প্রধানমন্ত্রীপুত্রের ‘একাউন্টের টাকার’ উৎস কী: খালেদা
প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের তথ্য পেতে যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআই এজেন্টকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় যে অর্থের কথা এসেছে, তার উৎস জানতে চেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
খালেদা শনিবার বিএনপির জোট শরিক দল জাগপার সম্মেলনে বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ওই মামলার রায়ের প্রসঙ্গ ধরে বলেন, “এফবিআইয়ের একজন এজেন্টকে ঘুষ দিয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের ব্যাপারে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিল।
“সেই মামলার নথিতেই আছে প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের একটি একাউন্টেই আড়াই হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৩০০ মিলিয়ন ডলার জমা আছে। এই টাকার কোথা থেকে গেছে? এই টাকার উৎস কী?”
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জয়ের তথ্য পেতে এফবিআই এজেন্টকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় গত বছর প্রবাসী এক বিএনপি নেতার ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারের কারাদণ্ডের পর বাংলাদেশ পুলিশ ঢাকায় মামলাটি করেছিল। জয়কে অপহরণ ও হত্যার চক্রান্ত করে ওই তথ্য নেওয়া হচ্ছিল বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
ওই মামলায় যায়যায়দিনের সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার এবং আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কারাবন্দি আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
“সরকার এই টাকার কথা ধামাচাপা দিতে প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে। কারারুদ্ধ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকেও ওই মামলায় জড়িয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে,” বলেন খালেদা।
বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের দায়ে দণ্ডিত প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর মা খালেদা এই অর্থ নিয়ে সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিষয়টি তদন্তের দাবিও জানান তিনি।
“দেশের জনগণ মনে করে, এই টাকা তাদের টাকা। এভাবে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছে। এভাবে তাদের আরও কত টাকা আছে, দেশের মানুষ তা জানতে চায়। ওই টাকা ফিরিয়ে আনা দরকার।”
‘দেশে স্বাভাবিক পরিবেশ নেই’
বাংলাদেশে বর্তমানে স্বাভাবিক পরিবেশ নেই দাবি করে এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সংলাপে বসতে সরকারকে আবার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
“দেশে কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নেই। তবুও সরকার দাবি করছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক, যা কিছু ঘটছে তা সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তাদের (সরকার) বলব, দেশের অভ্যন্তরে যে সঙ্কট সৃষ্টি করেছেন, তা দেশের ভেতরেই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করুন। কারণ সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। আর সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করবেন না।”
লেখন, প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, বিদেশিসহ সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলোর জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে সরকারের বক্তব্যের প্রতিবাদও জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
“প্রতিদিন গড়ে ১৪ জন মানুষ খুন হচ্ছে। নারী ও শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। গত তিন মাসে পত্রিকার হিসাবে দেড় হাজার লোক খুন হয়ে গেছে। দুর্নীতি-লুটপাট করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে।”
সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে খালেদা বলেন, “আতঙ্কের ব্যাপার হচ্ছে, বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠির নামে এসব হত্যার দায় স্বীকার করা হচ্ছে।
“সরকার এসব বন্ধ করতে পারছে না, প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারছে না। বরং তারা এর দায়-দায়িত্ব চাপাচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। এতে তদন্ত প্রভাবিত হচ্ছে এবং প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে।”
“এভাবে দেশ চলতে পারে না, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে,” মন্তব্য করে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
“১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশে প্রথম জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটেছিল। ওই সময়ে প্রকৃত সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের আড়াল করে আওয়ামী লীগ দায় চাপিয়েছিল বিএনপি ও বিরোধী দলের ওপর।”
বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে জঙ্গিবাদী তৎপরতা দমন করেছিল দাবি করে খালেদা বলেন, “নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি ও আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে রুদ্ধ করে দিয়ে তারাই (সরকার) দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের পথ করে দিচ্ছে বলে আমরা মনে করি।”
কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জাগপার এই সম্মেলনে খালেদা জিয়া ছাড়াও ২০ দলীয় জোটের বিভিন্ন দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরী, জাগপার সহসভাপতি রেহানা প্রধান, খন্দকার হামিদুর রহমান, মহিউদ্দিন বাবুল, সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার লুৎফর রহমান।
১৯৮০ সালের ৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত এই দলটির ৬৩১ সদেস্যর নতুন কমিটিতে শফিউল আলম প্রধান সভাপতি ও খোন্দকার লুৎফর রহমান সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।