লাখো আলেমের ফতোয়ায় অংশ নিচ্ছে হেফাজত
আলেমদের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা থাকলেও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় তারা এবার একই মঞ্চে একত্রিত হচ্ছেন। এই লক্ষ্যে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘এক লাখ আলেমে’ ফতোয়া কার্যক্রম অংশ নিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আলেমদের দেওয়া ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ১২ শীর্ষ আলেম। এছাড়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে থাকা মুফতিদেরও স্বাক্ষর সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ২ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া কার্যক্রমে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার মুফতি স্বাক্ষর করেছেন। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই লক্ষাধিক আলেমের স্বাক্ষর সংবলিত ফতোয়া প্রকাশ করা হবে। ফতোয়া কমিটির প্রধান ও শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
জানা গেছে, হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত চট্টগ্রামের দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান মুফতি মাওলানা আব্দুস সালামসহ মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক জঙ্গিবাদবিরোধী ফতোয়ায় স্বাক্ষর করছেন। এদিকে, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ১২জন ফতোয়ায় স্বাক্ষর করছেন। যদিও হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের অভিযোগ কৌশলে তাদের কাজ থেকে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২ জানুয়ারি রাজধানীর খিলগাঁওয়ে জামিয়া ইকরা প্রাঙ্গণে জঙ্গিবাদবিরোধী ফতোয়ায় একলাখ মুফতি আলেমের স্বাক্ষর কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিনে উপস্থিত প্রায় পাঁচ শ আলেম সন্ত্রাসবিরোধী ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেন। এ কার্যক্রমে নারী মুফতিদের স্বাক্ষরও নেওয়া হবে। এছাড়া, এই কার্যক্রমে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন স্থানের মসজিদ-মাদ্রাসা, ধর্মভিত্তিক রাজনীতিবিদের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আলেমদের স্বাক্ষরিত এই ফতোয়া মুদ্রণ করে ১০টি খণ্ডে ৭টি কপি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, ওআইসি, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাঠানো হবে ।
জানা গেছে, ফতোয়া সংগ্রহের জন্য ৭ সদস্যের ফতোয়া সংগ্রহ কমিটি গঠন করা হয়েছ। কমিটি সারাদেশের মসজিদ-মাদ্রাসাসহ মুফতিদের কাছ থেকে ফতোয়ায় স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন। এর আগে গত বছর ১৭ডিসেম্বর পুলিশ সদর দফতরে আয়োজিত ‘ইসলামের দৃষ্টিতে জঙ্গিবাদ: বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দেশের আলেমদের ফতোয়া দেওয়ার বিষয়ে মত দেন ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। সেই সভায় মহাপুলিশ পরির্দশক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আলেমদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে আহ্বান জানান।
এদিকে, গত বছর নভেম্বরে আইএসবিরোধী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর যাবতীয় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ভারতের ১ হাজার ইমাম, মুফতি ও ইসলামি চিন্তাবিদ স্বাক্ষরিত একটি ‘ফতোয়া’ প্রকাশ করা হয় ভারতে। এ ফতোয়া জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছেও পাঠান তারা। ওই ফতোয়ায় বলা হয়, ‘ইসলাম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আর আইএস সন্ত্রাসকে উসকে দিচ্ছে।’ এছাড়া, বিভিন্ন মুসলিম দেশেও ১৫ খণ্ডের ফতোয়াটি পাঠানো হয়। অন্যান্য দেশের আলেমদের এভাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করার আহবানও করা হয়।
এ কার্যক্রম প্রসঙ্গে ওলামা মাশায়েখ সংহতি পরিষদের চেয়ারম্যান ও শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জঙ্গিাবাদের বিরুদ্ধে সারাদেশের আলেমরা ফতোয়ায় অংশ নিচ্ছেন। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শিয়া-সুন্নি, আহলে হাদিসসহ সবার ঐক্যবদ্ধ সম্পৃক্ততার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের দারুল উলুম হাটহাজারীর মাদ্রাসার প্রধান মুফতি মাওলানা আব্দুস সালামসহ মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছেন। হেফাজতের মহাসচিবসহ প্রায় ১২জন ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছেন। সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছি। আশা করি, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সবার স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে পারব।
ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডকে ইসলাম সমর্থন করে না। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর উস্কানিতে দেশেরে একটি চক্র তরুণদের বিপথগামী করছে। দেশের সব আলেম সম্মিলিতভাবে জঙ্গিাবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিলে ধর্মের সঙ্গে জঙ্গিবাদের যে সম্পর্ক নেই, তা বিশ্বের কাছে স্পষ্ট হবে। এতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
হেফাজত নেতাদের ফতোয় স্বাক্ষর প্রসঙ্গে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ইসলাম কখনও জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না। হেফাজত সব সময় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছে। টঙ্গিতে এজতেমার সময় মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ হেফাজত নেতাদের স্বাক্ষর নিয়েছেন কৌশলে। তিনি তাদের কাছে পরিষ্কার করে জানাননি এটা তার কার্যক্রমের জন্য নিচ্ছেন।