‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয় দিব্যজ্ঞানী, নয়তো মাথা খারাপ’
নাইক্ষংছড়ি উপজেলার বাইশারীতে বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বান্দরবান রাজগুরু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ মহাথের উচহ্লা ভান্তে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ধর্মীয় এ গুরু বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কীভাবে বললেন, ভিক্ষু হত্যায় স্বজনরা জড়িত? হয়তো তিনি দিব্যজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি, নয়তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাথা খারাপ। তিনি এ কথা কেন বললেন স্বজনরা জড়িত? দেশের একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তাঁর প্রতিটি কথা সারা বিশ্ব শোনে। তাই আমরা চাই, মুখ ফসকে যেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো কথা না বলেন। আমরা চাই তাঁর প্রতিটি প্রদক্ষেপ হবে লোহার মতো শক্ত। আর প্রতিটি আইনি ব্যবস্থায় বিশ্ববাসী যেন বুঝতে পারে বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা শান্তিতে আছে।’
আজ রোববার বিকেলে ভিক্ষু হত্যার প্রতিবাদে জেলা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন অধ্যক্ষ মহাথের উচহ্লা ভান্তে। বৌদ্ধ ভিক্ষু পরিষদ এবং বৌদ্ধ ভিক্ষু ইয়ং অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
এর আগে বান্দরবান রাজগুরু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ মহাথের উচহ্লা ভান্তের নেতৃত্বে বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষরা রাজগুরু বিহার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে প্রেসক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। এতে বক্তব্য দেন অধ্যক্ষ মহাথের উচহ্লা ভান্তে, স্থানীয় নেতা মংমং চাক, ভিক্ষুর আত্মীয় থোয়াইগ্যা চাক প্রমুখ।
গত শনিবার ভোরের কোনো এক সময় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের চাকপাড়া বৌদ্ধ বিহারের (ক্যায়াং) প্রধান ভিক্ষু মংসই উকে (৭৮) গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সকালে পূজারীরা ভিক্ষুর জন্য খাবার নিয়ে বিহারে গিয়ে লাশ দেখতে পান। তার পরই তাঁরা পুলিশকে খবর দেন।
এ ঘটনায় ভিক্ষুর ছেলে চিংসাউ চাক গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় চাক সম্প্রদায়ের একজনসহ মিয়ানমারের দুই রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন হ্লামং চাক (৩২), জিয়া উদ্দিন (২৮) এবং রহিম (২৯)।
ঘটনার দিন দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক রেজাউল করিম হত্যার প্রতিবাদে ও ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবিতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল রাজশাহীতে ছিলেন। সেখানেই সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ উল্লেখ করে ঘটনায় ভিক্ষুর স্বজনরা জড়িত বলে দাবি করেন।
আজ বান্দরবানে ভিক্ষু হত্যার প্রতিবাদ সমাবেশে এর তীব্র প্রতিবাদ জানান বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ মহাথের উচহ্লা ভান্তে। এ সময় তিনি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে নরহত্যা হচ্ছে। খ্রিস্টান ফাদারকে হত্যা করছে, হিন্দু পুরহিতকে মারছে, নিরীহ সাংবাদিকদের হত্যা করছে। এখন বৌদ্ধ ধ্যানী এক ভিক্ষুকে হত্যা করা হলো, যিনি জঙ্গলে বসে ধ্যান করতেন।’
‘এগুলো কারা মারছে, আমরা জানি না। তাই আমরা নিরাপত্তা চাই, শান্তি চাই। সরকার ইচ্ছে করলে ঘটনার তদন্ত করতে পারে, আসামিদের ধরতে পারে, সুষ্ঠু বিচার করে শাস্তি দিতে পারে। সরকারের সে ক্ষমতা আছে, এটাই আমাদের বিশ্বাস।’
ভিক্ষু হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে অধ্যক্ষ মহাথের উচহ্লা ভান্তে আরো বলেন, অন্যান্য মামলাগুলোর মতো যেন এ ঘটনার বিচারে বিলম্ব না হয়।
এদিকে ভিক্ষু হত্যার প্রতিবাদে জেলার লামা উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।