তালিকার বাইরেও অনেক মাদক কারবারি
রাজধানীর মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ ৬০০ জনের হাতে। পুলিশ, র্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ (ডিএনসি) গোয়েন্দা তালিকায় যেসব কারবারির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই এক বা একাধিকবার মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে অল্প কিছু ব্যক্তিকে শনাক্ত করা গেছে। প্রশাসনের তালিকা নিয়ে কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মফস্বল এলাকায় শীর্ষ মাদক কারবারিরা চিহ্নিত হলেও রাজধানীতে তারা রয়ে গেছে তালিকার বাইরে। তাদেরই বলা হচ্ছে ‘হোয়াইট কালার’ মাদক কারবারি।
শীর্ষ মাদক কারবারিদের জন্য ঢাকা ভাসমান এলাকা হওয়ায় তাদের শনাক্ত করতে পারে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বড় চালানসহ কেউ ধরা পড়লে তখন বেরিয়ে আসে তথ্য। আর আগে ১৮টি স্পট বা আখড়াকেন্দ্রিক মাদক কারবার চললেও এখন সেখানে নেই বড় কারবারিরা। বিপরীতে তিন শতাধিক খুচরা বিক্রেতা এলাকাভিত্তিক মাদক বিক্রির দায়িত্ব পালন করছে। বড় কারবারিরা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে বাইরের কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকায় শতাধিক বড় ডিলার বা কারবারি রয়েছে। পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উঠে এসেছে শতাধিক ব্যক্তির নাম। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের নেতা, কাউন্সিলর ও পুলিশ কর্মকর্তার নামও রয়েছে।
আর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সোর্স পরিচয়ে মাদক কারবার চালাচ্ছে শতাধিক ব্যক্তি। প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন, ঢাকায় বড় কারবারিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। খুচরা কারবারিদের বিরুদ্ধে এলাকাভিত্তিক অভিযান চলছে।
জানতে চাইলে ডিএনসির পরিচালক (অপারেশন) সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজধানীতেও বড় মাদক কারবারিদের অনেক সময় শনাক্ত করা যায় না। তবে ইশতিয়াকসহ কয়েকজন এখন শনাক্ত। তাদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। বড় কারবারিদের ধরতে প্রযুক্তি দিয়ে কিছু গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাতে হয়। কিন্তু তা অধিদপ্তরের কাছে নেই।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, রাজধানীতে মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারে ব্যাপক অভিযান শুরু হয়েছে।
এলাকাভিত্তিক মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণকারীদের মধ্যে ইশতিয়াক ওরফে কামরুল মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প থেকে ইয়াবার কারবার শুরু করেছিলেন। এই শীর্ষ ডিলার ঢাকার সব প্রান্তে ইয়াবা সরবরাহ করেন। জেনেভা ক্যাম্পকেন্দ্রিক আরেক শীর্ষ ডিলার নাদিম ওরফে পঁচিশ। জেনেভা ক্যাম্পের ৪৯ জন তালিকাভুক্ত কারবারির মধ্যে ইশতিয়াকের সহযোগী মোল্লা আরশাদ ও তানভীর আদনান, পাপিয়া, পাপিয়ার স্বামী পাচু, ভুলু, সেলিম ভাইয়া, তাওয়া, জনি, চুসতা সেলিম ও তাজমহল রোডের শহীদুজ্জামান নাভিদ উল্লেখযোগ্য। জেনেভা ক্যাম্পের কারবারিদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার অভিযোগ আছে স্থানীয় ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধে। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। মিজানের ব্যক্তিগত সহকারী মর্তুজা আহমেদ খান বলেন, কাউন্সিলর সৌদি আরবে রয়েছেন। মাদকে তাঁর জড়িত থাকার অভিযোগ সঠিক নয়।
উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ফজলুল করিম ঢাকার শীর্ষ ইয়াবা ডিলার। পিরোজপুর থেকে ঢাকায় এসে খিলগাঁও বনশ্রীতে থেকে উত্তরা পর্যন্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন তিনি।
বনানীর বড় বাজার কড়াইল বস্তির মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রক বাবা কাশেম ১৬টি মাদক মামলার আসামি। একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৫ এপ্রিল বনানীর কড়াইল বস্তি থেকে কাশেমকে আটক করেন বনানী থানার এসআই আবু তাহের। পরে মাত্র ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এসআই আবু তাহের ভূইয়া বলেন, ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে। আমি এমন কিছু করিনি।’
‘হোয়াইট কালার’ কারবারি হিসেবে গোয়েন্দা তালিকায় উঠে এসেছে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা ও একটি মানি এক্সচেঞ্জের মালিক মহসিনের নাম। রাজধানীর আরেক বড় ইয়াবা ডিলার কাওলার সিভিল এভিয়েশন কোয়ার্টারের বাসিন্দা টিটু। তিনি ‘তৈমুর মানি এক্সচেঞ্জ’ এবং ‘মহুয়া হোটেল’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। এ দুজনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।
মুন্সীগঞ্জের রিয়াদ উল্লাহ ও মধ্য বাড্ডার আদর্শনগরের মোশাররফ হোসেন ওরফে পিচ্চি মোশারফের নিয়ন্ত্রণে চলে বাড্ডা এলাকার ১০-১২টি স্পট। কক্সবাজারের সাব্বির হোসেন, ভাটারার সালাউদ্দিন, নতুন বাজারের আনোয়ারা বেগম ওরফে আনু ও নূরের চালার রাজু আহম্মেদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ভাটারার ইয়াবা সিন্ডিকেট। খিলক্ষেতের বেপারীপাড়ার নাজমা ইসলাম, ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটার জামাল সরদার ও তুরাগের রেজাউল এলাকার মাদক নিয়ন্ত্রক। কাফরুলের ‘সি’ ব্লকের রফিকুল ইসলাম রুবেল এলাকার মাদক নিয়ন্ত্রক। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর কাউন্সিলর জামাল মোস্তফার ছেলে রুবেল। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আছে। তারাই ষড়যন্ত্র করে আমার ছেলের নাম দিয়েছে। এটা ঠিক নয়।’
পল্লবীর ১০ থেকে ১১ নম্বর সেকশন পর্যন্ত পুরো এলাকায় মাদকের গডফাদার বিহারি নেতা মোস্তাক ও তার ছেলে মিনিস্টার। মোস্তাক ঢাকা উত্তরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল ওয়াদুদ নান্নুর আশীর্বাদপুষ্ট বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে কাউন্সিলর নান্নুর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাঁর মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
রূপনগরের চলন্তিকা ঝিলপাড় বস্তিতে মাদক বাণিজ্য চালানো নজরুল ইসলাম নাজু এখন এলাকাছাড়া। বস্তির বাইরে নিজ কার্যালয়ে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজ্জব হোসেন কারবারি নজুকে সহায়তা করছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন রজ্জব হোসেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নজুর আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হলেও এখনো রূপনগরে মাদক কারবার চালাচ্ছে তার সহযোগী হাজেরা, নাসির, মুসলিম, জাকির ও সুমন।
সবুজবাগের বাসাবোর ওহাব কলোনির শীর্ষ মাদক কারবারি সাফিয়া আক্তার শোভা গড়ে তুলেছে এলাকার নারী সিন্ডিকেট। কলোনিতে মাদক বিক্রি করে তানিয়া, রাজিয়া, জোসনা, দোলা ওরফে দুলু, মজিবুর, মনোয়ার ও আলেয়া। নন্দীপাড়ার ক্যাম্পে শামসুন্নাহার ওরফে শামছুন্নী, জোছনা, মিনু আক্তার, অনিল কুমার মণ্ডল, রতন কুমার মণ্ডল, গুগদার বিল্পু ও কালাচান। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে শোভার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা ওরফে বাবরী মোস্তফার নাম উঠে এসেছে।
কলাবাগানে ইয়াবা ডিলার জাহিদ ওরফে টাইগার বাবু, নাজমুস সাকিব ভুইয়া ও শামিম। বাবুকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার অভিযোগ আছে কাঁঠালবাগান ইউনিট আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিন্টুর বিরুদ্ধে।
কামরাঙ্গীরচরে ইয়াবা বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক নসু। তার ভগ্নিপতি কামরাঙ্গীরচরের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহসম্পাদক সোনা মিয়ার পুরো পরিবার মাদকে জড়িত। ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুনের ভাই নাদিম ইয়াবা ও হেরোইন কারবারি হিসেবে পরিচিত।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, লেদার টেকনোলজি কলেজকেন্দ্রিক হাজারীবাগ থানা যুবলীগ সদস্য রাইসুল ইসলাম রবিন, ধানমণ্ডির ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিকেন্দ্রিক থানা ছাত্রলীগের সভাপতি হাওলাদার সুজাউদ্দিন তুহিন, রামপুরায় যুবলীগ নেতা তানিম (অরুনের ভাগ্নে), মেরুল বাড্ডায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জয়নাল, খিলগাঁওয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদ বাবু, সবুজবাগে রিপন বড়ুয়া এবং ধানমণ্ডি থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাজিমউদ্দিন বাবুর নাম মাদক কারবারি হিসেবে গোয়েন্দা তালিকায় রয়েছে।
নয়াপল্টনের ইয়াবা ডিলার ইফতেখার রহমান জয়কে পৃষ্ঠপোষকতা করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা জামান পপি। রমনার মাদক ব্যবসায়ী রাজুর পৃষ্ঠপোষকতা করেন ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি জালাল। লালবাগের কারবারি মহসীন আজাদ ঢাকা দক্ষিণের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশারফ হোসেনের ছোট ভাই (দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর গতকাল মোশারফ মারা গেছেন)।
সরেজমিন জানা যায়, মুগদা থানা এলাকার টিটিপাড়ার রেললাইন-সংলগ্ন ‘মেথরপট্টি’তে ফেনসিডিল, গাঁজা ও ইয়াবার সঙ্গে চোলাই মদও বিক্রি হয়। স্পটটির নিয়ন্ত্রক সন্ত্রাসী নাসির। সে এখন ইতালি প্রবাসী। সেখানে বসেই সহযোগীদের দিয়ে সে চালায় বাণিজ্য। সেখানে বর্তমানে বিক্রেতা তছলিমা ও জোছনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ১৪ ছাত্রলীগ নেতার ছত্রচ্ছায়ায় রাজীব, রাশিদা, চানখারপুলের নার্গিস ওরফে নাগিনা, পিরু, আলমগীর, শাহবাগে শামীম শিকদার, শহিদুজ্জামান, চাঁনখারপুলের পারভিন আক্তার, আসমা আহমেদ ক্যাম্পাসের আশপাশে মাদক কারবার করছে। মতিঝিলের আরামবাগে ও আশপাশে লিটন, সাইফুল হাসান মামুন, নাহিদ, সজিব ইয়াবা ও ফেনসিডিল বিক্রি করে। যাত্রাবাড়ীর ওয়াসা কলোনিতে সুফিয়া আক্তার, রহিমা বেগম, মোবারক হোসেন বাবু, কদমতলীতে মগা সুমন, মুরাদনগরে রমজানের বউ, বটতলার বিল্লাল ডাকাত, ডায়না সিনেমা হলের সামনে বাদশা, পূর্ব জুরাইনে অসীম, শ্যামপুরে রানী, মিতু, সোহেল, ইয়াছিন, জুম্মান, ওয়াসিম, শাজাহান, ফর্সা শহিদ, কানা সোহেল বড় বিক্রেতা হিসেবে মাদক সরবরাহ করছে।
সোর্স দিয়ে পুলিশের মাদক কারবার
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পল্লবী থানার এসআই বিল্লাল ও এসআই মাজেদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে কয়েকজন মাদক কারবারির। এদের মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধা নেন তাঁরা। এই তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, পল্লবীতে হায়দার, ললিতা বাবু, আপন, পিচ্চি বাবু, সান্টু শামীম, সাইফুল, সোহেল, মামুন, ইকবাল, গুণ্ডা শাহিন ও সেলিম, কালীর ছেলে ইব্রাহিম সোর্স পরিচয়ে মাদক কারবার চালাচ্ছে। এদের সঙ্গে বিল্লাল, মাজেদের পাশাপাশি থানার এসআই সাইফুলেরও ঘনিষ্ঠতা আছে। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে এসআই বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এসব তালিকার তথ্য মিথ্যা। আমি মাদক কারবারি বেশি ধরেছি। পাঁচবার পুরস্কারও পেয়েছি।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পল্লবীর মতো ঢাকার ৪৯ থানা এলাকায় পুলিশের সোর্স পরিচয়ে মাদক কারবার করছে, এমন অনেকের নাম উঠে এসেছে। ডিবি পুলিশের গুলশান জোনের সোর্স পরিচয়ে মাদক কারবার করছে জামান নামে এক ব্যক্তি। ডিবির দক্ষিণ বিভাগে এসআই নাসিরের নাম ভাঙিয়ে কারবার করছে কয়েকজন। বাড্ডা থানার এএসআই লিটন, আরমানের নাম ভাঙিয়ে কারবার করছে সোর্স রহমান। গুলশান থানার এএসআই রমজানের নাম ভাঙিয়ে কারবার করছে ফারুক।
পুরান ঢাকার সূত্রাপুর ও কোতোয়ালির জসিম, চোরা লিটন, জামান মল্লিক, সারোয়ার, তপন, বিমান, জয়া, সেন্টু, দেলু, জামান, লিটন, শম্ভু, মনোয়ারা, সেলিম, মুজিবর; নবাবপুর ও ঠাটারীবাজারে ইয়াবা ঝিলু, তার মেয়ে সিসিলি, ফেন্সি রমজান, কানা জাহাঙ্গীর, জসিম, চান্দু, কুমিল্লা রফিক, চাঁদপুইরা সফিক; লালবাগ, হাজারীবাগ, চকবাজার ও কামরাঙ্গীর চরে বিরানি মামুন, ফারুক, আক্তার, টুণ্ডা, ইব্রাহিম, জাফর, লিটন, বখতিয়ার, জসিম, রনি, শাহজাহান, ওয়াসিম, সিডি মিন্টু, সোহেল, আরিফ, আশরাফ, বাসেত, আজমল, তৌহিদ; দয়াগঞ্জ, গেণ্ডারিয়া, শ্যামপুর, কদমতলী, ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় লালবাবু, বাবু সেলিম, জাকির মাঝি ওরফে কাইল্লা জাকির, ইয়াবা রনি, শিবলী ওরফে শিবলিস, সোহাগ, আমিরুল, জাহাঙ্গীর, ভাগিনা রবিন, বুড়ি শাহে আলম, রহিমা, আলতাফ, ভাইয়া সেলিম, শাহীন, সালাম ও ফর্মা সিরাজ সোর্স পরিচয় দেওয়া ইয়াবা কারবারি।
শীর্ষ কারবারিরা তালিকার বাইরে
ডিএনসির এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সারা দেশে শীর্ষ পর্যায়ের মাদক কারবারিদের শনাক্ত করা গেলেও ঢাকায় কারা বড় ডিলার তা জানা যাচ্ছে না। কারণ ঢাকায় ভাসমান মাদক কারবারি বেশি। ছদ্মবেশে থাকার সুযোগ বেশি। তাই সবাই হোয়াইট কালার হয়ে চলছে। এখন আগের মতো স্পট নিয়ন্ত্রক না থাকায় শেল্টারদাতাদেরও সহজে বের করা যায় না।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরা ও যশোর সীমান্ত থেকে বর্তমানে রাজধানীতে ফেনসিডিলের সবচেয়ে বড় চালান নিয়ে আসছে কয়েকজন কারবারি। তাদের হোতা যশোরের হাসান, আমিন বাজারের শামীম ও মিরপুরের শাহ আলী এলাকার জসিম। র্যাবের এক অভিযানে আটকের পর তদন্তে এদের নাম উঠে এলেও কোনো সংস্থার তালিকাতেই এই শীর্ষ কারবারিদের নাম নেই।
গত ১৪ মার্চ হাজারীবাগের মধুর বাজারের ১৯ নম্বর রোডের ১৫৩/এ নম্বর ‘স্বপ্ননীড়’ বাড়ির দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাট থেকে এক লাখ ২৩ হাজার ইয়াবাসহ আলম ওরফে হোসেন আলীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তদন্তে তথ্য বেরিয়ে আসে, ছোট ভাইয়ের মেসে থেকে নির্বিঘ্নে ইয়াবার কারবার চালাচ্ছিল কক্সবাজারের উখিয়ার এই কারবারি।
ডিএনসির তালিকায় শীর্ষ ইয়াবার কারবারি হিসেবে নাম এসেছে এলিফ্যান্ট রোডের আসমা আহমেদ ডালিয়ার নাম। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসা ইয়াবা ডিলার নাছিরের মাধ্যমে এই কারবারে জড়ায়। নবাবপুরে নাছিরের আস্তানায় অভিযান চালালেও তাকে পায়নি ডিএনসি। মাদক কারবারির তালিকায় ‘ইয়াবা নাছিরের’ নাম নেই।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, মহাখালী, বারিধারা ও গুলশানে ইয়াবার বড় কারবারি মাসুদ নামের এক ব্যক্তি। কক্সবাজার থেকে যারা ঢাকায় ইয়াবা এনে সরবরাহ করে তাদের মধ্যে রয়েছে উখিয়ার পলাশ বড়ুয়া, টেকনাফের তৈয়ব, আইয়ুব, ইলিয়াস, রেজাউল করিম, এনামুল হক, শাহাব উদ্দিন শাপু; কক্সবাজার সদরের রমজান আলী, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কুতুব উদ্দিন রনি।
গোয়েন্দারা এদের তথ্য পেলেও ঠিকানা পাচ্ছে না। তালিকাভুক্ত ইয়াবা ডিলার জাহিদ হোসেন ওরফে জাকু এমপি বদির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও কলাবাগানে এসে থাকে সে।