বাণিজ্য বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধিতে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই: রাষ্ট্রপতি
বাণিজ্য বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি নিয়ে ‘আত্মতুষ্টি’ না দেখিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন ও জীবনমান উন্নয়নে নজর দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বৃহস্পতিবার ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস’ উপলক্ষে রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “পোশাক শিল্প, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের বর্তমান সাফল্যে আমাদের আত্মতুষ্টির কোনো অবকাশ নেই। দারিদ্র্য বিমোচন, মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আমাদের আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।”
কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমাদের শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট কারিগরি কর্মীদের উৎপাদানশীলতা, যারা আমাদের সাথে প্রতিযোগিতায় আছে তাদের তুলনায় অনেক কম। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে পারলে শ্রমিকগণ যেমন লাভবান হবেন, তেমনি মালিক, ভোক্তা এবং দেশও লাভবান হবে।”
এ কাজে সরকার সার্বিক সহযোগিতা দেবে বলে জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা- আইএলও ২০০৩ সাল থেকে ২৮ এপ্রিলকে ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস’ হিসেবে পালন করছে। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকার এবার প্রথমবারের মতো দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করছে।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তায় বিনিয়োগে গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, “শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সুরক্ষার বিষয়টি ব্যক্তিগত কোনো ইস্যু নয় বরং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি উত্তম বিনিয়োগ।
“শ্রমিক বাঁচলে শিল্প বাঁচবে, শিল্প বাঁচলে দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল থাকবে। শিল্পকে উন্নতির চরম শিখরে নিতে এবং দেশের শিল্পকে সমৃদ্ধশালী রাখতে শিল্প সেক্টরগুলোতে কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নিশ্চিতের বিকল্প নেই।”
দেশের তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি।
“সরকার কারখানাগুলোর ভবন ও অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ কর্মপরিবেশ উন্নতকরণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। জাতীয় উদ্যোগে বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্প কারখানাগুলোর উপর অধিকতর নজর দেওয়া হয়েছে এবং পরিদর্শনপূর্বক ত্রুটি চিহ্নিত করে তা নিরসনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
“পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি সেক্টরের শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
শিল্প মালিকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আপনারা শুধু মুনাফার জন্য ব্যবসা করবেন না। আপনাদের সামাজিক দায়িত্বও অনেক বেশি। আমি মনে করি এবং আপনারাও নিশ্চয়ই মনে করেন যে, শ্রমিকরাই উৎপাদনমুখী শিল্পের চালিকাশক্তি। কারখানা ও শ্রমিক একে অপরের পরিপূরক। শ্রমিক ভালো থাকলে কারখানা ভালো থাকবে। আমাদের মনে রাখতে হবে মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক বজায় থাকলে শিল্পই লাভবান হয়।”
পোশাকসহ বিভিন্ন কারখানায় নারী শ্রমিক বাড়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, “পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন কলকারখানায় নারী শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তারা গ্রাম থেকে শহরে পাড়ি জমায় একটু ভালো জীবন ও স্বাচ্ছন্দের আশায়। যারা আপনাদের, আমাদের স্বাচ্ছন্দ দিচ্ছে, তাদের দিকে আমাদেরও নজর দেওয়া জরুরি।”
কর্মক্ষেত্রে সুস্থ থাকা ও নিরাপদে কাজ করা শ্রমিকের আইনগত অধিকার- একথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “এর সাথে দেশের উন্নয়ন নিবিড়ভাবে জড়িত। শ্রমিকগণ সুরক্ষিত থাকলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, ফলশ্রুতিতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত হবে।”
শ্রম ও কর্মসংস্থা মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শ্রম সিচব মিকাইল শিপার।
এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, আইএলওর আবাসিক পরিচালক শ্রীনিবাস বি. রেড্ডি, জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সৈয়দ আহাম্মদ, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ও বিকেএমইএ সহ-সভাপতি আসলাম সানি।