চবির শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধের নেপথ্যে ছাত্রলীগ নেতাদের চাকরি দাবি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভা আগামী ৩১ মে। এই সভার মাধ্যমে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ ১৩ জনের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে চাকরি আদায়ের দাবিতে শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ব্যানারে মুখোশধারী কয়েকজন সন্ত্রাসী।
তারা ট্রেনচালককে তুলে নিয়ে যাওয়ায় গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে কোনো ট্রেন চলাচল করেনি। গতকাল বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী ছাত্রলীগের নামে এই অনাচার ঘটানোর অভিযোগ করেন। শাটল ট্রেন না চলায় বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী।
প্রক্টর মোহাম্মদ আলী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত মঙ্গলবার ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রাকিব হোসাইন ও তার বোন রেজোয়ানা বেনজির বন্যাসহ ১৩ জনের নামের একটি লিস্ট নিয়ে আসে ওই ব্যানারধারীরা। তারা তাদের দাবি পূরণ না হলে ক্যাম্পাস অচল করে দেবে বলে উপাচার্যকে হুমকি দেয়।
একপর্যায়ে তারা বলে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সুপারিশে তারা এই দাবি করেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকা সত্ত্বেও তারা কারো কোনো স্বাক্ষর না নিয়ে ছাত্রলীগের প্যাড ব্যবহার করে আবেদন করে।
মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, উপাচার্য তাদের এ অযৌক্তিক দাবি মেনে না নেওয়ায় মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ষোলশহর স্টেশন থেকে লোকোমাস্টার (ট্রেনচালক) আলী রিয়াজকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ষোলশহর স্টেশনসংলগ্ন ফরেস্ট গেট এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতার শিকার লোকোমাস্টাররা বিশ্ববিদ্যালয় রুটে ট্রেন চালাবেন না বলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। যার ফলে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে চট্টগ্রাম থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য রেলওয়ের কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানিয়েছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট নিরসন, ট্রেনে বগি বৃদ্ধি, প্রশাসনে জামায়াত-শিবিরের নিয়োগ বন্ধসহ আট দফা দাবিতে ২৩ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী’ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে মামুনুর রশীদ মামুন নামে এক শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হলেও এতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি অংশের জোরালো সমর্থন রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ৩১ মের সিন্ডিকেট সভাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনকে চাপে ফেলে নিজেদের দাবি-দাওয়া আদায় করতেই রমজান মাসে এ আকস্মিক অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে।
লোকোমাস্টারকে আটকের বিষয়ে নিশ্চিত করে ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শাহাব উদ্দিন বলেন, রাত পৌনে ৮টার ক্যাম্পাসগামী ট্রেনটি ষোলশহর স্টেশন ছাড়ার আগমুহূর্তে একদল দুর্বৃত্ত লোকোমাস্টার আলী রিয়াজকে ধরে নিয়ে যায়। তার কাছে ট্রেনের চাবি ছিল। ফলে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, লোকোমাস্টাররা নিরাপত্তাহীনতায় ট্রেন চালাবেন না বলে জানিয়েছেন। নিরাপত্তার জন্য রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকেও অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু দুর্বৃত্তরা সংখ্যায় অনেক ও অস্ত্রধারী। তাদের সঙ্গে কেমনে পারবে ওরা।
ট্রেন অবরোধকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না এ প্রশ্নে প্রক্টর বলেন, ‘যারা ট্রেন চলাচল বন্ধ করেছে তারা সবাই বহিরাগত। যার কারণে আমরা কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না। তবে যেসব সন্ত্রাসী ট্রেন চলাচলে বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।