মাগফিরাত ও ক্ষমার মাহেন্দ্রক্ষণ

004047romjan_kalerkantho-2018-18-

মাগফিরাতের দশক আজ থেকে শুরু। মাগফিরাত ও ক্ষমা পেতে হলে খাঁটি তাওবা করতে হবে। খাঁটি তাওবা না করে আল্লাহর কাছে ক্ষমার আশা করা যায় না। মানবজীবনে তাওবার প্রভাব সীমাহীন। তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যায় বহুগুণ। প্রবৃত্তির প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে, দুনিয়ার মোহে মোহাবিষ্ট হয়ে মানুষ পাপ করে। বিপথগামিতার কারণে পাপের কালো চিহ্ন দ্বারা আত্মা কলুষিত হয়। বান্দা যখন মহান আল্লাহর দরবারে তাওবা করে, তখন মহান স্রষ্টার সীমাহীন করুণায় সিক্ত হয় তার হৃদয়। আল্লাহর নূরের আলো জ্বলে ওঠে অন্তরে। রমজান সে সুযোগ নিয়ে আসে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকির প্রত্যাশায় রমজানের রাতে ইবাদত-বন্দেগি করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ৩৭)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘রমজান মাসের প্রতিটি রাত ও দিনের বেলায় বহু মানুষকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা দেন। এ মাসে প্রত্যেক মুসলমানের দোয়া কবুল করা হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭৪৫০)। তাই রমজান মাসে তাওবা ও ইস্তিগফারের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।

‘তাওবা’ শব্দটি আরবি। এর শাব্দিক অর্থ ফিরে আসা ও প্রত্যাবর্তন করা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় তাওবা হলো, কোনো পাপকাজ করে ফেললে আল্লাহর ভয়ে তা পরিহার করে অনুতপ্তচিত্তে ভবিষ্যতে তা না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) তাঁর ‘ইহইয়াউল-উলুম’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন : গুনাহের কাজে ধাবিত হওয়ার তিনটি স্তর রয়েছে—এক. কোনো গুনাহে কখনো জড়িত না হওয়া। এটা ফেরেশতা ও নবী-রাসুলদের বৈশিষ্ট্য। দুই. অব্যাহতভাবে পাপকাজ করে যাওয়া, ওই পাপাচারে লজ্জিত ও অনুতপ্ত না হওয়া এবং অন্তরে তা ত্যাগ করার কল্পনাও না করা। এটা শয়তানের কাজ। তিন. গুনাহ হয়ে গেলে অবিলম্বে অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে তা বর্জন করতে দৃঢ় সংকল্প করা। এটা ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য।

তাওবা ও ইস্তিগফার আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক সুদৃঢ় করে। এর মাধ্যমে রবের কাছে বান্দার মুখাপেক্ষিতার স্বীকারোক্তি উচ্চারণ করা হয়। ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২২)। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ১০০ বার ইস্তিগফার করতেন। তাওবা ও ইস্তিগফার মানুষের পাপাচার মিটিয়ে জীবন পবিত্র করে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে : আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা দিন-রাত গুনাহ করে থাকো, আমি তোমাদের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেব। তোমরা ইস্তিগফার করো, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব।’ (মুসলিম)

ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর আজাব দূরীভূত হয় ও পার্থিব সুখ-সমৃদ্ধি অর্জিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ এমন নন, তারা ক্ষমা চাইবে অথচ তিনি তাদের শাস্তি দেবেন।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৩৩)

লেখক : সিইও, সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনমিকস বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা