ভাগ্য সুদৃঢ় করতে চান এরশাদ
আগামী ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অন্তত ১০০ আসন নিশ্চিত করতে চান পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ কারণেই সরকারের সঙ্গে থেকে যে বদনামের অংশীদার হয়েছেন তা থেকে বেরিয়ে দলে সরকারবিরোধী ফ্লেভার আনার চেষ্টা করছেন।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই পার্টির কো-চেয়ারম্যান করেছেন নিজের ছোট ভাই জিএম কাদের ও মহাসচিব করেছেন রুহুল আমীন হাওলাদারকে। এই দুজন দৃশ্যত সরকারবিরোধী মনোভাব প্রকাশ করলেও কার্যত সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলার নির্দেশ দিয়েছেন এরশাদ। জাপার প্রেসিডিয়ামের একাধিক সূত্র ও এরশাদের ঘনিষ্ঠ দুই নেতার সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিবেদকের প্রশ্ন শুনে বলেন, ‘পরে কথা বলব’।
জাপা সূত্রগুলো বলছে, জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করার পেছনে সরকারের বিরোধিতা করার পাশাপাশি মৃত্যুর পর দলের ভার নেওয়ার বিষয়টিও মাথায় রেখেছেন এরশাদ। ইতোমধ্যে জিএম কাদের জাতীয় পার্টিকে একটি প্রকৃত বিরোধী দলে পরিণত করার যে প্রয়াসের কথা বলছেন, তাও এরশাদের পরামর্শেই। এরই মধ্যে ‘জিএম কাদেরকে মন্ত্রী করতে চান এরশাদ’- এমন কথা শোনা গেলেও এরশাদের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন।
সূত্রমতে, আগামী ২০১৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারের সঙ্গে দর কষাকষি করে অন্তত ১০০টি আসন নিশ্চিত করতে চান এরশাদ। এ কারণে সম্প্রতি জিএম কাদেরের সরকারবিরোধী ইমেজকে সামনে এনেছেন সাবেক স্বৈরাচার এই শাসক। নিজের পক্ষ থেকেও একাধিকবার ‘সরকারে থেকে বিরোধী দল হওয়া যায় না’ বলে মন্তব্য করেছেন। যদিও তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব ছাড়ছেন না।
জাপার প্রেসিডিয়ামের এক সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্যার চাইলেই বিশেষ দূতের পদ ছাড়তে পারবেন না।’
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রথম জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এখনই ভাবছি না। এটা এখনও অনেক দূর। আমাদের পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা এখনও দুর্বল। জনমতের দিক দিয়েও আমরা সঠিক অবস্থানে নেই। ফলে, এখন কাজ হচ্ছে পার্টি গোছানো। আমরা এই মুহূর্তে নির্বাচনের পরিস্থিতিতে নেই। আমরা চাই নির্বাচন দেরি করেই হোক।’
জিএম কাদের বলেন, ‘পার্টিতে এখন নবজাগরণের সূচনা হয়েছে। দলের মধ্যে, তৃণমূলে এমনকি সাধারণ মানুষও কিন্তু চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তে খুশি হয়েছেন। দু’একজন আছেন, যারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পেছনে হয়তো প্রভাবশালী কেউ থাকতে পারে, তবে সুবিধা করতে পারবেন না। পরিস্থিতি অনেক দূর এগিয়ে গেছে।’
এরশাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জিএম কাদের বলেন, ‘আমাকে আজকেও বলেছেন গো এহেড, গো স্লো। আই অ্যাম হ্যাপি উইথ ইউ।’
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের বিষয়ে জিএম কাদের বলেন, ‘উনি তো আরও আগেই ছাড়তেন। কিন্তু পার্টির সবাই বলেছেন, সবার সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ। আর মন্ত্রীদের বিষয়ে তো প্রেসিডিয়ামের সবাই একমত, মন্ত্রিসভা ছাড়তে হবে। এখন এসব সিদ্ধান্ত চেয়ারম্যান দেখবেন।’
এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার ফোন রিসিভ করেননি।
জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলুর সরকারঘনিষ্ঠতার বিষয়টি অনেকটাই প্রকাশ্যে চলে আসায় মহাসচিব পদ থেকে তাকে সরিয়ে সম্প্রতি হাওলাদারকে জায়গা দিয়েছেন এরশাদ।