পুলিশ থেকে বাঁচতে ডিসির কাছে আবেদন করেছিলেন বাবুল

24dfa7465d386f881e528d72de4af0ee-

পুলিশের হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনারের (ডিসি) কাছে দুই দফায় আবেদন করেছিলেন শাহ-আলীতে আগুনে পুড়ে নিহত চা-দোকানি বাবুল মাতবর(৫০)। প্রথম দফায় কয়েকদিন নিশ্চুপ থাকলেও আবারও তাকে হয়রানি করে পুলিশ।
বিভিন্ন অনুনয় বিনয় করে লেখা এরকম একটি আবেদনের ফটোকপি বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এসেছে।
গত বছরের ১৬ আগস্ট মিরপুর বিভাগের ডিসি মো. কায়ুমুজ্জামানের কাছে এ আবেদনটি দিয়েছিলেন। পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচতে ডিসির কাছে স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ চেয়ে আকুতি করে আবেদনে তিনি লেখেন, ‘আমি বাবুল মাতবর, পিতা মৃত সাদেক মাতবর, সাং গুদারাঘাট, ব্লক-এইচ, রোড নং ৬, কিংশুক এর গেইট, থানা শাহ-আলী, ঢাকা। এই মর্মে আবেদন করিতেছি যে, আমি ইলেকট্রিক্যাল এর কাজসহ যখন যে কাজ পাই তখন সে কাজ করে কোনওরকম পরিবার নিয়ে দিন যাপন করে আসছি। আমি কোনও মাদক খাইও না এবং বিক্রয়ও করি না। লোকমারফত শুনতে পাই আশেপাশের ঘরের লোকজন নাকি মাদক বিক্রয় করে। উক্ত ঘরের মাদক বিক্রেতাদের খুঁজতে এসে পুলিশ আমাকে নানাভাবে হয়রানি করে। গত বছর আমি আপনার অফিসে একটি দরখাস্ত দেওয়ার পর এক বছর থানা-পুলিশ আমাকে হয়রানি করেনি। বর্তমানে আবার থানা-পুলিশ আমাকে হয়রানি করে আসছে। ফলে আমি সবসময় পুলিশের ভয়ে থাকি। থানা পুলিশ অন্যকে খুঁজতে গিয়ে যাতে আমাকে হয়রানি না করে এই বিষয়ে শাহ-আলী থানাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান এবং আমাকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সুযোগদানে আপনা মর্জি হয়। বিনীত বাবুল মাতবর।’

ডিসির কাছে যে আবেদনটি করেছিলেন বাবুল

এই আবেদন করেও বাবুল বাঁচতে পারেননি। বুধবার রাতে শাহ-আলী থানা পুলিশ ও তাদের কথিত সোর্স গুদারাঘাটের ছোট্ট চায়ের দোকানে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তার মৃত্যু হয়। নিহতের ছেলে রাজু বাংলা ট্রিবিউনের কাছে অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ তার বাবাকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।

রাজু বলেন, ‘আমার বাবা বিভিন্ন সময় পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু তিনি বাঁচতে পারেননি। ডিসির কাছে কয়েক দফা আবেদন করার পরও পুলিশ থামেনি।’

এ বিষয়ে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের ডিসি কায়ুমুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আবেদন করে থাকলে আমি নিশ্চয়ই থানায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। তবে তারপরও কোনও ব্যত্যয় ঘটলে সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

নিহত বাবুলের স্বজনদের অভিযোগ, বুধবার রাতে পুলিশের সোর্স দেলোয়ার হোসেন গুদারাঘাট এলাকায় বাবুলের চায়ের দোকানে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন। এসময় বাবুল তাকে কিছুক্ষণ পরে আসতে বললে তিনি উত্তেজিত হয়ে তার কম্প্রেসার চুলায় লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তা বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এতে বাবুল মিয়ার শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা যান বাবুল মাতবর।

পুলিশের দাবি, মাদক ব্যবসায়ীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনা তদন্তে পুলিশের পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তাছাড়া শাহ-আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম শাহীন মণ্ডলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে থাকা অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ সদস্যকেও বরখাস্ত করেছে ডিএমপি। তারা হলেন, মিরপুর শাহ-আলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মমিনুর রহমান, (এসআই) নিয়াজ উদ্দীন মোল্লা, এসআই শ্রীরাম চক্রবর্তী, এএসআই দেবেন্দ্র নাথ ও কনস্টেবল জসিম উদ্দীন।

নিহতের মেয়ে রোকসানা বেগম এ ঘটনায় শাহ-আলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। তবে মামলায় পুলিশের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করা হয়নি। পুলিশ বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন বলে নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন।

রোকসানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পুলিশ রাতের বেলা চাঁদা চাইল। চাঁদা না দিলে থানায় নিয়ে যাবে বলে ভয় দেখালো। এ সময় পুলিশের এক এসআইসহ আরও কয়েকজন ছিল। তারা সাদা মাইক্রোবাস নিয়ে আসছিল, সঙ্গে পুলিশের সোর্স দেলোয়ার ও রবিন ছিল। পুলিশ কার বিরুদ্ধে মামলা করছে আমরা জানি না। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেবে না বলে জানিয়েছে। মাদকব্যবসায়ী পারুল তো পুলিশেরই লোক। তিনি বলেন, পুলিশ ভয় দেখিয়ে নিজেদের নামে কোনও মামলা নেয়নি। আমরা আবার মামলা করবো। এই মামলা মানি না।