তাহের ও ননীর ফাঁসির আদেশ

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নেত্রকোনার আতাউর রহমান ননী ও মো. ওবায়দুল হক তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। বেলা ১২টা ১৮ মিনিটে এই রায় দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার-উল হক এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
ছয়টি অভিযোগের মধ্যে ৩ ও ৫ নম্বর অভিযোগে তাদের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। ১ ও ২ নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ছয়টি অভিযোগের মধ্যে ১, ২, ৩ ও ৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়। বাকি দুটি অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি রাষ্ট্রপক্ষ।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় রায় দিতে শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। ২৬৮ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ পড়া হয়।
গতকাল সোমবার মামলার রায়ের দিন ঘোষণার জন্য ট্রাইব্যুনালের কার্যতালিকায় আনা হয়। পরে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
এর আগে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হওয়ায় ১০ জানুয়ারি থেকে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ায় এটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন আদালত গত ৬ জানুয়ারি অভিযোগভিত্তিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে উভয়পক্ষ। আসামিপক্ষে ননী-তাহেরের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার এবং রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর তার যুক্তিতর্কে দাবি করেন, অভিযুক্ত আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে। এই দুই আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আবেদন জানান তিনি।
গত বছরের ৫ এপ্রিল প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তাহের-ননীর বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ২ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা,গণহত্যা, অপহরণ, দেশান্তরিতকরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।
ননী-তাহেরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তাসহ প্রসিকিউশনের ২৩ জন সাক্ষী। অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে একজন সাফাই সাক্ষীর নাম দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সাক্ষীকে হাজির করতে পারেননি তারা।
২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বর তাহের-ননীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ৪ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে ৬৩ পৃষ্ঠার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। মামলাটি তদন্ত করেছেন তদন্ত সংস্থার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর।
২০১৪ সালের ১২ আগস্ট তাহের ও ননীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-১। এর পরপরই নেত্রকোনা পৌর শহর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ১৩ আগস্ট ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তাদেরকে কারাগারে পাঠান ট্রাইব্যুনাল।