মৃত্যু পরোয়ানা শুনলেন ‘চিন্তিত’ নিজামী
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে প্রাণদণ্ড পাওয়া জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শুনিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে প্রাণদণ্ড পাওয়া জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শুনিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
সুপ্রিম কোর্ট এ মামলায় নিজামীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি প্রকাশের পর মঙ্গলবার রাতে আসামির মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বিচারিক আদালত থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ঘুরে লাল শালুতে মোড়ানো সেই মৃত্যু পরোয়ানা গাজীপুরের কাশিমপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ পৌঁছায় বুধবার সকাল ৯টার পর।
এ কারাগারের সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, “সকাল সোয়া ১০টার দিকে মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যু পরোয়ানাটি পড়ে শোনানো হয়েছে। পরে তিনি নিজে পরোয়ানা দেখে তাতে সই করেন।
“এ সময় তাকে চিন্তিত দেখা গেছে। রায়ের রিভিউ চাইবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।”
বুধবারই আইনজীবীরা নিজামীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন বলে এই কারা কর্মকর্তা জানান।
যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আরেক জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীও কাশিমপুরে আছেন। আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে তার নামেও মৃত্যু পরোয়ানা জারি হবে।
মঙ্গলবার মৃত্যুদণ্ড বহালের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের মধ্য দিয়ে একাত্তরের বদর প্রধান নিজামীর সাজা কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরুর পথ তৈরি হয়। আর আসামিকে মৃত্যু পরোয়ানা শোনানোর মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে রিভিউয়ের দিন গণনা।
>> নিয়ম অনুযায়ী, দণ্ড কার্যকরের আগে আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন যুদ্ধাপরাধী নিজামী। রিভিউ না টিকলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষাও তিনি চাইতে পারবেন।
>> দুই আর্জিই নাকচ হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে কারা কর্তৃপক্ষ দণ্ড কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে। তার আগে আসামির সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন পরিবারের সদস্যরা।
>> আসামিপক্ষকে রিভিউ আবেদন করতে হবে ১৫ দিনের মধ্যে। রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার আগে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না।
বুধবার সেই দিন গণনা শুরু হচ্ছে জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আগের দিন বলেন, “এ সময়ের মধ্যে কেউ রিভিউ আবেদন না করলে আইন অনুসারে দণ্ড কার্যকর প্রক্রিয়া শুরু করবে সরকার।”
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এসএম শাহজাহান বলেন, “রায়ের অনুলিপি হাতে পেলে ১৫ দিনের মধ্যে আমরা রিভিউয়ের আবেদন করব।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
চলতি বছর ৬ জানুয়ারি আপিল আংশিক মঞ্জুর করে সেই ফাঁসির রায়ই বহাল রাখে সর্বোচ্চ আদালত।
ট্রাইব্যুনাল | আপিল বিভাগ |
# ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রসিকিউশনের আনা ১৬ অভিযোগের মধ্যে আটটিতে নিজামীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
# এর মধ্যে ২, ৪, ৬ ও ১৬ নম্বর ঘটনায় নিজামীর ফাঁসির রায় আসে। # ১, ৩, ৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগে জামায়াত আমিরকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। |
# চূড়ান্ত রায়ে ২, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে হত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল থাকে।
# যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা বহাল রাখা হয় ৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগে। # ১, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগ থেকে নিজামীকে খালাস দেয় আপিল বিভাগ। |
জামায়াত আমির নিজামী একাত্তরে ছিলেন দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নাজিমে আলা বা সভাপতি এবং সেই সূত্রে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত আল বদর বাহিনীর প্রধান।
স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর দমন-পীড়ন চালাতে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটিতেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে এ মামলার বিচারে উঠে আসে।
৭২ বছর বয়সী নিজামী হলেন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করা তৃতীয় ব্যক্তি, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে যার সামনে অপেক্ষা করছে ফাঁসির দড়ি।
বিগত চার দলীয় জোট সরকারের এই মন্ত্রী চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলারও মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতদের মধ্যে এ নিয়ে মোট ছয়জনের আপিলের নিষ্পত্তি শেষে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়ে রিভিউয়ের পর্যায়ে এলো।