রাজধানীতে মিলিটারি পুলিশকে কুপিয়ে জখম, আটক ১
রাজধানীর উত্তর কাফরুলের কচুক্ষেতে চেকপোস্টে মিলিটারি পুলিশের (এমপি) সদস্যকে কুপিয়ে আহত করেছে এক দুর্বৃত্ত। আহত এমপি পুলিশের ল্যান্স কর্পোরাল সামিদুল ইসলামকে (৩০) আশঙ্কাজনক অবস্থায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছে। হামলাকারীকেও আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কচুক্ষেত এলাকার ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের পাশে এমপি চেকপোস্টে এ ঘটনা ঘটে।
রাজধানীর গাবতলী এবং আশুলিয়ার চেকপোস্টে পুলিশের ওপর হামলার পর এবার সেনানিবাসের মতো নিরাপত্তা বেষ্টিত এলাকায়ও দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হলেন পুলিশ সদস্য। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুনতাসিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ‘সকাল ১০টার দিকে কচুক্ষেত চেকপোস্ট এলাকায় ওই পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। প্রথমে তাঁকে ক্লিনিকে ও পরে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছে।’
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) থেকে জানানো হয়, ‘রাজধানীর কাফরুল এলাকায় মিলিটারি পুলিশ সদস্যের ওপর হামলার ঘটনা তদন্ত করছে সেনাবাহিনী।’
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কচুক্ষেত থেকে ক্যান্টনমেন্টে ঢোকার সময় সেখানে দায়িত্বরত মিলিটারি পুলিশ সদস্য একটি রিকশার হাওয়া ছেড়ে দেন এবং রিকশাটিকে থামিয়ে চালকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ঠিক তখনই ৩০-৩৫ বছরের এক যুবক পেছন থেকে তাঁকে বড় আকারের দা দিয়ে কোপাতে শুরু করে। পুলিশ সদস্য সামিদুলের ঘাড়ে, ছোয়ালে ও হাতে বেশ কয়েকটি কোপ দেয়, এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, ওই যুবক দা দিয়ে মিলিটারি পুলিশকে কোপানোর পরও কিছু সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। একপর্যায়ে তাঁকে ধরতে চেকপোস্টের অন্য পুলিশ সদস্য ও স্থানীয়রা ধাওয়া দিলে সে কাফরুলের বাসার ছাদে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরে সেখান থেকে তাঁকে আটক করা হয়। তবে ওই যুবককে দেখতে অনেকটা মানসিক বিকারগ্রস্ত বলে মনে হয়েছে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ জানান।
কাফরুল থানার এসআই আবদুল হালিম জানান, খবর পেয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থল র্যাব-মিলিটারি ঘিরে রাখে। তবে হামলার সঙ্গে জড়িত ওই যুবককে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করা হলেও পুলিশ তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি। এসআই হালিম আরও জানান, আটক যুবককে ডিজিএফআই কার্যালয়ে রাখা হয়েছে।
এদিকে দুপুরে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ‘মিলিটারি পুলিশের ওপর হামলার এই ঘটনা পরিকল্পিত। যারা আন্দোলনের নামে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, নিরীহ মানুষ ও শিশু পুড়িয়েছিল তারাই এ হামলার সঙ্গে জড়িত। তারা পুলিশের ওপর এই হামলা করে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়। পুলিশ তা প্রতিহত করবে।’
‘হামলাকারীকে ধরা সম্ভব হয়েছে’: রাজধানীতে পুলিশের তল্লাশি চৌকি বৃদ্ধি ও পুলিশ সদস্যরা এলার্ট (সতর্ক) থাকার কারণেই গতকাল মঙ্গলবার কচুক্ষেতে মিলিটারি পুলিশ সদস্যের ওপর হামলাকারীকে ধরা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
‘মিলিটারি পুলিশ সামান্য আহত’: রাজধানীর কাফরুল এলাকায় মিলিটারি পুলিশ সদস্যের ওপর হামলার ঘটনা তদন্ত করছে সেনাবাহিনী। গতকাল বিকেলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) থেকে এ তথ্য জানানো হয়। হামলা প্রসঙ্গে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘অদ্য সকাল ৯টা ৪৫ ঘটিকায় কাফরুল এলাকায় কর্তব্যরত একজন মিলিটারি পুলিশকে একজন পথচারী পেছন থেকে ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে আঘাত করে। এতে উক্ত মিলিটারি পুলিশ সদস্য সামান্য আহত হন। কর্তব্যরত অন্য সামরিক সদস্যগণ সন্দেহভাজন একজন হামলাকারীকে আটক করেছে। বিস্তারিত জানার জন্য ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে।’ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রেজা-উল করিম শাম্মী সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সই করেছেন।
‘আসবি না, আসলে কোপাব’: রাজধানীর কচুক্ষেতে মিলিটারি পুলিশ সদস্য সামিদুল ইসলামকে কুপিয়েছে যে যুবক, তাঁকে ধরতে হয়েছে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধাওয়া করে। কাফরুল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান এ তথ্য দেন। ওই দুর্বৃত্তকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ধরার পর গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
জানা গেছে, সামিদুলকে ছুরিকাঘাতের পর ওই ব্যক্তি উত্তর কাফরুল স্কুল রোডে ঢোকে। ওই যুবকের পরনে ছিল খয়েরি রঙের ফুলহাতা শার্ট আর চেকের লুঙ্গি। ভেতরে শর্ট প্যান্ট ছিল। ধাওয়া খেয়ে ওই যুবক প্রথমে আরমান সাহেবের বাসা গলির ২৩৯/২ নম্বর বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়ায়। প্রায় দুই ফুট লম্বা ছুরি নাড়াতে নাড়াতে তিনি ধাওয়াকারীদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘কেউ সামনে আসবি না, আসলে কোপাব’।
তারপর ওই যুবক সেখান থেকে বের হয়ে উত্তর কাফরুল উচ্চ বিদ্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করেন। তবে শ্যামাপূজা উপলক্ষে বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকায় তিনি সেখানে ঢুকতে পারেননি। চলে যান পাশের গলির ২৩৯/২/খ নম্বর বাড়িতে। ওই বাড়ির প্রধান ফটক খোলা ছিল। ভবনের কলাপসিবল গেটও খোলা ছিল। তিনি দৌড়ে ওই ভবনের পাঁচতলায় ওঠে যান। ছাদে যাওয়ার চেষ্টা করেও পারেননি।
ছাদের দরজা বন্ধ ছিল। এর মধ্যে কাফরুল থানার পুলিশ, মিলিটারি পুলিশ, সামরিক বাহিনীর সাদা পোশাকের কর্মকর্তারা ওই বাড়ির সামনে অবস্থান নেন। ওই যুবক পাঁচতলায় থাকার সময় বাড়িটির দারোয়ান হারুনুর রশীদ ভবনের কলাপসিবল গেট আটকে দেন। পরে ‘নেমে না এলে গুলি করা হবে’- এমন হুমকি দেওয়ার পর তিনি নিচে নেমে আসে। ছাদ থেকে নেমে আসার সময় তিনি দোতলা বাসার দরজার সামনে থাকা পাপোশে রক্তমাখা ছুরিটি লুকিয়ে রেখে এলেও পরে তা উদ্ধার করা হয়।