৫০০ কোটি টাকার চামড়া অবিক্রীত

o
বিপুল পরিমাণ মজুদ নিয়ে আরেকটি ঈদে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতিতে নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। গত বছরজুড়ে সংগ্রহ করা চামড়ার মধ্যে যদিও এখন পর্যন্ত ৫০০ কোটি টাকার চামড়া রয়ে গেছে ছোট-বড় ৫৫ ট্যানারির হাতে। ছয় মাস ধওে দেশে-বিদেশে চাহিদা কমে যাওয়ায় ফিনিশড্‌ চামড়া বিক্রিতে এমন বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। তবুও গতবারের খারাপ অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে এবার কোরবানির পশুর চামড়া কেনা নিয়ে পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

ঈদুল আজহার বাকি আর তিন সপ্তাহ। বছরজুড়ে সংগ্রহ করা চামড়ার মধ্যে অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির পশু থেকে। তাই ঈদের সময়কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবার সরকারও অর্থসংকট কাটাতে ঋণের শর্ত শিথিল করেছে। এতে অনেকের বিশেষ করে খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন করে চামড়া কেনার পথ সুগম হবে। অর্থায়নের পাশাপাশি খাত-সংশ্লিষ্টরা অবশ্য সংকট থেকে উত্তরণে রপ্তানি বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করেন। এ জন্য সাভারে চামড়া শিল্প নগরীকে আরও কমপল্গায়েন্স হিসেবে দেখতে চান তারা।

দর নিয়ে বিপর্যয়ের কারণে গত বছর অন্যান্যবারের চেয়ে কিছুটা কম চামড়া সংগ্রহ হয়। সব মিলে বছরজুড়ে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার চামড়া কেনে ট্যানারিগুলো। তবে বিভিন্ন কারণে গত অর্থবছরজুড়ে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। এরমধ্যে বর্জ্য দূষণের অভিযোগ তুলে অনেক বিদেশি ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে রপ্তানি কমে যায় অনেক। এরপর করোনায় সংকট আরও জটিল হয়ে পড়ে। প্রাণঘাতী মহামারির প্রাদুর্ভাবে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যিক কার্যক্রমসহ উৎপাদন ও রপ্তানি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ছয় মাস ধওে বেচাকেনায় ধস নামায় মজুদ ৫০০ কোটি টাকায় ঠেকেছে বলে দাবি ট্যানারি মালিকদের।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, মজুদ চামড়ার পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতি ঈদের সময় চামড়া সংগ্রহকে কঠিন করে তুলবে। অনেকের দাবি, প্রায় প্রতিবারই চামড়া কিনে লোকসানে পড়তে হয় তাদের। এর সঙ্গে উচ্চ সুদ যোগ হওয়ায় ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য নেই অনেকের। এবারও কেনার পর যদি বিক্রি করতে না পারেন তাহলে পথে বসবেন অনেকে। তাই রয়েসয়ে এগোতে চান তারা। এ জন্য সবার আগে রপ্তানির দুয়ার খুলতে শিল্প নগরীকে দ্রুত কমপল্গায়েন্স করার দাবি তাদের। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ চান তারা।

কোরবানির চামড়া সংগ্রহে পরামর্শ : করোনা ঝুঁকির কারণে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ কমবে বলে মনে করছেন অনেকে। তারা বলেন, চামড়া সংগ্রহের মূল ভরসা কাঁচা চামড়ার ছোট আড়তদাররা। এ জন্য বকেয়া নিয়ে ট্যানারি ও আড়তদারদের বিরোধ নিষ্পত্তি জরুরি। গত বছর এ কারণেই বিপর্যয় নেমেছিল। আড়তদারদের পাওনা পরিশোধে গত বছর এফবিসিসিআই উদ্যোগ নিলেও ট্যানারি মালিকরা বকেয়ার মাত্র ১০ শতাংশ পরিশোধ করেছেন। তাই পাওনা দ্রুত পরিশোধের দাবি জানিয়েছে আড়তদারদের সংগঠনগুলো।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, ট্যানারিগুলোতে অর্ধেকের বেশি চামড়া এখনও পড়ে আছে। এ অবস্থায় গত বছরের ঋণের টাকা পরিশোধ হয়নি। উল্টো নতুন করে চামড়া কেনা সম্ভব হবে না। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ সুবিধা দিলেও তা তেমন কাজে আসবে না। কেননা, আগের ঋণের দুই শতাংশ পরিশোধ করে পুনঃতফসিলের সামর্থ্য নেই অনেকের। তাই এবারও অর্থসংকট দেখা দেবে বলে তার আশঙ্কা। তার দাবি অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।

শাহীন আহমেদ বলেন, ট্যানারির মরণব্যাধি বর্জ্য দূষণ। এর সমাধান এখন পর্যন্ত দিতে পারেনি বিসিক। ফলে দ্রুত এর সমাধান করে এলডব্লিউজি সনদ নেওয়ার ব্যবস্থা না করলে এ খাত সংকট থেকে বের হতে পারবে না।

উদ্যোক্তারা বলেন, পুরোপুরি দূষণ রোধ না হওয়ায় শিল্প নগরী আন্তর্জাতিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সনদ নিতে পারেনি। এ সনদ না পেলে রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ ও এ খাতের স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে না।

বিটিএ সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উলল্গাহ করোনা পরিস্থিতিতে ভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়েছন। তিনি কোরবানি দাতাকে চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণের পরামর্শ দেন। এতে গত বছরের মতো চামড়া নষ্ট হবে না এবং দাম ভালো মিলবে বলে মনে করেন তিনি।

শিল্প নগরীতে বর্জ্য দূষণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) উন্নতি হয়েছে বলে টাস্কফোর্স কমিটির কাছে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান মোশতাক হাসান। তিনি বলেন, সিইটিপি থেকে এখন আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী বর্জ্য পরিশোধন হচ্ছে। শুধু কঠিন বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কোরবানির চামড়ার বর্জ্য অস্থায়ী ডাম্পিং ইয়ার্ডে রাখার ব্যবস্থা আছে বলে জানান তিনি।