মানুষ হত্যাকারী প্রত্যেকের বিচার করা হবে

2_5736

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে তাদের কেউই বিচারের হাত থেকে রক্ষা পাবে না। তাদের কোনো ক্ষমা নেই। বিএনপি-জামায়াত জোটের তিন মাসের অবরোধে মানুষ হত্যার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ওই সময়ে সহিংসতায় নারী ও শিশুসহ কেউ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার হাত থেকে রেহাই পায়নি। যেখানে যেখানে মানুষ পোড়ানো হয়েছে, সেখানেই মামলা হয়েছে এবং প্রত্যেকের বিচার হবে। বৃহস্পতিবার বিকালে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিরাট জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মদনমোহন কলেজকে জাতীয়করণের আশ্বাস দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জাতির যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নয়ন হয়। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি বলেন, আমি সিলেটবাসীর কাছে একটি কথা বলতে চাই, আমার কাছে দাবি করা লাগবে না। আমি বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ঘুরেছি। এদেশের মানুষের সমস্যা কি তা আমাদের জানা। এদেশের মানুষের সমস্যার সমাধান কীভাবে করতে হয়, উন্নতি কীভাবে করতে হবে- সেটাও আমরা জানি। সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ওপর এই ভরসা কি আপনাদের আছে? প্রধানমন্ত্রীর এ প্রশ্নের জবাবে উপস্থিত জনতা দু’হাত তুলে সমস্বরে বলেন, হ্যাঁ আছে। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, নিশ্চয় এই ভরসাটুকু আমাদের (আওয়ামী লীগ) ওপর আপনারা রাখবেন।

শীতের এই দুপুরে অফহোয়াইট পাড়ের নীল শাড়ি পরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বেশ প্রাণবন্ত দেখাচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রীকে সিলেটে স্বাগত জানাতে মোড়ে মোড়ে অসংখ্য তোরণ নির্মাণ করা হয়। নগরীকে সাজানো হয় মনোরম সাজে। হাজার হাজার মানুষ রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে পুণ্যভূমি সিলেটে তাদের নেত্রীকে স্বাগত জানান। জনসভা শুরুর অনেক আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ। মাঠের বাইরেও ছিল বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষের সমাবেশ। তারা প্রিয় নেত্রীকে একনজর দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে এসে এ জনসমুদ্রে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন সড়কে সংস্কার কাজ করা হয়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে স্থাপন করা হয় শোভাবর্ধনকারী ফুলগাছ।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ যখন উন্নতির দিকে এগিয়ে যায়, মানুষ যখন সুখে-শান্তিতে থাকে মানুষের জীবনে যখন শান্তি ফিরে আসে, আমরা দেখি তখন ক’জনের মনে খুব অশান্তি দেখা দেয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে কোনো জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের স্থান হবে না। আপনারা সজাগ থাকবেন। লক্ষ্য রাখতে হবে, কেউ যেন জঙ্গিবাদীর কাছে যেতে না পারে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচার অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ কলুষমুক্ত হবে। মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের সময় সিলেটের শিক্ষা, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ নানা ধরনের উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য-প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো, দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক খাতসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বাঙালি জাতির যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের ক্ষমতার সময় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক বোমা হামলা হতো বলে মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকার সময় সিলেটে আওয়ামী ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের হত্যার কথা তুলে ধরে তাদের স্মরণ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরও বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই দেশের স্বাধীনতা পেয়েছেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই আজকে দেশের উন্নতি হচ্ছে। কাজেই নৌকা মার্কা কখনও ভুলবেন না। নৌকাই শান্তি, সমৃদ্ধি, উন্নতি দেবে।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ জনসভায় আরও বক্তৃতা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, স্থানীয় এমপি মাহমুদউস সামাদ চৌধুরী কয়েস, ইমরান আহমেদ, মহিবুর রহমান মানিক, কেয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা আশফাক আহমেদ, সৈয়দা জেবুননেসা হক, শফিকুর রহমান চৌধুরী, আসাদউদ্দিন আহমেদ, নাসিরউদ্দিন খান, বিজিত চৌধুরী, ড. আহমেদ আল কবীর, এসএম জাকি প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এখান থেকে সরাসরি তিনি হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে যান। এরপর হযরত শাহপরান (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর যান শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মদনমোহন কলেজে। এই কলেজের হীরক জয়ন্তী (প্লাটিনাম জুবিলি) অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ৭৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ কলেজের শিক্ষক-ছাত্রছাত্রীরা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। তিনি এখানে শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য বেশ কয়েকজনকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ গড়তে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সেজন্য সরকার শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এর বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত দেশের শিক্ষার্থীরা যেন আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা পায় সেজন্যও সরকার কাজ করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ গড়তে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য আমাদের সরকার শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এর বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে অর্থের কোনো অভাব হয় না। যার জন্য শিক্ষাকে আমরা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পেরেছি।

মদনমোহন কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে কলেজের এ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, মদনমোহন কলেজের প্রতিষ্ঠাতার ছেলে সুখেন্দ্র বিকাশ দাস, আওয়ামী লীগ নেতা আশফাক আহমেদ, আসাদ উদ্দিন আহমেদ ও বিজিত চৌধুরী এবং অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ আবুল ফতেহ বক্তৃতা করেন। প্লাটিনাম জুবিলি উপলক্ষে ‘বাঙালির রাষ্ট্রচিন্তা ও স্বাধীনতা বাংলাদেশের অভ্যুদয়’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডক্টর হারুন অর রশিদ। অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী এ কলেজের সাবেক ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মদনমোহন কলেজের এ অনুষ্ঠান শেষে সার্কিট হাউসে গিয়ে দুপুরের খাবার সম্পন্ন করেন। তারপর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভায় গিয়ে যোগ দেন। জনসভা শেষে তিনি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। গতকালই তিনি হেলিকপ্টারে ঢাকা ফিরে গেছেন।

উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবন, আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স, জৈন্তাপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, সিলেট এপিবিএনের ব্যারাক ভবন, সিলেট জেলার ওসমানীনগর থানা ভবন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নির্মিত হোস্টেল ভবন, সিলেট সদরের ৩০ শয্যাবিশিষ্ট খাদিমপাড়া হাসপাতাল, এমসি কলেজের মাঠের সীমানা প্রাচীর ও গেট, সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালকে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু হাসপাতালে রূপান্তর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবনের উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী সিলেট আউটার স্টেডিয়াম, খসরুপুর বাজার জিসি-পৈলানপুর-বালাগঞ্জ জিসি সড়ক উন্নয়ন, হরিপুর জিসি-গাছবাড়ী জিসি সড়ক উন্নয়ন (কানাইঘাট অংশ), মৈয়াখালী বাজার-আর অ্যান্ড সুইচ (বারোহাল ইউপি অফিস) ভায়া হাটুবিল মাদ্রাসা সড়ক উন্নয়ন, নারী পুলিশ ডরমেটরি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ, শাহ পরান থানা ভবন নির্মাণ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বিভাগীয় ও জেলা অফিস নির্মাণ, সিলেট বিভাগীয় ও জেলা এনএসআই কার্যালয় ভবন নির্মাণ, তামাবিল স্থলবন্দর নির্মাণ, হযরত গাজী বোরহান উদ্দিন (রহ.) মাজার ৩ তলাবিশিষ্ট মসজিদ, মহিলা ইবাদতখানা ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ, সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ও সিলেট জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় ভবন নির্মাণ কাজ এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্কের বাস্তবায়নাধীন সিলেট ইলেকট্রনিক সিটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।