ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে সত্যতা নেই

791b295148c5e56b73053901ec417860-30

কার্টুন: শিশির

নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় অবমাননার’ অভিযোগের সত্যতা পায়নি সরকারের তদন্ত কমিটি। কমিটি বলেছে, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি ওই শিক্ষককে অবৈধভাবে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল। এ জন্য তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি বাতিল এবং ওই প্রধান শিক্ষককে নিজের পদে পুনর্বহাল করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। কমিটির প্রতিবেদন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ওই শিক্ষকের সঙ্গে যা করা হয়েছে, তা পুরোপুরি অন্যায়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিক্ষার্থীকে মারধর ও ‘ধর্ম নিয়ে কটূক্তির’ অভিযোগে জাতীয় পার্টির স্থানীয় সাংসদ এ কে এম সেলিম ওসমান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে গত শুক্রবার প্রকাশ্যে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে মারধর ও কান ধরে ওঠবস করানো হয়। পরে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি। এ ঘটনায় সাংসদ সেলিম ওসমানসহ জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া কয়েক দিন ধরেই দেশজুড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে।
ঘটনা খতিয়ে দেখতে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ঢাকা অঞ্চলের পরিচালককে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বুধবার রাতে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দেওয়া হয়।
মাউশির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, কার্যপরিধি অনুযায়ী সাংসদের কার্যকলাপের বিষয়টি এই তদন্ত কমিটির দেখার কথা নয়। তবে কমিটির মূল্যায়ন হলো, প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তির সঙ্গে যা করা হয়েছে তা পুরোপুরি অন্যায়। সাংসদ যে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন সেটি আইনশৃঙ্খলার বিষয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাউশির সূত্র বলছে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেদিন (১৩ মে) প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়, সেদিনের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ নিয়ে কোনো আলোচ্য (এজেন্ডা) ছিল না। এদিন বিদ্যালয়ের ৫০ লাখ টাকার উন্নয়নকাজ নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় অবমাননার’ অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু এই সভার আগেই মসজিদে মাইক দিয়ে লোকজন জড়ো করা হয়।
তদন্ত কমিটি বলছে, আর্থিকসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব ছিল। বিদ্যালয়টির আয়-ব্যয় খতিয়ে দেখার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৮ মে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি বিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে মারধর করেন। পরে ওই শিক্ষক ছাত্রের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেন ও দুঃখপ্রকাশ করেন। মারধরের বিষয়ে ছাত্রটি অভিযোগ করলেও তাতে ধর্ম নিয়ে অবমাননার কোনো কিছু ছিল না।
গতকালের সংবাদ সম্মেলন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তদন্তে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির যে দায়িত্ব ও ভূমিকা ছিল, তা পালন করতে পারেনি। তারা যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেনি। কমিটি অন্যায়ভাবে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছিল। এখন তিনি দায়িত্ব পালন করে যাবেন। আর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি অযোগ্য ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এখন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের (ডিসির) নেতৃত্বে ওই বিদ্যালয়ে বিশেষ ব্যবস্থাপনা কমিটি কাজ করবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, গতকালই ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল করে ডিসির নেতৃত্বে বিশেষ কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এর আগে এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য যা করা দরকার, তা করা হবে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও কথা বলেছেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একজন শিক্ষককে যেভাবে অপমান-অপদস্থ করা হয়েছে, কোনো সভ্য সমাজে তা খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ জন্য তিনি আবারও এই ঘটনার নিন্দা ও ঘৃণা জানান। শিক্ষককে অপমান করার ঘটনায় দেশজুড়ে মানুষের প্রতিবাদের প্রশংসা করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এই প্রতিবাদই প্রমাণ করে, ন্যায়ের পক্ষের সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি।