আসল লড়াই শুরু আজ

235010kalerkantho-2018-06-03-F-33

ক্রীড়া প্রতিবেদক : খুব একচোট কনসার্ট হয়ে গেল বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে। সবার সমবেত কণ্ঠে ইউটিউবে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া আরমান আলিফের গান ‘অপরাধী’। ব্যাটকে গিটার বানিয়ে বাজালেন নাজমুল হাসান। নাগিনের মতো নয়, ভিন্ন মুদ্রায় নাচলেন তিনি। সঙ্গী আরিফুল হকও কম যান না। ওদিকে সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, আবুল হাসানরা বেঞ্চকে বানালেন ড্রাম। হই-হুল্লোড়, আনন্দের জলস্রোতে কী এক সুখী পরিবারের ছবিই না!

বৃষ্টির কারণে প্রস্তুতি ম্যাচ শুরু হতে দেরি। তখনই অমন ফুরফুরে মেজাজে দেরাদুনে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম। ম্যাচ শেষে মেজাজটা অবশ্য খিঁচড়েই যাওয়ার কথা। ১৬ বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে নিজেদের শক্তির জানান যে দিয়েছে আফগানরা! প্রস্তুতি ম্যাচে প্রস্তুতিটাই আসল— সত্য। কিন্তু এমন বাজে হারের পর বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসে চোট লাগাটা স্বাভাবিক।

তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে আজ বাংলাদেশ মাঠে নামবে ওই নড়বড়ে হয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস নিয়েই।

এমনিতেই গেল কিছুদিনের বাংলাদেশের ক্রিকেট আবহে আফগানিস্তানকে নিয়ে সংশয়ের চোরাস্রোত। বিশেষত আইপিএল মাতানো রশিদ খান জুজুতে আক্রান্ত সবাই। আইপিএলের আরেক সফল পারফরমার মুজিব উর রহমানও রয়েছেন। এঁদের কিভাবে সামলাবেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা, এ নিয়ে এত দিন গবেষণা হয়েছে বিস্তর। এখন দেখা গেছে, আফগানিস্তানের পরের সারির বোলারদেরও সামলাতে পারেনি সফরকারীরা। তাইতো পরশুর প্রস্তুতি ম্যাচে তারা আটকে যায় ছয় উইকেটে ১৪৫ রানে। যে স্কোর আবার অনায়াসেই টপকে যায় আফগানদের দ্বিতীয় সারির দল।

এখানে বাংলাদেশের রক্ষাবর্ম ওই সেটিই—প্রস্তুতি ম্যাচ! যেন প্রস্তুতি ম্যাচে জিতলে প্রস্তুতিটা ঠিকঠাক হয় না!

ভারতের দেরাদুনে নিজেদের ‘ঘর’ বানিয়ে নিয়েছে আফগানিস্তান অনেক দিন হলো। সেখানেই আজ থেকে শুরু বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ। কাল সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এলেন দুই দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও আসগার স্টানিকজাই। বাংলাদেশ ছাড়ার আগে সিরিজে আফগানিস্তানকে এগিয়ে রেখেছিলেন সাকিব। কাল অমন কিছু না বললেও প্রতিপক্ষের প্রশংসা করেছেন বারবার। নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলার তাগিদও সে কারণে, ‘সেরা ক্রিকেটটাই আমরা খেলতে চাই। প্রত্যেকে যেন পারফরম করতে পারি, সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদি এক কিংবা দুজন খেলোয়াড় পারফরম করে তাহলে আমরা জিততে পারব না। ভালোভাবে খেলার প্রস্তুতি প্রত্যেকের থাকতে হবে। যদি আমরা সবাই অবদান রাখতে পারি এবং নিদাহাস ট্রফির মতো খেলতে পারি তাহলে ম্যাচ জেতার সুযোগটা থাকবে বেশি।’

ওই নিদাহাস ট্রফিই বাংলাদেশের জন্য বড় প্রেরণা। কুড়ি-বিশের এই ফরম্যাটে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা ততটা সড়গড় নয়—এই মতবাদ জেঁকে বসেছিল প্রবলভাবে। শ্রীলঙ্কার ওই টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই জয়ে এবং ফাইনালেও ভারতকে কাঁপিয়ে দিয়ে তাতে বদলের সুর। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটি তাই এসিড টেস্ট। এখানে স্বচ্ছন্দে জিতে ফেরার চ্যালেঞ্জ তাঁদের। প্রতিপক্ষ নিজেদের ‘ঘরে’ খেলবে, রশিদ-মুজিব স্পিন জুটি রয়েছে, প্রস্তুতি ম্যাচে জিতেছে আফগানিস্তানের দ্বিতীয় সারির দল এবং আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়েও এগিয়ে আফগানিস্তান— এসব মিলিয়ে চ্যালেঞ্জটি তাই হেলাফেলার নয়।

বাংলাদেশ অধিনায়ক তাই সতর্ক। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং সব বিভাগে ভালো করার তাগিদ সাকিবের কণ্ঠে, ‘আমাদের জন্য প্রত্যেক বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ। শুধু পেস বোলিং নয়, স্পিনারদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। বোলিং ইউনিটকে ভালো খেলার চেষ্টা করতে হবে। একইভাবে ব্যাটিংয়েও। সব জায়গায় আমাদের ভালো করতে হবে, কারণ আফগানিস্তান অনেক শক্তিশালী। ওদের বিপক্ষে তাই আমাদের সেরা খেলাটা খেলতে হবে।’ নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় কাজ করার ব্যাপার উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি, ‘আমরা তেমন কিছু নিয়ে কাজ করিনি। অনেক জায়গায় উন্নতি করতে হবে এবং সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। তিনটি বিভাগেই আমাদের ভালো করতে হবে।’

বাংলাদেশের প্রস্তুতি পর্ব অবশ্য খুব একটা ভালো হয়নি। ইনজুরির কারণে শেষ মুহূর্তে দল থেকে বাদ পড়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। আইপিএল থেকে ইনজুরি নিয়ে ফিরেছিলেন এবং সে ব্যথা বেড়ে যাওয়ায় জাতীয় দলের সঙ্গে যেতে পারেননি দেরাদুন। সাকিব দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পরে। আইপিএল থেকে দেশে ফিরে দুই দিন বিশ্রাম নিয়ে গিয়েছেন তিনি। তামিম ইকবালও পরে যোগ দিয়েছেন তবে ভিন্ন কারণে। বিশ্ব একাদশের হয়ে খেলার জন্য ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন এই বাঁহাতি ওপেনার।

এর আগে দুই দল একবারই মুখোমুখি হয়েছিল এই ফরম্যাটে। ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সেখানে ৯ উইকেটের বিধ্বংসী জয় বাংলাদেশের। আফগানিস্তানকে ৭২ রানে অলআউট করে সে জয় তুলে নিয়েছিল। কিন্তু পরের চার বছরে আফগানরা আর সে জায়গায় পড়ে নেই। তারা টেস্ট মর্যাদা পেয়েছে, বাছাই পর্ব পেরিয়ে ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে, আবার রশিদ-মুজিবের মতো তাদের ক্রিকেটাররা আইপিএল মাতাচ্ছেন। এসব কারণ মিলিয়ে কিনা একটু বুঝি ব্যাকফুটে থেকেই সিরিজ শুরু করছে বাংলাদেশ!

তবে নিজেদের খেলাটি খেলতে পারলে যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জেতাটা খুব কঠিন নয়, তা-ও জানা আছে সাকিব-মুশফিক-মাহমুদ উল্লাহদের। তখন হয়তো ড্রেসিংরুমে আরেক দফা কনসার্টই হবে। সেবার তা বৃষ্টি-আলস্যে নয়, বিজয়ের উল্লাসে!