৭২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা পায়নি

ok

করোনার সংকট মোকাবিলায় সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ পায়নি ৭২ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। আর মাত্র ১৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এই সুবিধার আওতায় এসেছে। বাকি ৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্যই জানেন না। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) ‘কোভিড-১৯ ও ব্যবসায় আস্থা:অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে’ শীর্ষক এক জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল শনিবার এই জরিপের ফলাফল নিয়ে ভার্চ্যুয়াল আলোচনার আয়োজন করা হয়।

জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য কেমন ছিল, তা নিয়ে ৫০২টি প্রতিষ্ঠানের ওপর এ জরিপ করা হয়। এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এ জরিপ করা হয়। এর আগে এপ্রিল-জুনের পরিস্থিতি নিয়ে এমন আরেকটি জরিপ করা হয়েছিল। সেসময় ব্যবসায়ীদের আস্থা বৃদ্ধির তথ্য উঠে আসে। এবারের জরিপে ব্যবসায়ীরা আস্থার বিষয়ে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করলেও বড় উন্নতি হয়নি। জরিপের প্রথম পর্যায়ের মতোই ব্যবসাসংক্রান্ত খরচ হ্রাসের ক্ষেত্রে কোনো বড় ধরনের উন্নতি দেখা যায়নি বরং জরিপের দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে ব্যবসাসংক্রান্ত খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্নীতি, দুর্বল ট্রেড লজিস্টিক, অসঙ্গতিপূর্ণ কর ব্যবস্থা, ব্যবসায় অর্থায়নের অভাব, স্বাস্থ্য খাতে কোভিড-১৯ জনিত দুর্বল ব্যবস্থাপনাই এর পেছনে মূলত দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপে অংশ নেওয়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ১৯ শতাংশ প্রণোদনার অর্থ পেয়েছে। তবে বড় প্রতিষ্ঠান বেশি পেয়েছে। জরিপে ১৫৭টি বড় প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। তাদের মধ্যে ৪১ শতাংশ প্রণোদনার টাকা পেয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৩০১টি ছোট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা পেয়েছে। মাঝারি আকারের ৪৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০ শতাংশ এ সুবিধা পেয়েছে। প্রণোদনার অর্থ পেতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া, ব্যাংকের সব শর্ত মানতে না পারা, প্রণোদনা সম্পর্কে তথ্যের অভাবের কারণেই ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রণোদনার টাকা পাচ্ছে না বলে জরিপে উঠে এসেছে।

বিভিন্ন খাতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতির মাঝে পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, ওষুধ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, খুচরা ব্যবসা, রেস্টুরেন্ট, তথ্যপ্রযুক্তি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অপেক্ষাকৃত দ্রুত হচ্ছে। অন্যদিকে চামড়া, হালকা প্রকৌশল, পাইকারি ব্যবসা, পরিবহন ও আবাসিক খাতের পুনরুদ্ধার অপেক্ষাকৃত ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। এপ্রিল-জুনের তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বরে ব্যবসায়ীদের আস্থার সূচকের কিছু ক্ষেত্রে উন্নতির ধারা দেখালেও সামগ্রিকভাবে এই সূচকের অবস্থান এখনো নিচের দিকেই রয়েছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় স্তরে উন্নতির সূচক দেখালেও চামড়া শিল্পে ব্যবসায় আস্থার সূচক এখনো ৫০-এর নিচে, যেখানে বাকি খাতগুলোর অবস্থান ৫০ থেকে ৬০-এর মধ্যে। জরিপের ৭১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান মনে করছে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে আছে। যেখানে ৬ শতাংশ ব্যবসায়ী ভাবছে, এই পুনরুদ্ধার হবে শক্তিশালী। অন্যদিকে মাঝারি ও দুর্বল পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার পথে আছে বাংলাদেশ, এরকম ভাবছেন যথাক্রমে ৫৭ শতাংশ ও ৩৭ শতাংশ ব্যবসায়ী। জরিপের ফলাফল নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রণোদনার টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন পুরোনো গ্রাহকেরা বেশি অর্থ পেয়েছেন। ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে থাকা ছোট ব্যবসায়ীরা এই সুবিধা পাচ্ছেন না। একই সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদানের প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় ভারতসহ অন্যান্য অনেক দেশের থেকে ভালো করলেও তা সরকারের বর্তমান প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির তুলনায় যথেষ্ট নয় বলে তিনি মনে করেন।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খানের মতে, করোনায় ছোট ব্যবসায়ীরা নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারছেন না। বড় প্রতিষ্ঠান হয়তো অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ এনে নিজেদের টিকিয়ে রাখছে। তিনি প্রণোদনা প্যাকজের বাস্তবায়ন পর্যালোচনা এবং প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানান। ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিপূর্ণ তথ্যভান্ডার তৈরির আহ্বান জানান। পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরো সচল করার প্রতি গুরুত্ব দেন। অ্যাপ-ভিত্তিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সহজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা এম কাদির বলেন, করোনার সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে ডিজিটালাইজেশন হয়েছে, সে তুলনায় বাংলাদেশে হয়নি। স্টার্টআপের জন্য কোনো প্রণোদনা সহযোগিতা ছিল না। করোনার সময়ে স্টার্টআপগুলো ভেঞ্চার ক্যাপিটালের ক্ষেত্রেও সমস্যা মোকাবিলা করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।