সকালে নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন প্রধানমন্ত্রী

hasina

জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আজ সকালে নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদের সঙ্গে দেখা করে তাকে সফরের বিষয়ে অভিহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বঙ্গভবনে প্রবেশ করে এক ঘণ্টার বেশি সময় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলাপ করেন প্রধানমন্ত্রী। ১১ দিনের সরকারি সফর শেষে আগামী ৩ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-০১৫ উড়োজাহাজটি প্রধানমন্ত্রীসহ তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে ঢাকা ছাড়বে আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে। ফ্লাইটটি ঢাকার সময় রাত পৌনে ১০টার দিকে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। হিথ্রোতে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবদুল হান্নান। বিমানবন্দরে তিন ঘণ্টারও বেশি সময়ের ট্রানজিট নিয়ে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিএ১৮১-এ চেপে বসবেন প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা। বাংলাদেশ সময় ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় প্রধানমন্ত্রীর বহর নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে পৌঁছবে। আগামী শুক্রবার ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি যোগ দেবেন জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে। সেখানে ব্যস্ত সময় কাটাবেন টানা ছয় দিন। ১ অক্টোবর নিউইয়র্ক ছেড়ে স্থানীয় সময় ২ অক্টোবর লন্ডনে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি করবেন। আর ৩ অক্টোবর দেশে ফিরে সিলেট হয়ে ঢাকায় পৌঁছাবেন। এর মধ্যে দিয়েই শেষ হবে ১১ দিনের সফর।

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে এ বছর নিউইয়র্কের পার্ক এভিনিউয়ের হোটেল ওয়ার্ল্ডফ অ্যাস্টোরিয়ায় অবস্থান করবেন প্রধানমন্ত্রী। ২৪ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। ওই দিন সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্টজনসহ নানাদেশের অভ্যাগত অতিথিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তার ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন নগরীর পূর্ব এলমার্স্টস্থ লাগরডিয়া বিমানবন্দরের হোটেল ম্যারিয়টে।

২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশন। ওই দিন স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্য নেতাদের সঙ্গে যোগ দেবেন পোপ বেনেডিক্টের বিশেষ বক্তৃতায়। এর পর পরই সকাল ১১টা থেকে শুরু হবে ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা গ্রহণের লক্ষ্যে জাতিসংঘ শীর্ষ সম্মেলন। সাধারণ অধিবেশন হলে এই শীর্ষ সভায় বক্তব্য রাখবেন সদ্য বিদায়ী সাধারণ পরিষদ প্রেসিডেন্ট উগান্ডার রাষ্ট্রপতি ইউবেরি মুসেভেনি, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেন ও জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। ওই দিনই দুপুরে প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন তার আবাসিক হোটেলের কার্নেগি হলে অনুষ্ঠেয় বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের (বিসিআইইউ) গোলটেবিল আলোচনায়। আর বিকালে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গার্লস লিড দ্য ওয়ে’ শীর্ষক বিশ্ব নেতৃত্বের ফোরামে বক্তব্য রাখবেন। বিকাল ৫টায় এই অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বেও অংশ নেবেন তিনি। এর মধ্য দিয়েই শেষ হবে দিনের কর্মসূচি।

২৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংলাপে কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে থাকবেন বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী চার্লস মাইকেল। বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন সাউথ সাউথ কোঅপারেশন বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল আলোচনায়। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের কনফারেন্স রুম-৬ এ অনুষ্ঠেয় এই আলোচনায় সভাপতিত্ব করবেন চিনা প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং। ওইদিন সন্ধ্যায় চিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় প্রধানমন্ত্রী তথ্যপ্রযুক্তি খাতে টেকসই উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করবেন। আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নয়ের (আইটিইউ) পক্ষ থেকে এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ নৈশভোজ।

২৭ সেপ্টেম্বর সকালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ২০১৫ পরবর্তী বিশ্বের উন্নয়ন এজেন্ডা নিয়ে চলমান প্লেনারিতে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন সকালের অধিবেশনের ২১তম বক্তা হিসেবে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার বক্তৃতা থাকতে পারে বলে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র। ওইদিন সকাল ৯টা থেকে শুরু হবে বিশ্ব  নেতাদের অংশগ্রহণে নারী পুরুষ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক বৈঠক। এতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন।

বিকাল সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রী যাবেন নিউইয়র্ক হিলটন মিডটাউন হোটেলে। সেখানে তাকে সংবর্ধনা জানাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি কমিউনিটি। বিকাল ৫টায় এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে ফের নিজের আবাসিক হোটেলে ফিরবেন। এরপর সন্ধ্যা ৭টায় যাবেন সিপ্রিয়ানি লা স্পেশিয়ালিতায়। সেখানে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হবে বিশেষ অ্যাওয়ার্ড দ্য চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার বক্তৃতার পাশাপাশি থাকবে দুই মিনিটের একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন। এরপর বিশেষ নৈশভোজেও অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় ফের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যাবেন তিনি। সেখানে ইন্দোনেশিয়ান লাউঞ্জ ওয়েস্ট ফয়ারে বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের অভ্যর্থনা জানাবেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। ওই দিন জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ৭০তম অধিবেশনের মূল পর্বের উদ্বোধনী অধিবেশন শুরু হবে সকাল ৯টায়। দুপুরে নর্থ ডেলিগেট লাউঞ্জে জাতিসংঘ মহাসচিবের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। বিকাল ৩টায় বিশ্ব শান্তি রক্ষা বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন ও বক্তব্য রাখবেন। এতে যুক্তরাষ্ট্র, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, রুয়ান্ডা, উরুগুয়ের রাষ্ট্র কিংবা সরকার প্রধানরা বক্তব্য রাখবেন। ওই দিনই বিকাল ৫টায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

পরের দিন ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে সন্ত্রাস ও চরমপন্থা বিরোধী শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এতে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার। এরপর বিকাল ৪টায় বাংলাদেশের আয়োজনে এমডিজি টু এসডিজি অ্যাওয়ে ফরোয়ার্ড শীর্ষক সাইড ইভেন্টে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। এতে নেদারল্যান্ডসের রাজা, বেনিনের প্রেসিডেন্ট, জাপানের প্রধানমন্ত্রী, সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী, সাধারণ অধিবেশনের প্রেসিডেন্টসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখবেন। সমাপনী ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী যাবেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন কার্যালয়ে। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাংবাদিক সম্মেলন করার কথা রয়েছে।

৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ রয়েছে। ওই দিন স্থানীয় সময় আনুমানিক সকাল ১১টার (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) দিকে প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য বছরের মতোই বাংলায় ভাষণ দেবেন। এরপর স্থানীয় সময় ৬টায় বৈঠক করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে। সদর দপ্তরে মহাসচিবের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ১ অক্টোবর সকাল ৮টায় জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিএ-১৭৮ এ চড়ে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন প্রধানমন্ত্রী।

লন্ডনের স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে হিথ্রো পৌঁছানোর পর যাবেন লন্ডনের ব্রুক স্টিটস্থ হোটেল ক্লারিজে। পরের দিন ২ অক্টোবর বিকালে লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির একটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ওই রাতেই দেশের পথে যাত্রা করবেন শেখ হাসিনা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট বিজি ০০২ উড়াল দেবে। বাংলাদেশ সময় ৩ অক্টোবর বেলা ১২টার দিকে পৌঁছাবে সিলেটের ওসমানি বিমানবন্দরে। আর সেখান থেকে ফের রওনা দিয়ে বেলা দেড়টার দিকে তিনি ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন।