ব্লগার-শিক্ষকসহ সবার হত্যাকারীদের ধরা হয়েছে
চাপাতির কোপে নিহত মুক্তমনা, ব্লগার, লেখক, প্রকাশক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ সবার হত্যাকারীকে পুলিশ শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করেছে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আজ সোমবার সংসদে জাসদের সাংসদ নাজমুল হক প্রধানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘একটি মহল চাপাতি দিয়ে খুন করে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত তৎপর। যতগুলো খুন হয়েছে, সব কটি তদন্ত করে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা সময়মতো এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।’
সরকারি দলের পঙ্কজ নাথের প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘চাপাতি দিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটার পরপরই আইএস নামক একটি জঙ্গি প্রতিষ্ঠান দাবি করছে, কাজটি তারা করেছে। কিন্তু আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই। এখানে গজিয়ে ওঠা কিছু জঙ্গি সংগঠন মাঝে মাঝে মাথাচাড়া দেওয়ার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিদেশিদেরও হত্যা করছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা জঙ্গিদের ধরেছি। তারা স্বীকার করেছে যে তারা আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এসব জঙ্গির উত্থান দেশেই। এখান থেকেই তারা জঙ্গি কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপককে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুজন সন্দেহভাজনকে ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরেছে। তদন্ত চলছে। আশা করি, ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা যাবে।’
সীমান্তে ১৪৬ জনকে হত্যা
সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত সোয়া চার বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও ভারতীয় নাগরিকদের হাতে ১৪৬ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। ২০১২ সালে সীমান্তে ৩৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে বিএসএফ ২৪ এবং ভারতীয় নাগরিকেরা ১০ জনকে হত্যা করে। ২০১৩ সালে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক যথাক্রমে ১৮ ও ১০, ২০১৪ সালে ২৪ ও ১৬ জন এবং ২০১৫ সালে ৩৮ ও ১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত পাাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছে।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, বিজিবি সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি সীমান্তে বসবাসকারী মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে সীমান্তে বিচ্ছিন্নভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলছে। হত্যা বন্ধের প্রচেষ্টা হিসেবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী প্রাণঘাতী অস্ত্রের বদলে রাবার বুলেটের অস্ত্র ব্যবহার করছে। এ ছাড়া গত বছরের আগস্টে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিএসএফের মহাপরিচালক সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে একমত হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি সীমান্ত হত্যা এড়িয়ে চলতে বাংলাদেশিদের ভারতে অনুপ্রবেশ এবং খারাপ কাজে লিপ্ত না হওয়ার আহ্বান জানান। বিজিবির মহাপরিচালক কোনো বাংলাদেশি আটক হলে তাকে হত্যা না করে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করার অনুরোধ জানান। এর অংশ হিসেবে বিজিবির হাতে আটক ২০১৪ সালে ২০৯; ২০১৫ সালে ১৭৪ এবং চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৪০ জন ভারতীয় নাগরিককে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গোপসাগরের নিরাপত্তায় কোস্টগার্ডের জলযান ও জনবলের স্বল্পতা রয়েছে। তবে সরকার ২০২০, ২০২৫ ও ২০৩০ সালের মধ্যে কোস্টগার্ডকে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাহিনীতে পরিণত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।