দমন আর উৎপীড়ন এই দুইটি শব্দই যেন শুধু এখন আওয়ামীলীগের সমার্থক
লিখেছেন মোহাম্মদ আবদুন নাফি
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতি শুধু দমন আর উৎপীড়নের সাথে এক সমার্থক শব্দ। বাংলাদেশের প্রতিটা জেলা, মহকুমা, উপজেলা, নগরী, থানা আওয়ামীলীগের নেতা আর কর্মীদের কাছে জিম্মি। এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে সরকারী ক্ষমতার অপঃব্যবহার হচ্ছেনা। চাঁদা কিংবা উৎকোচ ছাড়া কোথাও একটা কাজ পর্যন্ত আদায় করা যাচ্ছেনা। পুলিশ ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেনা। এমনকি খুন ও হত্যার সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লোকেরা এমনভাবে মিশে গেছে যেখানে সাধারণ মানুষও আজ নিরাপদ নেই। র্যাব দুই বছর আগে নারায়ন গঞ্জে জলজ্যান্ত ৭ জন মানুষকে খুন করে শেষ পর্যন্ত আর পালাতে পারেনি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ক্রমাগতভাবে খুন করছে আদিবাসী জন সাধারণকে। প্রশাসন, অফিস, আদালত কোথাও অর্থের বাইরে একটা কথা নেই। টাকার বিনিময় ছাড়া সাধারণ নাগরিক সেবা মেলেনা। এমন একটা অবস্থায় দেশবাসী যেন এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে দিনানুপাত করছে।
এর চাইতে আতংকিত ব্যাপারটি হচ্ছে বাংলাদেশে কোনো বাক স্বাধীনতা নেই। বাংলাদেশের সবচাইতে বড় রাজনৈতিক দল বি এন পি কে কার্যত শেষ করে দিচ্ছে শাষক দল আওয়ামীলীগ। বি এন পি’র প্রায় লক্ষা্ধিক নেতা কর্মী আজ জেলে বন্দী এক অমানবিক অবস্থার মধ্য দিয়ে দিনানুপাত করছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পর পর আজ এতটা দশক পর এমন একটা অবস্থার তৈরী হবে সেটা খুব সম্ভবত কেউ কখনো ভাবেনি কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে এই বাংলাদেশেই আজকে এই ঘটনা ঘটছে এবং এটাই এখন বাস্তব।
সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধাপ্রাধের বিচার করবে বলে আওয়ামীলীগ বি এন পির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে একটি অমানবিক ট্রায়ালের মাধ্যমে ফাঁসী দিয়ে দেয়। তাঁর দোষ কি ছিলো? তাঁর একমাত্র দোষ ছিলো তিনি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন জ্যোষ্ঠ নেতা। এই ট্রাইবুনাল নিয়ে সব সময় অভিযোগ এসেছে এর স্বচ্ছতা নিয়ে এবং এর উদ্দেশ্য নিয়ে কিন্তু আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে এই ধরনের প্রশ্নের সঠিক জবাব কি কখনো দেয়া হয়েছে? উত্তর হচ্ছে না দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশের এমন এক ক্রান্তিকাল আজ যেখানে যে কেউই এই ট্রাইবুনালের অধীনে বিচারের মুখোমুখি হতে পারে। কয়েকদিন আগে বি এন পির সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুকের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তদন্ত শুরু করেছে। হয়ত শেষ পর্যন্ত তার ভাগ্যেও রয়েছে সেই ম্যানিলা রশির ফাঁসি।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত যে কোনো তৃণমূল পর্যায়ের একটি নেতাকর্মীও ঘরে ফিরতে পারছেনা। গত সাত বছর ধরে লক্ষ লক্ষ নেতা কর্মীরা পলাতক কিংবা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পালিয়ে রয়েছে এই জালিম সরকারের ভয়ে। কথা বললেই বিপদ। মুখটা খুল্লেই বাকশাল সরকারের হয় পেটোয়া বাহিনী আপনাকে থানায় নিয়ে বন্দী করে রাখবে তা না হলে অনলাইন বা অফলাইনের বাকশালী বুদ্ধিজীবিরা আপনাকে গালাগাল করে ভাসিয়ে নেবে। এই দলটির নেতা কর্মীরা এতটাই বিপদ জনক যেখানে আপনি যে একটি নিশ্চিন্তে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করবেন সে উপায়টিও নেই। হয় আপনার মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে আপনার সামনে তা না হলে টাকার জন্য অপহরন করে নিয়ে যাবে আপনার ছেলেটিকে।
এইতো প্রখ্যাত সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে অবৈধভাবে গ্রেফতার করে আটকে রাখার আজকে ৩ বছর হয়ে গেলো, জেলে আটকে রেখে পিন্টুকে হত্যা করা হোলো, শিহসু রাজনকে হত্যা করেছে যুবলীগের এক নেতা, শিশু রাকিব কে হত্যা করেছে আওয়ামীলীগ নেতার ভাতিজা, ব্লগারদের হত্যাকান্ডে জড়িত সাদমান আওয়ামীলীগ মন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নুর ভাতিজা। স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষন। পিতার সামনে কন্যাকে খুন বা ধর্ষন এগুলো তো নিত্ত নৈমত্তিক ব্যাপার এখন। সংখ্যালঘুদের উপর গত ৭ বছরে যে পরিমান হামলা বাংলাদেশের মধ্যে হয়েছে সেটা বাংলাদেশের যে কোনো ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যে অত্যন্ত নেক্কারজনক। সব সময় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হলেই বলা হোতো যে এগুলো আসলে বি এন পি জামাতের কাজ। কিন্তু গত ৭ বছর ধরে তো বাকশাল ক্ষমতায়। কি দেখেছি আমরা? উলটো আওয়ামী মন্ত্রী আর এম পিরা হিন্দুদের জমি দখল করে বসে আছে। ফরিদপুরের মন্ত্রী যিনি একই সাথে রাজাকার ও প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই তিনি হিন্দুর জমি দখল করে বসে আছেন আর সেটা নিয়ে কথা বলাতেই প্রবীর শিকদার নামে একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে জারি হয়ে গেছে হুলিয়া।
এইভাবে চলছে বাংলাদেশ। অত্যাচার, নিপীড়ন, লুন্ঠন, ধর্ষন সব কিছু আজ আওয়ামীলীগের সাথে মিলে মিশে সমার্থ০ক হয়ে গেছে। বাংলাদেশে এখন আওয়ামীলীগ মানেই আতংক, আওয়ামীলীগ মানেই হত্যার উৎসবের প্রতিচ্ছবি