সিলেট থেকে অস্ত্রের চালান পাঠান আ’লীগ নেতা

মাথায় ২৬টি সেলাই। সারা শরীরে আরও ৩৭টি। দুই পায়ে বিদ্ধ হয়েছে তিনটি গুলি। তিনটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে কিরিচের কোপে- ক্ষতবিক্ষত এই শরীর নিয়েই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন দিদার মার্কেট ওয়ার্ড ছাত্রলীগ কর্মী সান তালুকদার। ইসলামিয়া কলেজের হিসাববিজ্ঞান অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র সান এলাকায় সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় এবং চাঁদা না দিয়ে ব্যবসা শুরু করায় প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগের কতিপয় ক্যাডার চিহ্নিত কিছু শিবির ক্যাডার নিয়ে সানের ওপর পৈশাচিক কায়দায় হামলা চালিয়েছে। আর এই হামলার জন্য সিলেট থেকে একে-৪৭ রাইফেলসহ একটি অস্ত্রের চালান আনা হয়। আর এই অস্ত্র পাঠান সিলেটের এক আওয়ামী লীগ নেতা। সেই অস্ত্রের চালান রিসিভ করে চট্টগ্রামের আল সাফা নামের এক ছাত্রলীগ ক্যাডার। সানের ওপর হামলার সময় এই সাফাও ছিল। সোমবার রাতে হামলার ঘটনা ঘটলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। সানের পক্ষে চকবাজার থানায় মামলা করতে যাওয়া হলে পুলিশ ঘটনা তাদের আওতাধীন এলাকার না হওয়ার মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। কোতোয়ালি থানা পুলিশ বলেছে, এমন অভিযোগ তারা পাননি।
এদিকে একই দলের কর্মী বা ক্যাডাররা এমন পৈশাচিক ও বর্বরোচিত হামলা চালাতে পারে এমনটি বিশ্বাস করতে পারছেন না সানের মা সাবিত্রী তালুকদার। চমেক হাসপাতালে একমাত্র ছেলের এমন করুণ দশায় ভেঙে পড়া সাবিত্রী তালুকদার এখন এলাকায় কেমন করে থাকবেন তা নিয়ে চিন্তিত। ছাত্রলীগের হামলায় তার ছেলে মৃত্যুপথযাত্রী হওয়ার পরও এ খবর প্রকাশ হোক এটি তিনি চান না। চমেক হাসপাতালে যুগান্তরের চিত্র সাংবাদিক যখন সানের ছবি তুলতে যান তখন তিনি অনুনয়-বিনয় করেন ছবি না তোলার জন্য। খবর প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন রিপোর্টারকে। কারণ ছবি পত্রিকায় এলে, খবর প্রকাশ হলে সন্ত্রাসীরা তাদের এলাকায় থাকতে দেবে না।
চকবাজার ও দিদার মার্কেট এলাকার ছাত্রলীগ ক্যাডার নাভিল, হেলাল ও শংকর, জামায়াত-শিবির ক্যাডার জাহেদ, আবদুল্লাহ, তাওহিদ, ইব্রাহিম, ফোরকান, আল সাফা ওরফে নাভিদ ও কুদ্দুছসহ আরও কয়েকজন পৈশাচিক এ হামলা চালায়।
হত্যা প্রচেষ্টার নেপথ্যে : নগরীর দেওয়ান বাজার দিদার মার্কেট এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী গণেশ তালুকদার ও গৃহিণী সাবিত্রী তালুকদারের এক ছেলে এক মেয়ের মধ্যে সান তালুকদার ছোট। সে নগরীর ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের হিসাববিজ্ঞান অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগের কোনো পদে না থাকলেও সংগঠনের সক্রিয় কর্মী সে। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে চাকরিজীবী বাবাকে সহায়তা করতে লেখাপড়ার পাশাপাশি দিদার মার্কেট এলাকায় বাংলালিংকের সিম বিক্রি ও নিবন্ধনের একটি ভাসমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলে সে। অনুসন্ধানে জানা যায়, এরই মধ্যে এলাকায় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর সফরের দিন দিদার মার্কেট এলাকায় কয়েকশ’ লোকের জমায়েত ও মিছিলের নেতৃত্ব দেয় সান। এতে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়। ওই এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললে ছাত্রলীগ-শিবিরের চিহ্নিত একটি চক্রকে চাঁদা দিতে হয়। কিন্তু সান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার পর ওই চক্র চাঁদা চাইলেও দেয়নি। এর আগে চকবাজার এলাকায় ছাত্রলীগের কর্মীদের হামলার শিকার হয় এক শিবির কর্মী। ওই হামলার নেপথ্যে সানের ইন্ধন রয়েছে বলে সন্দেহ চক্রটির। মূলত এসব কারণেই সানকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা।
অস্ত্রের চালান প্রেরণের কথোপকথন : যুগান্তরের হাতে আসা এক টেলিকথোপকথন থেকে জানা যায়, ছাত্রলীগ কর্মী সানকে শায়েস্তা করতে সিলেট থেকে অস্ত্র আনা হয়। আর এই অস্ত্র পাঠান সিলেটের এক আওয়ামী লীগ নেতা। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় এ কথোপকথন থেকে জানা যায়, চকবাজার এলাকায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিবিরের এক কর্মীকে কুপিয়ে আহত করে। এর প্রতিশোধ নিতে সিলেট থেকে দুটি বাংলা (দেশী তৈরি একনলা বন্দুক) ও একটি একে-৪৭ রাইফেল আনা হয়। এই অস্ত্র পাঠান সিলেটের এক আওয়ামী লীগ নেতা। অস্ত্রগুলো রিসিভ করেন আল সাফা আভিদ প্রকাশ সাফা নামের চকবাজার এলাকার এক ছাত্রলীগ কর্মী। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে এসব অস্ত্র প্রেরণ করা হয়। এই অস্ত্র হাতে পাওয়ার পর নাভিদ-জাহেদ চক্র ছাত্রলীগ কর্মী সানের ওপর হামলা চালায়। গত সোমবার রাতে দেওয়ান বাজার দিদার মার্কেট এলাকার জেনুইন বেকারি প্রতিষ্ঠানের সামনে তার ওপর এলোপাতাড়ি হামলা চালানো হয়। তাকে কিরিচ দিয়ে সারা শরীরে কুপিয়ে জখম করা হয়। তার পায়ে কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। মৃত ভেবে সানকে রাস্তার ওপর ফেলে রেখে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যান।
মঙ্গলবার রাতে চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সান তালুকদারের পুরো শরীরে ৬৩টি সেলাই করা হয়েছে। যার মধ্যে শুধু মাথায় রয়েছে ২৬টি সেলাই। গুলিতে ডান পা অনেকটা ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। হাতের তিনটি আঙুল সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পায়ে রয়েছে একাধিক সেলাই। বুকে, পেটে, কাঁধে ও পাজরেও ২০ থেকে ২৩টির মত সেলাই। গলায় রয়েছে একাধিক আঘাতের চিহ্ন। পুরো শরীর ব্যান্ডেজে মোড়ানো। কথাবার্তা বলতে পারছে না সান।
দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, মারাত্মক আহত সানের অবস্থা এখনও আশংকাজনক। এ ধরনের জখমী রোগীর পরিস্থিতি যে কোনো সময় ক্রিটিক্যাল হতে পারে। তাকে আরও দুটি অপারেশন করতে হবে। সে এখনও আশংকামুক্ত এটা বলা যাবে না।’
সানের মা সাবিত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘দলের মধ্যে যদি এ রকম হিংস তা থাকে তবে রাজনীতি করে কি হবে। আমার ছেলেকে যারা গুলি করেছে, কুপিয়েছে তারা একই দলের ও নামধারী হলেও তারা যে কত হিংস তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’
এদিকে একই দলের কর্মী বা ক্যাডাররা এমন পৈশাচিক ও বর্বরোচিত হামলা চালাতে পারে এমনটি বিশ্বাস করতে পারছেন না সানের মা সাবিত্রী তালুকদার। চমেক হাসপাতালে একমাত্র ছেলের এমন করুণ দশায় ভেঙে পড়া সাবিত্রী তালুকদার এখন এলাকায় কেমন করে থাকবেন তা নিয়ে চিন্তিত। ছাত্রলীগের হামলায় তার ছেলে মৃত্যুপথযাত্রী হওয়ার পরও এ খবর প্রকাশ হোক এটি তিনি চান না। চমেক হাসপাতালে যুগান্তরের চিত্র সাংবাদিক যখন সানের ছবি তুলতে যান তখন তিনি অনুনয়-বিনয় করেন ছবি না তোলার জন্য। খবর প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন রিপোর্টারকে। কারণ ছবি পত্রিকায় এলে, খবর প্রকাশ হলে সন্ত্রাসীরা তাদের এলাকায় থাকতে দেবে না।
চকবাজার ও দিদার মার্কেট এলাকার ছাত্রলীগ ক্যাডার নাভিল, হেলাল ও শংকর, জামায়াত-শিবির ক্যাডার জাহেদ, আবদুল্লাহ, তাওহিদ, ইব্রাহিম, ফোরকান, আল সাফা ওরফে নাভিদ ও কুদ্দুছসহ আরও কয়েকজন পৈশাচিক এ হামলা চালায়।
হত্যা প্রচেষ্টার নেপথ্যে : নগরীর দেওয়ান বাজার দিদার মার্কেট এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী গণেশ তালুকদার ও গৃহিণী সাবিত্রী তালুকদারের এক ছেলে এক মেয়ের মধ্যে সান তালুকদার ছোট। সে নগরীর ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের হিসাববিজ্ঞান অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগের কোনো পদে না থাকলেও সংগঠনের সক্রিয় কর্মী সে। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে চাকরিজীবী বাবাকে সহায়তা করতে লেখাপড়ার পাশাপাশি দিদার মার্কেট এলাকায় বাংলালিংকের সিম বিক্রি ও নিবন্ধনের একটি ভাসমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলে সে। অনুসন্ধানে জানা যায়, এরই মধ্যে এলাকায় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর সফরের দিন দিদার মার্কেট এলাকায় কয়েকশ’ লোকের জমায়েত ও মিছিলের নেতৃত্ব দেয় সান। এতে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়। ওই এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললে ছাত্রলীগ-শিবিরের চিহ্নিত একটি চক্রকে চাঁদা দিতে হয়। কিন্তু সান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার পর ওই চক্র চাঁদা চাইলেও দেয়নি। এর আগে চকবাজার এলাকায় ছাত্রলীগের কর্মীদের হামলার শিকার হয় এক শিবির কর্মী। ওই হামলার নেপথ্যে সানের ইন্ধন রয়েছে বলে সন্দেহ চক্রটির। মূলত এসব কারণেই সানকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা।
অস্ত্রের চালান প্রেরণের কথোপকথন : যুগান্তরের হাতে আসা এক টেলিকথোপকথন থেকে জানা যায়, ছাত্রলীগ কর্মী সানকে শায়েস্তা করতে সিলেট থেকে অস্ত্র আনা হয়। আর এই অস্ত্র পাঠান সিলেটের এক আওয়ামী লীগ নেতা। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় এ কথোপকথন থেকে জানা যায়, চকবাজার এলাকায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিবিরের এক কর্মীকে কুপিয়ে আহত করে। এর প্রতিশোধ নিতে সিলেট থেকে দুটি বাংলা (দেশী তৈরি একনলা বন্দুক) ও একটি একে-৪৭ রাইফেল আনা হয়। এই অস্ত্র পাঠান সিলেটের এক আওয়ামী লীগ নেতা। অস্ত্রগুলো রিসিভ করেন আল সাফা আভিদ প্রকাশ সাফা নামের চকবাজার এলাকার এক ছাত্রলীগ কর্মী। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে এসব অস্ত্র প্রেরণ করা হয়। এই অস্ত্র হাতে পাওয়ার পর নাভিদ-জাহেদ চক্র ছাত্রলীগ কর্মী সানের ওপর হামলা চালায়। গত সোমবার রাতে দেওয়ান বাজার দিদার মার্কেট এলাকার জেনুইন বেকারি প্রতিষ্ঠানের সামনে তার ওপর এলোপাতাড়ি হামলা চালানো হয়। তাকে কিরিচ দিয়ে সারা শরীরে কুপিয়ে জখম করা হয়। তার পায়ে কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। মৃত ভেবে সানকে রাস্তার ওপর ফেলে রেখে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যান।
মঙ্গলবার রাতে চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সান তালুকদারের পুরো শরীরে ৬৩টি সেলাই করা হয়েছে। যার মধ্যে শুধু মাথায় রয়েছে ২৬টি সেলাই। গুলিতে ডান পা অনেকটা ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। হাতের তিনটি আঙুল সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পায়ে রয়েছে একাধিক সেলাই। বুকে, পেটে, কাঁধে ও পাজরেও ২০ থেকে ২৩টির মত সেলাই। গলায় রয়েছে একাধিক আঘাতের চিহ্ন। পুরো শরীর ব্যান্ডেজে মোড়ানো। কথাবার্তা বলতে পারছে না সান।
দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, মারাত্মক আহত সানের অবস্থা এখনও আশংকাজনক। এ ধরনের জখমী রোগীর পরিস্থিতি যে কোনো সময় ক্রিটিক্যাল হতে পারে। তাকে আরও দুটি অপারেশন করতে হবে। সে এখনও আশংকামুক্ত এটা বলা যাবে না।’
সানের মা সাবিত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘দলের মধ্যে যদি এ রকম হিংস তা থাকে তবে রাজনীতি করে কি হবে। আমার ছেলেকে যারা গুলি করেছে, কুপিয়েছে তারা একই দলের ও নামধারী হলেও তারা যে কত হিংস তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’