ব্লগার হত্যা ও হিট লিস্টে উদ্বেগ

18jx8ffj1sondjpg

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ব্লগার হত্যাকান্ড এখন বাংলাদেশে সবচাইতে আলোচিত ঘটনা। একের পর এক ব্লগারদের খুন করা হচ্ছে ধর্মের দৃষ্টিকোন থেকে বেরিয়ে এসে দ্বিতীয় মত প্রকাশের কারনে, যা এই দেশটির আইন শৃংখলা পরিস্থিতিতেকে আরো বেশী ঘোলাটে করে তুলেছে। ২০১৩ সালের ১৫-ই ফেব্রুয়ারী শাহবাগ মুভমেন্টের সময় ব্লগার রাজীব হায়দার যিনি ব্লগে থাবা বাবা নামে পরিচিত ছিলেন তাঁকে খুন করবার মধ্যে দিয়ে এই বীভৎস প্যাটার্নে খুনের বিস্তার লাভ করে। পরবর্তীতে আমেরিকান নাগরিক ও লেখক ডক্টর অভিজিৎ রায়কে একুশে ফেব্রুয়ারীর বই মেলার কাছাকাছি স্থানে প্রকাশ্যে কুপিয়ে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। এই ঘটনায় মারাত্নক জখম হন তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা।

অভিজিৎ রায়ের খুনের কিছুদিন পর পরই ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে ৩০ শে মার্চ তাঁর বাড়ীর সামনেই কুপিয়ে হত্যা করা হয় একই কায়দায় যদিও সে ঘটনায় দুইজনকে সেই ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনার এক মাস না যেতেই ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে তার বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করে। পরবর্তীতে ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নীলকে তার ঘরে ঢুকে হত্যা করে ইসলামি মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা।

এইসব ঘটনার রেশ না যেতেই সাম্প্রতিক সময়ে গত ৩১ শে অক্টোবর অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক আরেফিন দীপনকে তার কার্যালয়ে ঢুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। একই দিনে আরেক প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলকে, কবি তারেক রহিম ও লেখক ও ব্লগার রণদীপম বসুকে ঢাকাস্থ লালমাটিয়ার কার্যালয়ে চাপাতি দিয়ে নির্মম ভাবে কোপানো হয়। উল্লেখ্য যে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া প্রকাশক ও ব্লগার আহমেদুর রশীদ টুটুল ছিলেন শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কর্ণধার। আহত বাকী দুইজনই সচলায়তন ব্লগের ব্লগার হিসেবে অনলাইনে লেখালিখি করতেন।

যাদের যাদের খুন করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকেই ছিলেন মুক্তমনা এবং ব্লগার কিংবা লেখক। বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতার উপর এই রকমের আঘাত এই দেশটির স্বাধীনতার পর লেখালেখির ও মত প্রকাশের ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় ঘটনা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

অত্যন্ত উদ্বেগের কথা হচ্ছে এই খুনগুলো করা হচ্ছে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের নাম দিয়ে প্রকাশ্যে অনলাইন ও অন্যান্য জাতীয় দৈনিকগুলোতে চিঠি পত্র দেবার মাধ্যমে। দৈনিক প্রথম আলো ও বিডি নিউজের মাধ্যমে জানা যায় এরই মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামক এই নিষিদ্দগ দলটি নতুন করে আরো ১৫ জনের নামে হিট লিস্ট করেছে যারা সকলেই বাংলা ভাষাভাষী এবং দেশ ও দেশের বাইরী অবস্থান করছেন। এই নামগুলোর মধ্যে আনসারুল্লাহ প্রখ্যাত ও পরিচিত ব্লগারদের নাম উল্লেখপূর্বক তাদের যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই হত্যার হুমকি দিয়েছে।B-2ra1UVIAE-reo

এইসব নামগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, ব্লগার আরিফুর রহমান, অমি রহমান পিয়াল, মোঃ শরিফুল ইসলাম, তানিয়া ইসলাম চৌধুরী, জিয়াউল হক, রাসেল পারভেজ, শুব্রত শুভ, জুলিয়াস সিজার, ওমর ফারুক লুক্স, মোঃ আব্দুর রহমান, ইমরান এইচ সরকার, আব্দুল গাফফার চৌধুরী, তসলিমা নাসরিন, দাউদ হায়দার,রুজভেল্ট হালদার, নুরুন নবী, তুরিন আফরোজ, শাম্মী হক প্রমুখ এর নাম।

এই প্রসঙ্গে, বাংলাদেশে থাকা ব্লগার অমি রহমানের পিয়ালের সাথে কথা বলে যানা যায় যে এই ধরনের হত্যার হুমকি তিনি নানান সময়েই পেয়ে আসছেন এবং এটা তার জন্য নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশ সরকার তার জন্য একজন গানম্যান নিয়োগ দিয়েছেন এবং সব সময় আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তাঁর খোঁজ রাখছেন।

বাংলাদেশ পুলিশের মহা পরিচালক বেনজীর আহমদের সাথে এই বিষয়ে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন পুলিশ এই ধরনের হত্যাকান্ডে যথাযথ যা ব্যাবস্থা নেবার তা নিচ্ছে ও নেবে। ধর্মীয় মৌলবাদীদের স্থান বাংলাদেশে হবে না। তিনি বাংলাদেশে আই এস আছে কিনা এই প্রসঙ্গে কোন মন্তব্য করবেন না বলে আমাদের প্রতিবেদককে জানান।

বাংলাদেশের এই চরমম অস্থিতিশীল মুহুর্তে বাংলাদেশের ব্লগারদের সংগঠন BOAN মনে করে সরকারকে আরো বেশী যত্নশীল হতে হবে এই ধরনের অপরাধকে কমাতে এবং এর জন্য চাই দুরত বিচার ট্রাইবুনালে অপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করা।

বাচস-১৫/৮/১১