বাণিজ্যের নতুন খাতে গুরুত্ব বাংলাদেশ-ভারতের
পুরোনো সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন খাত চিহ্নিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ঢাকা-দিল্লি বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক শুরু হচ্ছে আগামী বুধবার। নয়াদিল্লিতে দুই দিনের এ বৈঠকে বাণিজ্য বাড়াতে গত বছর হাতে নেওয়া সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি প্রাধান্য পাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা আমাদের প্রতিবেদককে বলেন, এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের বাণিজ্য কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হবে বৈঠকে। এ ছাড়া সহযোগিতার নতুন নতুন খাত চিহ্নিত করা হবে। বাণিজ্য বাড়াতে কোন কোন খাতে সম্ভাবনা আছে, সে বিষয়ে একটি যৌথ সমীক্ষার প্রস্তাব করা হবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। ওই সমীক্ষা অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনার পাশাপাশি বাণিজ্য বাড়াতে প্রতিবন্ধকগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন খাত চিহ্নিত করার বিষয়ে আলোচনা হবে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রতিবছর বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। গত বছরের বৈঠক হয় ফেব্রুয়ারিতে।
এবার বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে যোগ দেবে। এ বৈঠকের আগে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সচিব পর্যায়ের বৈঠকের আলোচনার বিষয়গুলো ঠিক করতে ওয়ার্কিং কমিটি প্রস্তুতিমূলক সভা করে। এখানেও উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যবিষয়ক অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
সূত্র জানায়, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে নতুন করে কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) বা সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সই হয় গত বছর। এই চুক্তির মূল লক্ষ্য হচ্ছে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন। আসন্ন বৈঠকে এ বিষয় আলোচনায় টপ এজেন্ডায় থাকবে।
বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, বর্ডার হাটের কার্যক্রম পর্যালোচনা ও নতুন বর্ডার হাট স্থাপন, বিএসটিআইর সার্টিফিকেটের স্বীকৃতি প্রদান, ভারত কর্তৃক কতিপয় বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক্ক আরোপ, আমদানি-রপ্তানি-সংক্রান্ত বাণিজ্য বিরোধ ও জটিলতা দূর করাসহ বাণিজ্য সম্প্রসারণে অন্যান্য বাধা নিয়ে আলোচনা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাফটার আওতায় বাংলাদেশের বেশিরভাগ পণ্যে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হলেও কিছু কিছু পণ্য রপ্তানিতে সমস্যা হচ্ছে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব সমস্যা দূর করতে সহযোগিতা চাওয়া হবে।
বৈঠকে বর্ডার হাটের বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে। সীমান্ত বাণিজ্য সুবিধা আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে কৌশল নির্ধারণ করা হবে। সূত্র বলেছে, সীমান্ত এলাকায় বৈধ বাণিজ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে ২২টি বর্ডার হাট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে দুই দেশের। হাটে বেচাকেনার জন্য পণ্য সংখ্যা ৪৭ থেকে বাড়িয়ে ৬০টি করা হতে পারে। বর্তমানে কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ, ফেনী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে চারটি বর্ডার হাট চালু রয়েছে। আরও ছয়টি বর্ডার হাট চালু করার বিষয়ে আলোচনা হবে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ভারতের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়লেও দুই দেশের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে এখনও। এই ঘাটতি কমাতে হলে ভারতের বাজারে আরও রপ্তানি বাড়াতে হবে। এ জন্য ট্যারিফ, নন-ট্যারিফ বাধাগুলো দূর করতে হবে। খাদ্যপণ্যের টেস্ট প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের ভেতরে আরও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে ভারতের।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ১০ শতাংশ এককভাবে ভারতের সঙ্গে হয়ে থাকে। গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) দুই দেশের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ৮৯০ কোটি ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয় মাত্র ১২৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৭৬৫ কোটি ডলার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ভারত। বাণিজ্য ভারসাম্য প্রতিবেশী দেশটির পক্ষে থাকলেও সেখানকার বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। এ বৈঠকে এ বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে।