সালমান শাহের জন্য আদালতে বিক্ষোভ

আদেশ না হওয়ার জন্য আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবুকে দায়ী করে বুধবার বিকালে এ মিছিলে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন সালমান স্মৃতি সংসদের সদস্যরা।

সালমান শাহের (চৌধুরী মো. ইমন)  মা নীলা চৌধুরী ও সালমান স্মৃতি সংসদের সদস্যদের অভিযোগ, রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বাদীপক্ষের পরিবর্তে আসামিদের পক্ষ নিয়েছেন।

অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আবদুল্লাহ আবু বলেন, “নীলা চৌধুরী মামলার বাদী নন। বাদী এজাহারকারী কমরউদ্দিন মারা গেছেন। নীলা চৌধুরী নারাজি দিতে পারেন না।”

মামলায় র‌্যাবকে তদন্তের ভার দেওয়া মহানগর হাকিমের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশন আবেদনের বিষয়ে রায়ের দিন ধার্য ছিল বুধবার।

আদেশ লেখা শেষ হয়নি ঘোষণা দিয়ে বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লা রায়ের নতুন তারিখ দেন ৩০ মে।

বিচারক এ নতুন তারিখ রাখার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন সালমান স্মৃতি সংসদের সদস্যরা, যারা দুপুর থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয়েছিলেন আদেশের জন্য।

শেষ বিকালে মহানগর দায়রা দায়রা জজ রায় লেখা সম্পূর্ণ হয়নি বলে তারিখ রাখতে গেলে নীলা চৌধুরীর আইনজীবী মাহফুজ মিয়া ও ফারুক আহম্মেদ এর বিরোধিতা করেন।

মাহফুজ আদালতে বলেন, “আমরা তো আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাচ্ছি না। শুধু পুনঃতদন্ত চাচ্ছি। তদন্তের আবেদন কোনো আদালত আটকে দেয়- এ ঘটনা এই প্রথম। তদন্তে আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ অন্যরা নির্দোষ সাব্যস্ত হলে আমরা সেটা মেনে নেব।”

আইনজীবীরা কয়েকটি গণমাধ্যমকে বলেন, এ রিভিশন আবেদনের উপর গত ৯ মাসে ১১ বার শুনানি নিয়েছেন বিচারক। তিন বার রায়ের জন্য দিন রাখলেও রায় দিচ্ছেন না তিনি। বিষয়গুলো মোটেই যৌক্তিক নয়। এটি বিচারিক মনোভাবের পরিচায়ক নয়।

জাতীয় পার্টির সাবেক নেত্রী নীলা চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “যেখানে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বাদীর পক্ষে কথা বলা উচিত, সেখানে তিনি আসামিদের পক্ষ নিয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করে পুনঃতদন্তের নির্দেশ আটকে দিয়েছেন। এটা তিনি করতে পারেন না।”

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটন রোডে নিজ বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ওই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা সালমান শাহের লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনাকে প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা উল্লেখ করে পুলিশ অপমৃত্যু মামলা করলেও সালমানের পরিবার বিষয়টিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করে।

ঘটনার পর দীর্ঘ সময়ে বেশ কয়েকবার একে আত্মহত্যা বলে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হলেও সালমানের পরিবার তাতে নারাজি আবেদন করে পুনঃতদন্ত চায়।

প্রায় ২০ বছর আগের এই মৃত্যুর কারণ হত্যা না আত্মহত্যা- তা নির্ধারণে এ বছরের জানুয়ারি মাসে মামলাটি আবারও আদালতে ওঠে।

‘নায়ক সালমান আত্মহত্যাই করেছিলেন’- বিচার বিভাগীয় তদন্তের এ সিদ্ধান্তে একমত না হয়ে সালমানের মা সর্বশেষ গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি বিষয়টিকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে তার ব্যক্তিগত আইনজীবী মাহফুজ মিয়ার মাধ্যমে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে নারাজি দেন।

ওই আবেদন শুনে মহানগর হাকিম ওয়ায়েজ কুরুণী খান ঘটনাটি র‌্যাবকে দিয়ে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিলে বাহিনীটির এএসপি ইয়াসিন আরাফাত তদন্তে নেমেছিলেন বলে নথিপত্র সূত্রে জানা যায়।

এরইমধ্যে গত ৬ এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু ওই মামলায় হাকিমের পুনঃতদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন আবেদন করেন, যাতে আটকে যায় পুনঃতদন্ত।

সালমানের মা নীলা নারাজি আবেদনে হত্যার অভিযোগ এনে আজিজ মোহাম্মাদ ভাইসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

অন্য ১০ জন হলেন- সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা হক, সামিরার মা লতিফা হক লুসি, রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, সহকারী নৃত্যপরিচালক নজরুল শেখ, ডেভিড, আশরাফুল হক ডন, রাবেয়া সুলতানা রুবি, মোস্তাক ওয়াইদ, আবুল হোসেন খান ও গৃহপরিচারিকা মনোয়ারা বেগম।

নীলা চৌধুরীর আইনজীবী মাহফুজ মিয়া বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ কোনোদিন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেতে পারে না। অথচ পিপি এরকম আবেদন করে সেরকম ভূমিকা রাখলেন। তার ভূমিকা উদ্দেশ্যমূলক, প্রশ্নবিদ্ধ ও বেআইনি।”

নীলা চৌধুরীর আরেক আইনজীবী ফারুক বলেন, “এর আগে শুনানির সময় রেজভী আহমেদ নামে একজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এ আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

“জবানবন্দিতে রেজভী বলেছিলেন, সালমানকে হত্যা করা হয়। তিনি অন্য আসামিদের সাহায্য করার জন্য হত্যার সময় সালমানের পা চেপে রেখেছিলেন। সালমানের স্ত্রী সামিরা, সামিরার মা, ডন, আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে সম্পৃক্ত করে অপর একটি মামলায় সালমানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে রেজভী ওই জবানবন্দি দেন সেসময় একজন হাকিমের কাছে।”

এ বিষয়ে এর আগেও একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছিলেন পিপি আবদুল্লাহ আবু।

তিনি বলেছিলেন, “সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার বাদী ছিলেন তার বাবা কমরউদ্দিন চৌধুরী, যিনি মারা গেছেন। নীলা এই মামলার বাদী নন। এই অব্স্থায় নীলা চৌধুরী মামলার বাদী হিসেবে নারাজি দিতে পারেন না।”

তার এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে নীলা চৌধুরীর আইনজীবী মাহফুজ মিয়া বলেছিলেন, সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা করেছিল পুলিশ। সালমানের বাবা ঘটনার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষ হিসেবে পুলিশের তদন্তে নারাজি দিয়ে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তাদের আসামি করতে আদালতে আবেদন করেছিলেন।

“সালমানের বাবার নারাজির প্রেক্ষিতে কোনো তদন্তে ঘটনাটি হত্যা বলে বের হয়ে আসলে এই অপমৃত্যুর মামলা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হত।”

মাহফুজ বলেছিলেন, “সালমানের বাবা কমরউদ্দিন মারা যাওয়ার পর এ ঘটনায় আদালতের নির্দেশে করা বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন বিপক্ষে গেলে তার মা নীলা চৌধুরী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষ হিসেবে নারাজি দিয়েছিলেন।”