আবারও হিন্দু পুরোহিত হত্যা

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উত্তর কাস্ট সাগরা গ্রামের শ্রী শ্রী রাধামদন গোপাল মঠ মন্দিরের বাবাজি (গোসাই) শ্যামানন্দ দাসকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

শুক্রবার (০১ জুলাই) ভোর ৫টা ২০ মিনিটে এ ঘটনা ঘটে।

ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান ঘটনাটি নিশ্চিত করে পোর্টাল বাংলাদেশ-কে জানান, শ্যামানন্দ দাস মন্দিরের পাশে পূজার জন্য ফুল কুড়াচ্ছিলেন। এ সময় তিনজন দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেল যোগে এসে তাকে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়।

পরে এলাকাবাসী শ্যামানন্দকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

যেভাবে যে কৌশলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, তার সঙ্গে সাম্প্রতিক বিভিন্ন জঙ্গি হামলা ও হত্যার ঘটনার মিল রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার শেখ আলতাফ হোসেন।

প্রত্যক্ষদর্শী এক নারীর বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, শুক্রবার ভোর ৫টা ২০ মিনিটে এ ঘটনা ঘটে।

“শ্যামানন্দ গোঁসাই ভোর ৫টার দিকে মঠ থেকে বেরিয়ে রাস্তার পাশের গাছ থেকে পূজার ফুল তুলছিলেন। এ সময় তিনজন হামলাকারী মোটরসাইকেলে করে এসে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে চলে যায়।”

মৃত্যু নিশ্চিত করতে এই হিন্দু সেবায়েতের মাথা ও ঘাড়ে একাধিক কোপ দেওয়া হয় বলে পুলিশ সুপার জানান।

রক্তাক্ত অবস্থায় শ্যামানন্দকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সকাল ৬টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ওই নারী পুলিশকে বলেছেন, মোটরসাইকেলের আরোহীদের মুখ গামছায় ঢাকা ছিল। একজনের হাতে তিনি রামদা দেখেছেন।

মঠের কোষাধ্যক্ষ প্রভাস কুমার জানান, নিহত শ্যামানন্দ নড়াইল সদর উপজেলার মুসুড়িডাঙ্গা গ্রামের কিরণ সরকারের ছেলে।

“বছর তিনেক আগে তিনি এই মন্দিরে এসে সেবায়েত হন। এলাকার মানুষ তাকে বাবাজি বলে ডাকত। কারও সঙ্গে তার সমস্যা ছিল বলে আমি শুনিনি।”

গত দুই বছরে এভাবে একের পর এক হত্যাকাণ্ডে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এসেছে, খুন হয়েছেন সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লেখক, ব্লগার, প্রকাশক; ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ভিন্ন মতাবলম্বীরা। সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে নিয়ে কেবল ঝিনাইদহেই এ ধরনের হত্যার শিকার হয়েছেন চারজন।

৭ জুন, ২০১৬: সদর উপজেলার মহিষাডাঙ্গা গ্রামে মহিষের ভাগাড় মাঠে আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী (৬৯) নামের এক হিন্দু পুরোহিতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।  নলডাঙ্গা দুর্গা মন্দিরের সাবেক পুরোহিত আনন্দ গোপাল করাতিপাড়ার বাড়ি থেকে সাইকেলে নলাডাঙ্গা গ্রামের সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরে যাওয়ার সময় আক্রান্ত হন। ওই ঘটনাতেও তিন যুবক মোটরসাইকেলে এসে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যায়।

মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি দল আইএস আনন্দ হত্যাকাণ্ডেও দায় স্বীকার করে বার্তা দিয়েছে বলে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ জানালেও ওই হত্যার পেছনে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির জড়িত থাকার সন্দেহের কথা বলেছে আসছে পুলিশ।

১৫ মার্চ, ২০১৬: ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের একাংশের ঝিনাইদহ জেলা শাখার সেক্রেটারি আব্দুর রাজ্জাককে (৪৫) কালীগঞ্জ উপজেলার নিমতলা বাসস্ট্যান্ডে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাজ্জাক পেশায় ছিলেন হোমিও চিকিৎসক। আইএস ওই হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে সে সময় খবর আসে।

৭ জানুয়ারি, ২০১৬: সদর উপজেলার বালেখাল বাজারে হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক সমির আলিকে হত্যা করা হয়, যিনি ২০০১ সালে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। খুনিরা চেম্বারে ঢুকে সমিরকে ছুরি মেরে পালিয়ে যায়। পরে আইএস এর দায় স্বীকারের বার্তা আসে।