শুনানির অপেক্ষায় রাজন-রাকিব হত্যা মামলা

সিলেটের শিশু রাজন এবং খুলনার শিশু রাকিব হত্যা মামলার আপিল শুনানি এ মাসেই শুরু হতে পারে। এ লক্ষ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব মামলার ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব উদ্যোগে প্রস্তুত করা হয়েছে মামলার পেপারবুক।

চলতি মাসেই হাইকোর্টের এখতিয়ার সম্পন্ন বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য পাঠানো হতে পারে।

এছাড়াও পুলিশের বিশেষ শাখার (রাজনৈতিক) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত তাদেরই মেয়ে ঐশী রহমানের বিরুদ্ধে দেওয়া ফাঁসির রায়ের আপিল শুনানি শুরুর কথাও রয়েছে।

জানা গেছে, গত বছর এই তিনটি মামলার ডেথ রেফারেন্সের নথি হাইকোর্টে আসার পরই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন মামলার পেপারবুক প্রস্তুতের উদ্যোগ গ্রহণ করে। দ্রুতই পেপারবুক তৈরি করা হয়।

প্রস্তুত হওয়া রাজন হত্যা মামলার পেপারবুক ৭০৬ পৃষ্ঠা সম্বলিত। রাকিবের পেপারবুক ৪৩৫ পৃষ্ঠা এবং স্ত্রীসহ পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান (ঐশীর মা-বাবা) হত্যা মামলার পেপারবুক ৭২০ পৃষ্ঠার বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

গত বছর এই তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশবাসীকে স্তম্ভিত করে। এর মধ্যে পুলিশের বিশেষ শাখার (রাজনৈতিক) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয় তাদেরই মেয়ে ঐশী রহমানকে। গত ১২ নভেম্বর ঢাকার একটি আদালত ঐশীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

এছাড়া গত বছরের ৮ জুলাই চুরির অপবাদে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শেখপাড়ায় নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় সিলেটের জালালাবাদ থানা এলাকার বাদেয়ালি গ্রামের সবজি বিক্রেতা শিশু রাজনকে (১৪)।

অপরদিকে গত ৩ আগস্ট বিকালে খুলনার টুটপাড়ায় এক গ্যারেজে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় শিশু রাকিবকে। এসব ঘটনায় দায়ের করা হয় পৃথক হত্যা মামলা। ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে রাজন এবং ১০ কার্যদিবসের মধ্যে রাকিব হত্যার বিচার শেষ করে আদালত। গত ৮ নভেম্বর এই দুই মামলায় বিচারের রায়ে ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত।

উল্লেখ্য, ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) অনুযায়ী বিচারিক আদালতের দেওয়া ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করতে হলে হাইকোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। যা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে থাকেন। আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স একই সঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে।

এ জন্য সংশ্লিষ্ট দায়রা জজ মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্টার বরাবর চিঠি দিয়ে ডেথ রেফারেন্সের নথি প্রেরণ করে থাকেন। এসব নথি প্রেরণের পরই মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। পেপারবুকে মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র, জব্দ তালিকা, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও জেরা, যুক্তিতর্ক ও নিম্ন আদালতের রায়ের পূর্ণাঙ্গ নথি সন্নিবেশিত করা হয়।