কবি শামসুর রাহমান হত্যাচেষ্টা মামলা পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ

Shamsur-Rahman

সতের বছর আগে কবি শামসুর রাহমানকে হত্যাচেষ্টায় ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে আদালতে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় সাক্ষীর অভাবে ২০০৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সাত আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এই মামলার কার্যক্রম।

এর দুই বছর পর ১৭ অগাস্ট অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শামসুর রাহমান, যিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

১৯৯৯ সালের ১৮ জানুয়ারি শামসুর রাহমানের রাজধানীর শ্যামলীর বাড়িতে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে আঘাত করে একদল দুর্বৃত্ত; এতে গুরুতর জখম হলেও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি।

এ ঘটনায় কবির পরিবারের পক্ষ থেকে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করা হয়। যাতে বলা হয়, আসামিরা বেআইনিভাবে ঘরে ঢুকে খুন করার উদ্দেশ্যে শামসুর রাহমানকে জখম করে।

মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার শামসুর রাহমানের উপর হামলার সময় বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি প্রকাশ্য ছিল না। এর পাঁচ বছর পর লেখক-অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের উপর হামলার সময়ও প্রকাশ্যে আসেনি বিষয়টি।

২০০৫ সালের ১৭ অগাস্ট একযোগে সারাদেশে বোমা হামলা চালিয়ে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি নিজেদের ‍উপস্থিতির প্রকাশ্য ঘোষণা দেয়। এরপর আগের বিভিন্ন হামলার তদন্তেও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলতে থাকে।

ঢাকার আদালত পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী কমিশনার মিরাশ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ধর্মীয় মৌলবাদী জঙ্গি ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে নাশকতা সৃষ্টিকারীদের তালিকা করতে গিয়ে আলোচিত ও স্পর্শকাতর এ মামলা ঢাকার আদালত পুলিশের নজরে আসে।

মামলাটি তদন্তের পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তৎকালীন এএসপি আব্দুল কাহহার আকন্দ ১৯৯৯ সালের ৮ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন।

অভিযোগপত্রে এ সাত আসামিকেই উগ্রপন্থি ধর্মীয় মৌলবাদী বলে আখ্যায়িত করা হয়, যাদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তারও করেছিল পুলিশ।

ওই সময় গ্রেপ্তার হওয়া চার আসামি হলেন- কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মৃত মহিউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মো. মাহতাব উদ্দিন, হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার ডা. এ কে আ. আজিজের ছেলে ফজলে এলাহী আহসান ওরফে হাছান, খুলনার রূপসা উপজেলার শেখ আকরাম হোসেনের ছেলে মো. মোজাম্মেল হোসেন এবং বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার মো. তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মো. তারেক আজিজ।

পলাতক তিন আসামি হলেন- ঢাকার রামপুরা এলাকার শেখ আকরাম হোসেনের ছেলে মো. শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, জসীম উদ্দিনের ছেলে নাজিম ওরফে নাসির উদ্দিন এবং আব্দুর রহমান, নোয়াখালীর পরশুরাম উপজেলার শফিকুর রহমান।

এ ছাড়াও এ মামলায় আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় আদালতে।

আদালত পুলিশের কর্মকর্তা মিরাশ উদ্দিন বলেন, “ধর্মীয় মৌলবাদী জঙ্গি ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড জড়িত নাশকতা সৃষ্টিকারীদের তালিকা করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। প্রসিকিউশন বিভাগ থেকে আমরা সাহায্য করছি।

“এ সময় আলোচিত ও স্পর্শকাতর এ মামলাটির বিষয় ঢাকার আদালত পুলিশের নজরে আসে।”

এ মামলা সম্পর্কে তথ্য উদঘাটন করতে অন্তত তিন মাস সময় লাগে জানিয়ে মিরাশ বলেন, “আমি নিজ উদ্যোগে মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানা কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাই মামলাটির পরিণতি সম্পর্কে। পরে মামলার নম্বর জানা যায় ।”

মোহাম্মপুর থানায় দণ্ডবিধির ৪৪৮, ৩২৪, ৩০৭, ১০৯/৩৪ ধারায় এ মামলা করা হয় জানিয়ে এই সহকারী পুলিশ কমিশনার বলেন, “আমরা ২০০৪ সালের মামলার নিবন্ধন খাতা (রেজিস্ট্রার) খুঁজে পেয়েছি। মামলার কাগজপত্রও পেয়ে যাব। আমরা মামলাটির বাদীকেও খুঁজছি।

“আমি এখন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য অনুমতি চাইব। অনুমতি পেলেই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলা পুনরায় চালুর আবেদন করব।”

মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে আইনি কোনো বাধা নেই বলে মনে করেন ঢাকার আদালতে ফৌজদারি মামলায় অভিজ্ঞ আইনজীবী আমিনুল গণী টিটো।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেরিতে হলেও মামলা আবার চালু করার যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারলে অবশ্যই আদালত আবারও বিচার শুরু করার নির্দেশ দিতে পারে।”