়েক হাজার বছর ধরে বসবাস করছে। কিন্তু এ সত্যটি মানতে নারাজ মিয়ানমার ও চীন। মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল অং মিনসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকেই দাবি করে থাকেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নয়; তারা তৎকালীন ‘বেঙ্গল’ থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গেছে।

এ ক্ষেত্রে ভারতের বর্তমান অবস্থান হচ্ছে রোহিঙ্গাদের মিয়মানমারে ফিরে যাওয়ার মধ্যেই সমাধান নিহিত। শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদির আসন্ন বৈঠকের আগে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আজ বৃহস্পতিবার দুই দিনের মিয়ানমার সফর শুরু করছেন। জানা গেছে, সুষমা স্বরাজের নেপিডো সফরে আঞ্চলিক ইস্যুগুলোর মধ্যে রোহিঙ্গা সংকট বিশেষ গুরুত্ব পাবে।

চীনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতাধর পাঁচ দেশের অন্যতম চীনের শীর্ষ বৈশ্বিক এজেন্ডাগুলোর মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যু নেই। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে কয়েক মাসে দু-একবার বিষয়টি উঠেছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গত নভেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। চীনের প্রত্যাশা, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার আলোচনার মাধ্যমেই এ সংকট সমাধান করবে। রোহিঙ্গা ইস্যুকে পুঁজি করে অন্য কোনো অঞ্চলের কেউ এসে নাক গলাক বা হস্তক্ষেপ করুক, তা চীন চায় না। সাম্প্রতিক সময়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় বাংলাদেশ যে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে, সে বিষয়েও চীন অবগত। তবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া বা মিয়ানমারকে এ সংকট সমাধানে চাপ সৃষ্টি করার ব্যাপারে চীনের সম্মতি নেই।

মিয়ানমারও রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চায়। তবে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয়ভাবে ফল না পেয়ে বিষয়টিকে আন্তর্জাতিকীকরণ করেছে।

জানা গেছে, গত নভেম্বর মাসে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরের পরপরই দুই দেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই করে। এ ক্ষেত্রে চীনের জোরালো ভূমিকা ছিল।

এদিকে আগামী ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সফরকালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেই বৈঠকে প্রস্তাবিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও রোহিঙ্গা ইস্যু বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে।

ভারতীয় সূত্রগুলো জানায়, ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে আগেই আভাস দেওয়া হয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গের সম্মতি ছাড়া ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তা চুক্তি সই করতে চায় না। এ ক্ষেত্রে জট ছড়াতে বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিস্তা চুক্তির বাইরে এখন ভারত বাংলাদেশকে বড় সহযোগিতা করতে পারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে। এই ইস্যুতে ভারতের আগের অবস্থান এখন অনেক বদলেছে। ভারতও আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান চায়। বিশেষ করে, ভারত মনে করে যে রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাওয়ার মধ্যেই এ সংকটের সমাধান হবে। আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের পক্ষেও ভারত অবস্থান নিয়েছে। এ ছাড়া রাখাইন রাজ্য পুনর্গঠন ও রোহিঙ্গাদের ফেরার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতেও ভারত সহযোগিতা দিচ্ছে। সুষমা স্বরাজের নেপিডো সফরে এ সহযোগিতা আরো এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে।