আরও ৮ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে পদ্মা সেতুর ব্যয়
নকশা পরিবর্তন, অবকাঠামো উন্নয়ন, ভূমির পরিমাণ ও পরামর্শকের সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় আরও ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই অনুমোদনের ফলে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেঁড়ে দাঁড়ালো ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এবার আরও নতুন নতুন অনেকগুলো কম্পোনেন্ট (উপাদান) যুক্ত হয়েছে পদ্মা সেতুতে। নদী শাসনের জন্য ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মূল সেতুর খরচও বেড়ে গেছে। এ ছাড়া, নতুন করে আরও কিছু জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি ও ট্রেন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা সচিব সফিকুল আযম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সদস্য ড শামসুল আলম প্রমুখ।
এই সেতু পুরো জাতির স্বপ্নের প্রকল্প এবং এটি বাস্তবায়িত হলে মোট দেশজ আয়ে (জিডিপি)এক দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
ইতিমধ্যেই পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল সেতুর ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের অগ্রগতি হয়েছে ১৬ শতাংশ।
এর আগে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। সেতুর আওতায় নানা অবকাঠামো যোগ হওয়া ও নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণেই মূলত দ্বিতীয় সংশোধনে প্রকল্পের এই ব্যয় বেড়েছে বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে সড়ক পথে রাজধানীসহ মধ্যাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করতে গত ১২ ডিসেম্বর পদ্মা নদীর ওপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণর মূল কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নথিপত্রে দেখা যায়, ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল।এবার এর সঙ্গে আরও ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা যুক্ত হচ্ছে।
২০০৭ সালে একনেক ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পটি অনুমোদন করেছিল। পরে নকশা পরিবর্তন হয়ে দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ ব্যয়ও বেড়ে যায়। ২০১১ সালে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার সংশোধিক প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল।
আজকের একনেক বৈঠকে পদ্মা সেতু প্রকল্পসহ ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩০ হাজার ২৯২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে, ২২ কোটি ৩২ লাখ টাকা সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে এবং বিদেশি সহায়তা বাবদ যোগান দেওয়া হবে ২ হাজার ৮৭০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে হরিপুর বিদ্যুত উন্নয়ন প্রকল্প। দীর্ঘমেয়াদি সেবা ও অন্যান্য সহায়তার সেবা চুক্তির আওতায় ৮০৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্বৈত জ্বালানি ভিত্তিক ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে।
দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ বর্ধিতকরণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৭৮২ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
ভাণ্ডার জুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয়ে ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
বাগেরহাট জেলা পোল্ডার নং-৩৬/১ এর পুর্নবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
গোপালগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনে ১২৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ১৮০ কোটি ৫৯ লাখ টাকার প্রকল্প।
বিটাকে কার্যক্রম শক্তিশালীকরণে পরীক্ষাগার সুবিধাসহ টুলস ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পে ৭২ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদশে মেরিন ফিশারিজ একাডেমির প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন ও জোরদারকরণ প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে মোট ৫২ কোটি ২৫ লাখ টাকার ব্যয় বরাদ্দ।
জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমি শক্তিশালীকরণ প্রকল্প বাবদ মোট ৪৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।