শিল্প-সেবা খাতের জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিল্প ও সেবা খাতের জন্য এবার ১৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করল বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বিতরণ করা ঋণের অর্ধেক ব্যাংকগুলো মাত্র ৪ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে পুনঃঅর্থায়ন নিতে পারবে।
এসএমই খাতের জন্যও শিগগিরই ১০ হাজার কোটি টাকার আলাদা একটি তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর তারল্য সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ৯ শতাংশ সুদ পাবে। তবে শিল্প ও সেবা খাতে সরকার সাড়ে ৪ শতাংশ ভর্তুকি দেবে। আর সাড়ে ৪ শতাংশ নেওয়া হবে গ্রাহক থেকে। আর এসএমই খাতের ৯ শতাংশের মধ্যে সরকার দেবে ৫ শতাংশ। প্রথমে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব উৎস থেকে এ ঋণ বিতরণের জন্য বলা হয়। তবে এখন উভয় ক্ষেত্রে তহবিলের আকারের অর্ধেক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন হিসেবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৩০ হাজার কোটি টাকার তহবিলের বিষয়ে ইতিপূর্বে সার্কুলার জারি করা হয়। উক্ত সার্কুলারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে চলতি মূলধন ঋণ দেবে। উক্ত আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের তারল্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব উৎসে ১৫ হাজার কোটি টাকার একটি আবর্তনশীল পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়েছে। এ স্কিম থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিতরণের ৫০ শতাংশ অর্থ পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা দেওয়া হবে। এ স্কিমের মেয়াদ হবে তিন বছর।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ স্কিম থেকে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে পুনঃঅর্থায়ন পাবে। পুনঃঅর্থায়ন নেওয়ার একবছর পর থেকে মার্চ, জুন, সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বও এভাবে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে সুদসহ পরিশোধ করতে হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিতরণকৃত ঋণের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ এ স্কিমের আওতায় পুনঃঅর্থায়ন পাওয়া যাবে। পুনঃঅর্থায়ন নেওয়ার আগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একটি অংশগ্রহণ চুক্তি করতে হবে। এখান থেকে ঋণ নিয়ে কোনোভাবে অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করলে বিদ্যমান সুদেও অতিরিক্ত ২ শতাংশহাওে সুদসহ অর্থ ফেরত দিতে হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণের পরবর্তী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে আগের মাসে বিতরণের মোট অর্থেও ৫০ শতাংশের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করবে। এভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৩ বছর পর্যন্ত নিজস্ব সীমার মধ্যে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা নিতে পারবে। পুনঃঅর্থায়নের অর্থ একবছর পর থেকে সর্বশেষ ত্রৈমাসিকের সুদসহ বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশোধ করতে হবে। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ বা আদায়ের সকল দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওপর ন্যস্ত থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি ধীর হয়ে পড়েছে। এসময়ে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে মানুষের হাতে টাকা বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণের (সিআরআর) হার সাড়ে ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। এতে করে ব্যাংকগুলোর হাতে ১৯ হাজার কোটি টাকার মতো ঋণযোগ্য তহবিল জমা হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার ৩৫০ কোটি ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫০০ কোটি ডলার করা হয়েছে।
শস্য ও ফসল খাত ব্যতীত কৃষির অন্যান্য খাত তথা মৌসুম ভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রানিসম্পদ খাতে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) বা ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তিন হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। রপ্তানি খাতের প্রি-শিপমেন্ট ঋণের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল করা হয়েছে।