তাহের-ননীর যুদ্ধাপরাধের রায় মঙ্গলবার

taher-noni_ED

নেত্রকোণার মো. ওবায়দুল হক ওরফে আবু তাহের ও আতাউর রহমান ননীর যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় জানা যাবে মঙ্গলবার।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নিরস্ত্র মানুষকে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ এবং হত্যার ছয় অভিযোগ রয়েছে এই দুই আসামির বিরুদ্ধে।

বিচারপতি আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার সকালে এ মামলার রায় ঘোষণা করবে। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী।

২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর এটি হবে দ্বাবিংশতম রায়।

দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে আদালত গত ১০ জানুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রেখেছিল। সোমবার ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম ঝিনুক বিডিনিউজ টোযেন্টিফোর ডটকমকে জানান, আদালত মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করবে।

গতবছর ২ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচার শুরু হয় ট্রাইব্যুনালে। হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, দেশান্তরে বাধ্য করা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ছয়টি অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।

২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। প্রসিকিউশনের পক্ষে মোট ২৩ জন জবানবন্দি উপস্থাপন করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষ একজন সাফাই সাক্ষীর নাম দিলেও তাকে তারা হাজির করতে পারেনি।

৪ জানুয়ারি থেকে চার দিন দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে। প্রসিকিউশনের পক্ষে এ মামলায় শুনানি করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নী। আসামিপক্ষে ছিলেন আব্দুস সোবাহান তরফদার ও গাজি এম এইচ তামিম।

প্রসিকিউটর বাদল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসামিদের বিরুদ্ধে আনা ছয় অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতে ১৫ জনকে হত্যার দায়ে দুই আসামির সর্বোচ্চ সাজা আশা করছি আমরা। তবে ষষ্ঠ চার্জের পক্ষে সাক্ষী আনা যায়নি।”

 

অন্যদিকে আসামিপক্ষের কৌঁসুলি আব্দুস সোবাহান তরফদার বলেছেন, তাহের ও ননী খালাস পাবেন বলেই তার বিশ্বাস।

নেত্রোকোণার মুক্তিযোদ্ধা আলী রেজা কাঞ্চন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১০ সালে ননী ও তাহেরসহ ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করলে পরে বিষয়টি ট্রাইব্যুনালে আসে।

২০১৩ সালের ৬ জুন এ দুই আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থা। এক বছর চার মাস ২৮ দিন তদন্তের পরে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর দেওয়া হয় ৬৩ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন।

প্রসিকিউশনের আবেদনে আদালত পরোয়ানা জারি করলে ওইবছর ১২ অগাস্ট দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে নেত্রকোণার পুলিশ। পরদিন তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পাঠানো হয় কারাগারে।

প্রসিকিউশন এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর ২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বর দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। এরপর গতবছর ২ মার্চ এ মামলায়ি অভিযোগ গঠন হয়।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাহের ও ননী বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করতে গঠিত রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় নেত্রকোনা জেলা সদর ও বারহাট্টা থানাসহ বিভিন্ন এলাকায় মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য তারা ‘কুখ্যাত রাজাকার’ হিসেবে পরিচিতি পান বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

এদের মধ্যে তাহের স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে ননীসহ অন্যান্য রাজাকার সদস্যদের নিয়ে নেত্রকোনা শহরের মোক্তার পাড়ার বলয় বিশ্বাসের বাড়ি দখল করে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করেছিলেন বলে প্রসিকিউশনের তথ্য।