বাংলাদেশের মর্যাদা অনন্য উচ্চতায়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে সফলভাবে উৎক্ষেপণ হওয়ায় দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মর্যাদা এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। দেশের অব্যাহত অগ্রগতির পথে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ একটি নতুন মাইলফলক যোগ করবে। এটি আমাদের সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর মুগদায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড নার্সিং এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের (এনআইএএনইআর) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
ফ্রান্সের থালেস এলেনিয়া স্পেস কম্পানির তৈরি ৩ দশমিক ৭ মেট্রিক টন ভরের বঙ্গবন্ধু-১ যোগাযোগ স্যাটেলাইটটি স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে ফ্লোরিডার কেনাভেরাল উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে কক্ষপথের দিকে যাত্রা শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পতাকা মহাকাশে উড্ডয়ন করায় বাংলাদেশ স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হিসেবে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে।’ তিনি জানান, এই নতুন স্যাটেলাইট বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাখস্তানসহ গোটা অঞ্চলের যোগাযোগ সুবিধা দিতে সক্ষম হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে একটি মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করেছিলেন যে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগ বজায় রাখা ছাড়া দেশকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। ‘এ জন্যই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মধ্যে ১৯৭৪ সালে রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই উদ্যোগটি আজ মহাকাশ কক্ষপথে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট স্থাপনের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পেল।’
প্রধানমন্ত্রী ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নির্মাণ ও উৎক্ষেপণে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক প্রকল্পটিতে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স সরকার এবং দেশ দুটির জনগণকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণে নির্দিষ্ট কক্ষপথ স্লট ভাড়া দেওয়ার জন্য রুশ সরকার ও জনগণকেও ধন্যবাদ জানান। তিনি কক্ষপথ স্লটে প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ যেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, কোইকা সহসভাপতি কিয়াংগুন সুল, কোইকার সাউথ এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর মহাপরিচালক ইয়ো ইয়ং কিং অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল হক খান স্বাগত বক্তব্য দেন।
রোগ নির্ণয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনায় দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার নির্দেশ : এনআইএএনইআরের ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দেশে রোগীদের উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে রোগ নির্ণয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় আমরা দেখি, রোগ নির্ণয়ের (ডায়াগনসিস) ব্যাপারে কেন যেন কোথায় একটা বিরাট ভুল হয়ে যায়। যদিও যন্ত্রপাতি এখন অনেক উন্নত। তবে সেগুলো পরিচালনার জন্য দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে।’
দেশের হাসপাতালগুলোতে থাকা অত্যাধুনিক মেশিনপত্রগুলো চালাতে মানুষ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এটা না করা গেলে রোগীরা সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইন্ডিয়ার মতো দেশে দৌড়াবে। তিনি এসব দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সব করবেন আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘ওরা (বিদেশিরা) ভালোভাবে করতে পারলে আমরা কেন পারব না?’ তিনি বলেন, ‘আমাদেরও পারতে হবে। সমমানের সমমর্যাদার চিকিৎসাসেবা আমরাও দিতে পারব। সেই অভিজ্ঞতা, সেই শক্তিটা আমাদের অর্জন করতে হবে’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষকে সেবা দেওয়ার মনোভাবটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। তিনি নার্স, ডাক্তার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের রোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখানোর আহ্বান জানান। চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের একটু সংযত হতে হবে। দিনের বেলা সরকারি চাকরি করবেন আর রাতে গিয়ে প্রাইভেট করবেন তখন তো মেজাজ এমনিতেই খারাপ হবে, সেটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে আমার মনে হয় আপনারা একটু হিসাব করে, যতটা ধারণ করতে পারেন ঠিক ততটাই করবেন।