নিজের দুর্বলতার সন্ধানে বিএনপি

bnp-ele

পৌরসভা নির্বাচনের পর আত্মানুসন্ধানে নেমেছে বিএনপি। দলটি মনে করছে, সারা দেশে তাদের ব্যাপক জনসমর্থন আছে, কিন্তু তা কাজে লাগানো
যাচ্ছে না। এর জন্য কি শুধু সরকারের কঠোর অবস্থান দায়ী, নাকি নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা বা ব্যর্থতাও আছে—তা খুঁজে বের করতে চায় দলটি।
কেন্দ্রীয়ভাবে পৌর নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিএনপির এমন দুজন নেতা প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, এ লক্ষ্যে পর্যালোচনার কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে পৌরসভাভিত্তিক নির্বাচনের ফলাফল সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া দলীয়ভাবে আরও কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিএনপি দুটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে পর্যালোচনার কাজ করছে। একটি হলো প্রথম দুই দফার উপজেলা নির্বাচনের সঙ্গে পৌরসভা নির্বাচনের তথ্য-উপাত্ত তুলনা করে দেখানো যে, সরকারের ভূমিকা আসলে কেমন ছিল। ঢালাওভাবে অভিযোগ না করে পরিসংখ্যান দিয়ে বিএনপি প্রমাণ করতে চায় সরকার কারচুপি করেছে। আরেকটি উদ্দেশ্য একান্ত দলীয়। তারা খতিয়ে দেখতে চায় দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা কোথায়। কেন তারা ‘জনপ্রিয়তাকে’ কাজে লাগাতে পারছে না।
এ বিষয়ে বিএনপির পৌর নির্বাচন মনিটরিং সেলের সদস্যসচিব ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, পৌর নির্বাচন নিয়ে বিএনপির একটি নিজস্ব মূল্যায়নের কাজ চলছে। সরকারি অনিয়মের পাশাপাশি দলের কোনো দুর্বলতা থাকলে সেটিও খুঁজে বের করা হবে।
গত ৩০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ২৩৪টি পৌরসভায় মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি ‘আন্দোলনের অংশ’ হিসেবে নির্বাচনে গিয়েছিল। তাদের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন মাত্র ২০টি পৌরসভায়। নির্বাচনের পরদিন বিএনপি অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে।
পৌর নির্বাচনে বিএনপির মনিটরিং সেলের সঙ্গে যুক্ত একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের প্রাথমিক বিশ্লেষণ হচ্ছে সরকারি দল ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। কিন্তু এটাও ঠিক, কিছু জায়গায় পরিবেশ তুলনামূলক ভালো ছিল। সব জায়গায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা মাঠে ছিলেন না। ভয়ে অনেক জায়গায় দলীয় এজেন্টরা কেন্দ্রে যাননি। নেতা-কর্মীরা ভালোভাবে মাঠে থাকলে পরিস্থিতি হয়তো ভিন্ন হতে পারত। তবে এটাও ঠিক যে মামলার কারণে নেতা-কর্মীদের অনেককে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এর মধ্যে ‘প্রতিকূল’ পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূল নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে দলের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় বিএনপি আরও কিছু বিষয়ে নিজস্ব উপায়ে নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। সেগুলোর মধ্যে আছে কীভাবে নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে, নির্বাচনে কী কী সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে, যেখানে পরিবেশ ভালো ছিল সেখানে বিএনপি কী করেছে বা কী করতে পারত, ভালো করতে না পারলে কেন পারা যায়নি, দলের সাংগঠনিক অবস্থা নির্বাচনে কেমন ভূমিকা রেখেছে, স্থানীয় এজেন্টরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেছেন কি না, প্রার্থী নির্বাচন যথাযথ ছিল কি না ইত্যাদি।
এ বিষয়ে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে বেশির ভাগ জায়গায় কেন্দ্র দখল হয়েছে। তাঁদের প্রার্থী-কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্র থেকে কোথায় কী কী হয়েছে তাঁরা কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করছেন।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির পৌর নির্বাচনে যাওয়ার একটি লক্ষ্য ছিল এটা প্রমাণ করা যে, আওয়ামী লীগ ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন সঠিক ছিল। তাঁরা মনে করছেন, তা প্রমাণ করা গেছে। এর আগে তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু শুধু এভাবে একের পর এক প্রমাণ করলে হবে না। এবার বিএনপিকে নিজের দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করে জনসমর্থন কাজে লাগানোর উপায় বের করতে হবে। এবারের পর্যালোচনায় তারা সেটিই করতে চায়।