সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ব্যাপারে কড়াকড়ি

সিঙ্গাপুরে কাজের অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে বেশি কড়াকড়ি এবং দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমিকদের। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও পোহাতে হচ্ছে বাড়তি ঝামেলা। গত বছর ২৭ জন বাংলাদেশি শ্রমিককে জঙ্গি সন্দেহে আটকের পর থেকেই কড়াকড়ির বিধান জারি করা হয়। সিঙ্গাপুরের সরকারি কর্তৃপক্ষ কড়াকড়ির বিধান জারির বিষয়টি নিয়ে নীরব। তবে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, কড়াকড়ির পর সিঙ্গাপুরে কাজ পেতে বাংলাদেশিদের আবেদনের সংখ্যা কমে গেছে। বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে জঙ্গিবাদের সংযোগের অভিযোগ ওঠায় নিজেদের উদ্বেগের কথাও জানিয়েছেন তারা।

গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে ২৭ জন উগ্রপন্থী বাংলাদেশিকে আটক করে সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ। স্ট্রেইট টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ওই সময় (গত বছরের  শেষের দিক) থেকেই আবেদনপত্রে বাংলাদেশি শ্রমিকদেরকে বাবা মায়ের নাম, বসবাসের এলাকার বিস্তারিত তথ্যসহ বেশ কিছু অতিরিক্ত তথ্য যুক্ত করতে হচ্ছে। সিঙ্গাপুরের নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান কে এফ এমপ্লয়মেন্ট কনসালট্যান্টসের মালিক কেন্ট নগ বলেন, ‘আমাদেরকে বলা হয়েছে শ্রমিকদের পারিবারিক ইতিহাসের তথ্য আরও বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করতে।’

নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিরিক্ত তথ্যের নতুন বিধান মেনে চলতে হচ্ছে ঠিকই, তবে সরকারের তরফে এই কড়াকড়ির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। বরং গত ৩ মে (মঙ্গলবার) সিঙ্গাপুরে আরও ৮ বাংলাদেশিকে আটকের পর দেশটির জনসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের জন্য অনুমোদিত শ্রমিক উৎসের দেশ হিসেবেই থাকছে। সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোর সঙ্গে পরামর্শের মাধ্যমে এটি ওয়ার্ক পাসের আবেদন মূল্যায়ন ও অনুমোদন করে থাকে।’

Singapore+Arrestee

নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান কে এফ এমপ্লয়মেন্ট কনসালট্যান্টসের মালিক কেন্ট নগ জানাচ্ছেন, ‘সিঙ্গাপুরে বেশিরভাগ বাংলাদেশি শ্রমিককে কঠোর পরিশ্রমী ও ভালো মানুষ বলে বিবেচনা করা হয়।’ তবে সেই বাস্তবতার যে বদল ঘটেছে তা টের পাওয়া যায় অন্য এক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যে। পিপল ওয়ার্ল্ডওয়াইড কনসালটিং নামক এজেন্সির কর্মকর্তা ডেভিড লিয়ং স্ট্রেইট টাইমসকে জানান, গত ১২ মাসে বাংলাদেশি শ্রমিকদের আবেদনের সংখ্যা অনেক কমে গেছে।

অতিরিক্ত তথ্যের বিধানের কথা বলতে গিয়ে স্ট্রেইট টাইমসকে জঙ্গিবাদ নিয়ে নিজেদের ভাবনার কথাও জানিয়েছে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এদের কেউ কেউ বলছে, জঙ্গি শ্রমিকদের শনাক্ত করতে অতিরিক্ত স্ক্রিনিং পরীক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তবে সে পরীক্ষাগুলো কী ধরনের হতে পারে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি তারা।

জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় শ্রমিক উৎসের দেশগুলোতে বিভিন্ন শিক্ষামূলক বার্তা প্রচারের পরামর্শ দিয়েছেন  সিঙ্গাপুরে ২৩ বছর ধরে এজেন্ট হিসেবে নিয়োজিত জন লিউ। তবে এ ধরনের ব্যবস্থায় কাজ হয় না বরে মনে করেন এজেন্ট জি এইচ ফং। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। কিন্তু শ্রমিকরা যেসব মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করেন তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের কোনও সুযোগতো আমাদের নেই।’

কেএসপি এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির প্রতিষ্ঠাতা জ্যাকি লি পরামর্শ দিয়েছেন সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগেই যেন স্কাইপের মাধ্যমে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না তার শিক্ষা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘যদি কোনও উগ্রপন্থী শ্রমিক এখানে আসেন তবে তা সকলের জন্যই খারাপ হবে। এতে করে সিঙ্গাপুরের মানুষ বাংলাদেশিদের নেতিবাচকভাবে দেখা শুরু করতে পারেন যা অন্য শ্রমিকদের প্রতি অন্যায় আচরণ হবে।’

উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরের নির্মাণ খাত, নৌ খাত ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুটি উৎস-দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। তবে কখনও কখনও বাংলাদেশি শ্রমিকদের তুলনায় ভারতীয় শ্রমিকদের বেশি মজুরি দেওয়া হয়ে থাকে। জঙ্গিবাদের পাশাপাশি এই প্রবণতাও বাংলাদেশি শ্রমিকদের সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।