জানতাম বিশ্বকাপ দলে থাকতে পারব

000337Sports-KK-08-06-2018-6

বিশ্বকাপের জন্য জার্মান দল ঠিক করতে যে মানুষটিকে নিয়ে সবচেয়ে ভেবেছেন কোচ, তাঁর নাম মানুয়েল নয়ার। অনেকের মতে বিশ্বের সেরা গোলরক্ষক, ‘সুইপার কিপার’ হিসেবে খেলে দলকে বাড়তি সুবিধা দেন তিনি। কিন্তু চোটের কারণে লম্বা সময় ছিলেন মাঠের বাইরে। নয়ার ফিরেছেন, জানিয়েছেন বিশ্বকাপের চাপ সামাল দিতে তিনি তৈরি

 

প্রশ্ন : গোলরক্ষক হিসেবে নিজেকে বিশ্লেষণ করতে বলা হলে কিভাবে তা করবেন?

মানুয়েল নয়ার : আমি একটু ঝুঁকিপূর্ণ বটে, তবে গোলবারের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য দাঁড়াতে হয় আমাকে। কারণ আপনার ওপর সতীর্থদের এই আস্থার জায়গাটি তৈরি করতেই হবে। ব্যক্তিজীবনে আমি প্রচণ্ড গতিতে গাড়ি চালাতে পছন্দ করি। একই সঙ্গে আমি কিন্তু সিট বেল্টও বেঁধে নেই।

প্রশ্ন : গোলরক্ষক হিসেবে কাকে সব সময় আদর্শ মেনে এসেছেন?

নয়ার : এখানে একজন নয়, একাধিক আছেন। যেমন জার্মানিতে একজন গোলরক্ষকের জন্য অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব জেন্স লেহম্যান। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমার আদর্শ নেদারল্যান্ডসের এদউইন ফন দার সার। উনি লেহম্যানের তুলনায় অনেক আধুনিক একজন গোলরক্ষক। নিজেকে অন্য পর্যায়ে তুলে নেওয়া এই গোলরক্ষক ডান-বাম, খেলতে পারতেন দুই পায়েই। নির্ভয়ে বক্সের বাইরে বেরিয়ে আসতেন। ক্রসও খুব ভালো সামলাতে জানতেন তিনি। আবার অলিভার কানের রিফ্লেক্স এবং কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতাও আমার ভালো লাগত। সেই অর্থে তিনিও আমার আদর্শ। এটা অনেকটা একাধিক কোচের সহায়তা নেওয়ার মতো ব্যাপার। যাঁর যেটা ভালো, আমি সেটিই গ্রহণ করার চেষ্টা করে গেছি।

প্রশ্ন : নিয়মিতই বক্সের বাইরে এসে সতীর্থদের পাস দিতে দেখা যায় আপনাকে। কখনো মনে হয় না যে খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে?

নয়ার : আধুনিক গোলরক্ষক হিসেবে আপনাকে আক্রমণাত্মক চিন্তা করতেই হবে। এবং সেই সঙ্গে দলের দ্রুত আক্রমণ শানানোর কাজে সহযোগীও হতে হবে। বায়ার্ন মিউনিখ বলুন কিংবা জার্মানি, আমার এই দুই দলই কিন্তু শতকরা ৬০ শতাংশ বলের দখল রেখে থাকে। তাই আমাকে বক্সের বাইরে বেরিয়ে পেছন থেকে সামনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির খেলোয়াড়দের বলের জোগান দেওয়ার জন্য পাসিং গেমটা খেলতে হয়। আমার খেলার ধরনের সঙ্গে এই ব্যাপারগুলোও একাকার হয়ে গেছে। আমার সেই স্বাধীনতাও আছে, কারণ আমি দুটি শক্তিশালী দলেই আছি।

প্রশ্ন : গোলরক্ষকদের তো খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কখন ক্রস ধরতে এগিয়ে আসবেন, কখন থ্রু বল ধরতে বক্স ছেড়ে বের হবেন আর কখনই বা ভেতরে থাকবেন, এটা সিদ্ধান্ত নেন কিভাবে?

নয়ার : আমি প্রথমে দেখি বক্সের ভেতরের খেলোয়াড়রা কে কে। তাদের চিনতে হবে, তাদের আচরণের ধরনটা বুঝতে হবে। দেখতে হবে চট করে বলের কাছে পৌঁছে যাওয়ার রাস্তা কি আছে নাকি মানুষের বাধা আছে। যদি মনে হয় বলের নাগাল পাব না, তখন দাঁড়িয়েই থাকি।

প্রশ্ন : সবশেষ মৌসুমে মাত্র ৩৬০ মিনিট প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলতে পেরেছেন। গত সেপ্টেম্বর থেকে চোটের জন্য বাইরে। এই সময়টা কেমন গিয়েছে?

নয়ার : কেমন গিয়েছে, তার সবটা বলতেও চাই না। তবে এটা বলব যে একজন ফিট খেলোয়াড়েরও মৌসুমে ভালো-খারাপ সময় যায়। আমাকে তো পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েও যেতে হয়েছে। এটা ছিল খুবই দীর্ঘ এক কঠিন সময়। একই সঙ্গে সময়টায় কোচ-ফিজিওদের সঙ্গে খুব মজাও করেছি। নিজেও ইতিবাচক ছিলাম। আমি জানতাম যে আমি বিশ্বকাপ দলে থাকতে পারব।

প্রশ্ন : কিন্তু চোট থেকে এসেই বিশ্বকাপের মতো আসরের চাপ নেওয়াও তো খুব কঠিন বিষয়। সেটি কিভাবে সামলাবেন বলে ভাবছেন?

নয়ার : ওই যে বললাম, আমার মাথায় সব সময়ই ইতিবাচক ভাবনা ঘুরপাক খেয়েছে। ওভাবে না ভাবলে আসলে আমি এই জায়গায় থাকতেই পারতাম না। সতীর্থদের কাছ থেকেও দারুণ ফিডব্যাক পেয়েছি। এটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। আর নিজেও নিশ্চিত যে পুরো বিশ্বকাপের চাপ আমি নিতে পারব।

প্রশ্ন : এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার ভেতর একবারও কি মনে হয়নি যে হয়তো খেলা হবে না বিশ্বকাপে?

নয়ার : আমার একটা পরিষ্কার লক্ষ্য ছিল সামনে। আমি চেয়েছিলাম বায়ার্ন মিউনিখের হয়েও খেলার মতো অবস্থায় যেতে। আমার দুর্ভাগ্য যে ইয়ুপ হেইঙ্কেসের নতুন মেয়াদে একটি ম্যাচও খেলতে পারিনি আমি। যদিও আমার বিশ্বাসটা সব সময় ছিল যে আমি বিশ্বকাপের আগে সেরে উঠতে পারব। আমি কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনি, কিন্তু মনোবলও হারাইনি।

প্রশ্ন : আপনি বিশ্বকাপ দলে থাকা মানে তো বার্নড লেনোর বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়া? ব্যাপারটাকে কিভাবে দেখছেন?

নয়ার : গোলরক্ষণ কোচ আন্দ্রেস কোপকে ও মূল কোচ ইওয়াখিম ল্যোভের জন্য এটা ছিল একটা জটিল সিদ্ধান্ত। খারাপ লাগছে যে লেনোকে ইতালির ক্যাম্প থেকে বাড়ির পথ ধরতে হয়েছে। আমরা সবাই জানি সে কতটা ভালো গোলরক্ষক। কোচকে সব সময় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সে নিজেও সেটা জানে এবং গোটা দলকে সেটা মেনেও চলতে হয়। এখন আমাদের সামনের দিকে তাকাতে হবে।