হিলারি ও ট্রাম্পের বিশাল জয়

নিজের জনসভায় বিপুল সমাগম দেখে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স আশা করেছিলেন, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে সরাসরি জয় না পেলেও হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে সমানে সমানে লড়বেন তিনি।

অন্যদিকে, রিপাবলিকান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে সিনেটর টেড ক্রুজ ও গভর্নর জন কেইসিকের চেষ্টা ছিল ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঠেকাতে না পারলেও তাঁর মোট ভোটের পরিমাণ ৫০ শতাংশের নিচে রাখা।

নিউইয়র্কের ভোটাররা দুই হিসাবকেই ভুল প্রমাণ করেছেন। হিলারি ও ট্রাম্প দুজনই মোট ভোটের প্রায় ৬০ শতাংশ দখল করে স্যান্ডার্স ও ক্রুজের বিজয়রথ থামিয়ে দিয়েছেন।

মোট ডেলিগেটের হিসাবে হিলারি এখন কার্যত স্যান্ডার্সের নাগালের বাইরে। একই কথা ট্রাম্পের ক্ষেত্রে বলা না গেলেও আগামী জুলাই মাসের দলীয় সম্মেলনে তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা যে এখন অনেক বেশি উজ্জ্বল, সে কথায় কোনো অত্যুক্তি নেই।

নিউইয়র্ক শহরের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় গোলযোগের কারণে কয়েক হাজার মানুষ ভোট দিতে সক্ষম হননি। নির্বাচনী বোর্ড থেকে জানানো হয়েছে, কম্পিউটারে রক্ষিত তালিকা থেকে তাঁদের নাম মুছে গেছে। এমন ঘটনা কেন ঘটল, তা নিয়ে তদন্তের দারি করেছেন নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাজিও।

স্যান্ডার্স দাবি করেছেন, ওই গোলযোগের কারণে তাঁর সমর্থকেরা ভোট দিতে সক্ষম হননি।

ডেমোক্রেটিক পার্টির নিয়ম অনুসারে শুধু নিবন্ধিত ডেমোক্র্যাটরাই এই প্রাইমারি ভোটে অংশ নিতে সক্ষম হন—এই নিয়মেরও তীব্র সমালোচনা করেছেন স্যান্ডার্স। তাঁর সমর্থকদের একটা বড় অংশ স্বতন্ত্র, যাঁদের কোনো দলীয় আনুগত্য নেই। যেসব তরুণের সমর্থনে তিনি ‘রাজনৈতিক বিপ্লব’ শুরুর কথা বলেছেন, তাঁদের অধিকাংশই সময়মতো ভোটার তালিকাভুক্ত হননি। ফলে তাঁর সমর্থকদের একটা বড় অংশ ভোট দিতে ব্যর্থ হয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্সবিতর্ক সত্ত্বেও যে বিপুল ব্যবধানে হিলারি নিউইয়র্কে জয় পেয়েছেন, এর গুরুত্ব খাটো করে দেখা অসম্ভব। আগের নয়টি প্রাইমারির মধ্যে আটটিতে স্যান্ডার্স জয়লাভ করে হিলারি শিবিরে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন।

হিলারি শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন নিশ্চিত করতে পারবেন কি না, দলীয় নেতৃত্বে সেই প্রশ্নও ওঠা শুরু হয়েছিল। এখন, অন্ততপক্ষে অন্য বড় কোনা বিপর্যয় দেখা না দিলে, ওই প্রশ্ন আর উঠবে বলে মনে হয় না।

নিউইয়র্কে বিজয়ের ফলে হিলারি এখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবেন। একই সঙ্গে মূল নির্বাচনে তাঁর রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে মনোযোগ দেওয়ারও সুযোগ পাবেন।

নিজের বিজয় ভাষণে হিলারি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান নিউইয়র্কের ভোটারদের। উল্লসিত সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি সারা দেশে বিভিন্ন নির্বাচনে জয়লাভ করেছি। কিন্তু নিজ ঘরে জয় পাওয়ার যে আনন্দ, তার কোনো তুলনা নেই।’

হার্লেমের একটি ভোটকেন্দ্র। ছবি: প্রথম আলোট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে হিলারি বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি মানুষের মধ্যে বিভেদের পরিবর্তে সম্প্রীতি গড়ার কাজে মন দেবেন।

প্রায় একই ভাষায় নিজের সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প। সহাস্যে তিনি বলেন, ‘বলতে পারেন, আজকের বিজয়ের পর আর তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাকি থাকল না।’

দলীয় সম্মেলনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে যে ১ হাজার ২৩৭ ডেলিগেটের সমর্থন প্রয়োজন, তা অবশ্যই লাভ করবেন—এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন ট্রাম্প।

দলীয় সম্মেলনে মনোনয়নপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করার যেকোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, তেমন কোনো অপচেষ্টা হলে দাঙ্গা বাধবে।

নিউইয়র্কে বিজয়ের ভাষণে ওই কথার পুনরাবৃত্তি না করলেও ট্রাম্প তাঁর দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তির ব্যাপারে প্রবল আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করেন।

ট্রাম্পের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রুজ। তাঁর তুলনায় ট্রাম্পের বাক্সে তিন শর বেশি ডেলিগেট রয়েছে। বিজয় ভাষণে সে কথা স্মরণ করিয়ে দেন ট্রাম্প।

অধিকাংশ ভাষ্যকারই একমত যে পূর্বাঞ্চলের যে পাঁচটি অঙ্গরাজ্যে (পেনসিলভানিয়া, নিউজার্সি, মেরিল্যান্ড, রোড আইল্যান্ড ও ডেলাওয়ার) ২৬ এপ্রিল প্রাইমারি নির্বাচন হবে, তার অধিকাংশই ট্রাম্পের কবজায় যাবে। জনমত জরিপে ক্রুজ ও কেইসিকের তুলনায় বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প।

একই ধরনের আশা প্রকাশ করেছেন হিলারি। পূর্বাঞ্চলের ওই অঙ্গরাজ্যগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আফ্রিকান-আমেরিকান ও হিস্পানিক অভিবাসীদের সমর্থনে তিনি নিউইয়র্কের ফলাফল পুনরাবৃত্তির আশা করছেন।

নিউইয়র্কে হিলারির সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিল সব বর্ণের পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীদের মধ্যে তাঁর বিপুল সমর্থন।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে প্রথম আলোসহ নিউইয়র্কে অবস্থানরত বিদেশি সাংবাদিকদের একটি দল কৃষ্ণকায়-প্রধান হার্লেমের একটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে। সে সময় যাঁরা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা প্রায় সবাই আফ্রিকান-আমেরিকান নারী। কথা বলে জানা যায়, তাঁদের প্রায় সবাই হিলারির সমর্থক। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী, এখানে ভোট দিতে কারও কোনো পরিচয়পত্র দেখানোর প্রয়োজন ছিল না। তবে ভোটার তালিকায় নাম-ঠিকানা নথিবদ্ধ থাকতে হবে। ভোটকেন্দ্রের মুখে বিভিন্ন ভাষায় নির্বাচনসংক্রান্ত তথ্য ও দোভাষীর