সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জঙ্গি থেকে সাবধান

social

ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে কীভাবে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের মাথা বিগড়ে দিচ্ছে, তা তুলে ধরেছেন যুক্তরাজ্যের এক স্কুলশিক্ষক। তিনি বার্মিংহামের ওয়েভারলি স্কুলের অধ্যক্ষ কামাল হানিফ। জঙ্গিরা কীভাবে এসব শিশু-কিশোরকে বিপথগামী করছে, তা তিনি এক দল অভিভাবকের কাছে ব্যাখ্যা করেন। এই অভিভাবকেরা মুসলিম পরিবারের এবং শিক্ষার্থীদের মা।

হানিফ বলেন, সন্তান সম্পর্কে অজ্ঞতা হচ্ছে জঙ্গিদের হাতিয়ার। অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি সন্তানের সঙ্গে মন খুলে কথা না বলেন, না মেশেন, তাহলে তারা গোল্লায় যাবে।’

হানিফের অবস্থান বেশ ভালো। বছর দশেক আগে তিনি বার্মিংহামের একটি উচ্চবিদ্যালয়ে প্রথম মুসলিম প্রধান শিক্ষক হন। তাঁর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ওয়েভারলি স্কুলের এই সুনাম রয়েছে যে, সেখানকার শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদ থেকে নিরাপদে রয়েছে। অথচ এটা সুবিধাবঞ্চিত একটি এলাকা। ২০১৩ সালে পুলিশের প্রতিবেদনে যেসব এলাকা সহিংস জঙ্গিবাদের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উল্লেখ করা হয়, এর মধ্যে হানিফের ওই এলাকা রয়েছে।
কট্টরপন্থী ইসলামি জঙ্গিদের একটি ষড়যন্ত্রের কথা জানার পর স্থানীয় অন্যান্য স্কুলের সংস্কারে সহায়তার জন্য হানিফকে ডাকা হয়।

যুক্তরাজ্যের স্কুলগুলোর সব শিক্ষকেরই এখন আইনগত বাধ্যবাধকতা হচ্ছে, জঙ্গি তৎপরতা ঠেকাতে বাইরের দিকে সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখা। হানিফ তাঁর অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে গোটা যুক্তরাজ্য সফর করছেন। এর ফলাফল ভালোমন্দ দুটোই হতে পারে।

যুক্তরাজ্য সরকারের তথ্যমতে, দেশটি থেকে কমপক্ষে ৭০০ জন নাগরিক আইএসকে সহায়তা করতে বা তাদের পক্ষে লড়তে সিরিয়া ও ইরাকে পাড়ি জমিয়েছে। গত জুলাইয়ে এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন আক্ষেপ করে বলেন, এই দেশ এক বেদনাদায়ক সত্যের মুখোমুখি। এ দেশে কিছু মানুষ জন্ম নেয় এবং বড় হয়, যাদের যুক্তরাজ্যের মানুষ বলে শনাক্ত করা যায় না।

নতুন আইন অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা যাতে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঝুঁকে না পড়ে, সেদিকে অবশ্যই স্কুলগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে।

উগ্রপন্থীরা কীভাবে শিশু-কিশোরদের প্রলুব্ধ করে দলে ভেড়ায়, এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়েছেন হানিফ। প্রথমত, জঙ্গি দলে টানার জন্য তারা তাদের বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমে সফল হওয়ার চিত্র দেখায়। এরপর তারা বিভিন্ন ধরনের সহানুভূতিমূলক কথা বলে বা বন্ধুত্ব তৈরি করে শিশু-কিশোরদের মধ্যে সমাজের প্রতি বিতৃষ্ণা জাগায় বা সমাজ ত্যাগ করার তাগিদ সৃষ্টি করে। অনেকে উপহার পাঠায়। আবার অনেকে সিরিয়ার শিশুদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে বলে তাদের বাঁচানো তোমারও দায়িত্ব।
আর বড় যে কাজটি করে, তা হলো ‘গোপন কথা বিনিময়’; যা একজন মানুষকে তাঁর বন্ধু ও পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে সাহস জোগায়।

নতুন আইন অনুযায়ী শিক্ষকেরা কারও মধ্যে এ ধরনের লক্ষণ দেখলে তা অবশ্যই সরকারকে জানাতে হবে। গত বছর ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমন উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৬০০টি।

পূর্ব লন্ডনের একটি কলেজের শিক্ষক রব ফার্গুসন। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এ আইন মানসিক সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। উদাহরণ টেনে বলেন তাঁর এক বন্ধু বলেছে, তাঁর ছেলে এখন ‘অনেক বেশি ফিলিস্তিন নিয়ে কথা বলে।’ এটা হচ্ছে বাস্তবচিত্র। একদিকে নিজে থেকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলা হচ্ছে, আবার অন্যদিকে উন্মুক্ত আলোচনা করতে মানুষ ভয় পাচ্ছে।

তবে হানিফ এসব উদ্বেগের কথা তুলে ধরে বলেন, মনে করা হচ্ছে এ আইন মুসলিমদের একঘরে করে দেবে। এটা অনেকটা এমন যেন সাম্যবাদের বিতর্ক ফিরে আসার মতো। তিনি বলেন, স্কুলগুলো যদি সঠিক পথ অনুসরণ করে, তাহলে নতুন এ আইন কাজে আসবে। স্কুলগুলো এই আইনকে কীভাবে কাজে লাগায়, এটাই দেখার বিষয়। যদি ব্যাপারটা এমন যে শুধু লক্ষণগুলো (সন্ত্রাসী মনোভাব) চিহ্নিত করবে, তাহলে তা কোনো কাজে আসবে না। বিবিসি অবলম্বনে